ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তিন নারী গ্রেফতার

স্বামীদের হাত ধরেই ওরা হয়েছে অজ্ঞান পার্টির সদস্য

প্রকাশিত: ০৫:২১, ৩১ আগস্ট ২০১৮

স্বামীদের হাত ধরেই ওরা হয়েছে অজ্ঞান পার্টির সদস্য

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ ওরা তিন নারী অজ্ঞান পার্টির সদস্য। স্বামীর কাছ থেকে মানুষকে অজ্ঞান করার হাতেখড়ি নেয় ওরা। এরপর স্বামী-স্ত্রীরা ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় কাজে নেমে পড়ে। যাত্রী ও পথচারীদের অজ্ঞান করে সব হাতিয়ে নেয়াই তাদের পেশা। রাজধানীর ডেমরা থানা এলাকা থেকে অজ্ঞান পার্টির তিন নারী সদস্যকে গ্রেফতারের পর এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, মোছাঃ সাথী (৩০), সোনিয়া (৩০) ও মোছাঃ লাকী (৪৪)। ডেমরা জোনাল টিমের সহকারী কমিশনার নাজমুল হাসান ফিরোজ জানান, বুধবার বিকেল ৪টার দিকে ডেমরা থানার সারুলিয়া কাঁচা বাজার এলাকা থেকে ওই তিন নারীকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পূর্ব বিভাগের ডেমরা জোনাল টিম। এ সময় তাদের কাছ থেকে অজ্ঞান করার ৩৫টি ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনায় ডেমরা থানায় একটি মামলা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত তিন নারীকে রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এসি নাজমুল হাসান জানান, গ্রেফতাকৃতরা সানারপাড় এলাকায় ভাড়া থাকেন। দেশের ভিন্ন ভিন্ন এলাকার মানুষ হয়েও স্বামীদের হাত ধরে কাজে নামার সুবাদে তারা এখন এক সঙ্গে কাজ করে। তাদের তিন নারীর স্বামী অজ্ঞান পার্টির সদস্য। স্বামীদের হাত ধরে তারা নিজেরাও এই দলে যোগ দিয়েছে। ডেমরা জোনাল টিমের সহকারী কমিশনার নাজমুল হাসান ফিরোজ জানান, গ্রেফতারকৃত নারীদের স্বামীরা প্রায়ই মানুষকে অজ্ঞান করে নগদ টাকা ও অলঙ্কার নিয়ে আসে বাসায়। তাই দেখে এত কম পরিশ্রমে বেশি আয় করার লোভ সামলাতে পারেনি তাদের স্ত্রীরাও। সে কারণেই স্বামীদের কাছ থেকে মানুষকে অজ্ঞান করার হাতেখড়ি নেয় তারা। এরপর স্বামী-স্ত্রীরা ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় কাজে নেমে পড়ে। এখন যাত্রী ও পথচারীদের অজ্ঞান করে সব হাতিয়ে নেয়াই তাদের পেশা। সহকারী কমিশনার নাজমুল হাসান ফিরোজ বলেন, গ্রেফতারকৃত লাকীর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার করিমগঞ্জে। ঢাকায় এসে সে প্রথমে পোশাক কারখানায় কাজ করত। স্বামীও দিনমজুরের কাজ করত। ২০০৯ সালে তার স্বামী লঞ্চডুবিতে মারা যায়। এরপর দ্বিতীয় বিয়ে করে সে। তার বর্তমান স্বামীর নাম গোলাপ মিয়া। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী। তবে কখনও এই স্বামীর বাড়ি যায়নি লাকী। গোলাপ মিয়া অজ্ঞান পার্টির সদস্য। স্বামীর মাধ্যমেই এই অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ে লাকী। গ্রেফতারকৃত লাকী পুলিশকে জানায়, তার স্বামী ঢাকার বিভিন্ন রুটে গাড়িতে উঠে মানুষকে অজ্ঞান করে টাকা পয়সা নিয়ে চলে আসে। স্বামীর আগ্রহেই অজ্ঞান পার্টি সদস্য হয়েছে সে। এখন নিজেই বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড, বাজার ও টার্মিনালে অজ্ঞান করার ট্যাবলেট নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। পথচারী ও যাত্রীদের টার্গেট করে তাদের ব্যাগ এগিয়ে দেয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে সাহায্য করার কথা বলে টুকটাক কথা বলে। এরপর পান, চা, ডাব অথবা অন্য কোন তরল খাবারের সঙ্গে অজ্ঞান করার ট্যাবলেট দিয়ে দেয়। সাধারণত শহরে নতুন বা সহজ-সরল মানুষকে তারা টার্গেট করে। বিভিন্ন ওষুধের দোকান থেকে তারা অজ্ঞান করার ট্যাবলেট সংগ্রহ করে। গ্রেফতারকৃত সাথীর বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। স্বামীর নাম আলমগীর হোসেন। সেও স্বামীর হাত ধরে অজ্ঞান পার্টির সদস্য হয়েছে। সিন্ডিকেটের অপর সদস্য সোনিয়ার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার পাঁচপুকুরিয়া গ্রামে। ঢাকা আছে প্রায় দশ বছর ধরে। তার স্বামীর নাম হাবীব। স্বামীর গ্রামের বাড়ি বরিশালে। হাবীবও তার স্ত্রীকে মানুষকে অজ্ঞান করে সব হাতিয়ে নেয়ার কৌশল শিখিয়েছে। এই নারীদের গ্রেফতারের ব্যাপারে ডেমরা জোনাল টিমের সহকারী কমিশনার নাজমুল হাসান ফিরোজ বলেন, তারা যখন ডেমরা এলাকায় মানুষকে টার্গেট করে অজ্ঞান করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আমরা তখন তাদের গ্রেফতার করেছি। গ্রেফতারকৃত তিন নারী একসঙ্গে কাজ করে। তারা ভাল ভাল কথা বলে যাত্রাপথে মানুষের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে। বিভিন্ন সহযোগিতা করে। এরপর পানীয় বা খাবারের সঙ্গে অজ্ঞানের ওষুধ মিশিয়ে দিয়ে সব হাতিয়ে নিয়ে যায়। তারা স্বামীদের মাধ্যমে এই অপরাধের সঙ্গে জড়িয়েছে। আমরা তাদের স্বামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি। রাজধানীতে আরও কয়েকটি নারী ও পুরুষের গ্রুপ সক্রিয় আছে বলেও জানিয়েছে গোয়েন্দারা। তারা গাবতলী, মহাখালী, যাত্রাবাড়ী ও উত্তরা এলাকায় তৎপরতা চালায়। তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে ঈদের সময় পুলিশের ব্যাপক তৎপরতার কারণে তারা গা ঢাকা দিয়েছে।
×