অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করতে যাচ্ছে কাট্টালি টেক্সটাইল লিমিটেড। এদিকে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে টাকা উত্তোলনের আগেই হিসাবমান লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। এরপরেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোম্পানিটিকে অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন দিয়েছে।
বিএসইসি’র কাছে জমা দেয়া কাট্টালি টেক্সটাইলের প্রসপেক্টাসের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ভুল পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) গণনা করেছে। আবার হিসাবমানে না থাকলেও এ্যাডজাস্টেড নামে ইপিএস দেখিয়েছে। অবচয়যোগ্য সম্পদের ওপর অবচয় চার্জ ধার্য করা হয়নি, ফলে বেশি দেখানো হয়েছে মুনাফা ও সম্পদ। লঙ্ঘন করা হয়েছে বাংলাদেশ শ্রম আইনও।
পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হিসাবমান লঙ্ঘন করে প্রসপেক্টাস তৈরি করা কোম্পানিকে আইপিও’র অনুমোদন দেয়া বিএসইসির উচিত হয়নি। তারা বলছেন, পুঁজিবাজারের বিকাশে নতুন নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়া উচিত। তবে সেই কোম্পানির অবশ্যই আর্থিক স্বচ্ছতা ও ফান্ডামেন্টাল অবস্থা থাকতে হবে। দুর্বল ও গোজামিল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কোন কোম্পানিকে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের সুযোগ দিলে তা বাজারের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বাংলাদেশ হিসাবমান (বিএএস) ৩৩-এর ৬৪ ধারা অনুযায়ী, পূর্বের বছরের শেয়ারপ্রতি মুনাফা নির্ণয় করতে হয় বর্তমান শেয়ার দিয়ে। কিন্তু কাট্টালি টেক্সটাইলের প্রসপেক্টাসে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ইপিএস গণনায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শেয়ারকে বিবেচনায় নেয়া হয়নি। ফলে প্রকৃত অর্থে ইপিএস যা হওয়ার কথা প্রসপেক্টাসে দেখানো হয়েছে তার থেকে বেশি। কাট্টালি টেক্সটাইল প্রসপেক্টাসের ১৮৬ পৃষ্ঠায় ২০১৫-১৬ হিসাব-বছরের মুনাফা দেখানো হয়েছে পাঁচ কোটি ৭৮ লাখ ৬৯ হাজার ১২৬ টাকা এবং ইপিএস দেখানো হয়েছে এক টাকা ৯৯ পয়সা। কিন্তু ওয়েটেড এভারেজ করে ২০১৬-১৭ হিসাব-বছরে শেয়ার দেখানো হয়েছে পাঁচ কোটি ১৫ লাখ ৮৬ হাজার ৭৬৭টি। সে হিসাবে ২০১৫-১৬ হিসাব-বছরে কোম্পানিটির ইপিএস হওয়ার কথা এক টাকা ১২ পয়সা। অর্থাৎ ভুল পদ্ধতিতে হিসাব করে বছরটিতে ইপিএস ৮৭ পয়সা বেশি দেখানো হয়েছে।
এদিকে হিসাবমানে এ্যাডজাস্টেড ইপিএস বলে কিছু না থাকলেও কোম্পানিটি প্রসপেক্টাসে এ্যাডজাস্টেড নামে ইপিএস দেখিয়েছে। প্রসপেক্টাসে এ্যাডজাস্টেড নামে ২০১৫-১৬ হিসাব-বছরের ইপিএস দেখানো হয়েছে এক টাকা ৫ পয়সা।
কাট্টালি টেক্সটাইলের ল্যান্ড ডেভেলপমেন্টের মধ্যে রাস্তা, ওয়াল ও ড্রেনেজ রয়েছে। এগুলোর নির্দিষ্ট আয়ুষ্কাল আছে। তাই বিএএস-১৬ অনুযায়ী, অবচয় চার্জ করতে হয়। কিন্তু কাট্টালি কর্তৃপক্ষ এসবের ওপর অবচয় চার্জ করেনি। ফলে মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখানো হয়েছে। ২০০২ সালে প্রাইভেট কোম্পানি হিসাবে গঠিত কাট্টালি টেক্সটাইলের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় ২০০৪ সালে। এরপর ২০১৬ সালে প্রাইভেট কোম্পানি থেকে পাবলিক কোম্পানিতে রূপান্তর হয়। কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে ৩৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করে মেশিনারিজ ও ইক্যুপমেন্ট ক্রয় এবং আইপিও খাতে ব্যবহার করবে। যা ফান্ড পাওয়ার ২১ মাসের মধ্যে ব্যবহার করা হবে।
বর্তমানে কাট্টালি টেক্সটাইলের পরিশোধিত মূলধন ৫৫ কোটি টাকা। পুঁজিবাজার থেকে আইপিও’র মাধ্যমে অর্থ উত্তোলনের পর এই পরিশোধিত মূলধন বেড়ে দাঁড়াবে ৮৯ কোটি টাকায়। এক্ষেত্রে উদ্যোক্তা/পরিচালকদের শেয়ার ধারণ ৪৯ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়াবে ৩০ শতাংশে।
প্রসপেক্টাস অনুযায়ী, কাট্টালি টেক্সটাইল প্রিমিয়াম পাওয়ার যোগ্য হলেও শুধুমাত্র অভিহিত মূল্যে পুঁজিবাজারে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি আর্নিংস বেজড ভ্যালু পার শেয়ার পদ্ধতিতে ২৯ টাকা পাওয়ার যোগ্য বলে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। দীর্ঘদিনের ব্যবসায় কোম্পানিটির উদ্যোক্তা/পরিচালকেরা এই দরের যোগ্যতা অর্জন করেছেন। অথচ কোম্পানিটি শুধু ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে আইপিওতে শেয়ার ইস্যু করবে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: