ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে এবার ম্যাজিক সাফল্য

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ২৬ আগস্ট ২০১৮

  আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে এবার ম্যাজিক সাফল্য

শংকর কুমার দে ॥ ম্যাজিক দেখানোর মতোই এবারের পবিত্র ঈদ-উল আজহা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের অনন্য সাফল্য অর্জন করেছে পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে বলে পুলিশ প্রশাসনের দাবি। জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, ছিনতাই, ডাকাতি, খুন, অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টি, পথে পথে চাঁদাবাজি, চামড়া সন্ত্রাস, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, জালনোটের ব্যবসা ও প্রতারণা বন্ধে ও যানজটমুক্ত ঈদ-পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময় অতিবাহিত হওয়ায় জনমনে স্বস্তির নিশ্বাস বয়ে এনেছে। বিশেষ করে সম্ভাব্য জঙ্গী হামলার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গোয়েন্দা নজরদারি ও সতর্কতা অবলম্বন আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নের চাবিকাঠি বলে পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি। পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ইউনিটগুলোর সদস্যদের পারিবারিকভাবে ঈদ বিনোদন ছাড়াই ছুটিবিহীন ব্যাপক তৎপরতা প্রশংসা অর্জন করেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। ঢাকা মহনগর পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, এবারের ঈদের আগে থেকে ছুটির পর পর্যন্ত রাজধানী ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার কৃতিত্বের দাবি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ঈদ উপলক্ষে কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার পর জন্য তিন স্তরের নিরাপত্তার আয়োজন করা হয়। কোরবানির ঈদ ঘিরে রাজধানীতে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঈদগাহ ময়দান ও বিনোদনকেন্দ্রগুলোয় নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তাবলয় ছাড়াও ফাঁকা সড়কে রাখা হয় বিশেষ টহল। ফুট পেট্রল ও মোবাইল টিম ফাঁকা বাসায় চুরি-ডাকাতি রোধে বিশেষ নজরদারি চালানা হয়। কোরবানির পশুর হাট, ঘরমুখী মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘেœ করতেও নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। র‌্যাব-পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স প্রস্তুত থাকার পাশাপাশি সাদা পোশাকে চলবে গোয়েন্দা নজরদারি। রাজধানী ঢাকা মহানগরীর প্রতিটি ঈদ জামাতে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার আয়োজন করা হয়। প্রতিটি জামাতও পুলিশের নিরাপত্তার আওতায় ছিল। সব জামাত ঘিরে সমন্বিত, সুদৃঢ় ও সুবিন্যস্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাতকে কেন্দ্র করে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা হাতে নেয়ার মধ্যে ছিল সমগ্র ঈদগাহ এলাকা, প্রবেশ ও বের হওয়ার পথসহ চারপাশের এলাকা সিসিটিভির আওতায়। ডিএমপির কন্ট্রোলরুম থেকে সিসি ক্যামেরাগুলো সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। স্পেশাল ব্রাঞ্চ ও ডিএমপির ডগ স্কোয়াডের মাধ্যমে পুরো এলাকা সুইপিং করা হয়। যে কোন সময় যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সোয়াত ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট প্রস্তুত ছিল। প্রস্তুত ছিল ফায়ার সার্ভিস ও মেডিক্যাল টিম। ঈদকেন্দ্রিক সার্বিক নিরাপত্তায় ডিএমপির ১৪ হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করেছে। এ ছাড়া এবারই প্রথমবারের মতো ফেসবুকে র‌্যাবের অফিসিয়াল পেজে যানজটের আপডেট জানানো হয়। সারাদেশে ৮ হাজার র‌্যাব সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। ঈদের আগের দিন থেকে জাতীয় ঈদগাহের আশপাশসহ পুরো ঢাকায় বসানো হবে চেকপোস্ট। সন্দেহজনক যানবাহন তল্লাশির পরই ওই সব এলাকায় ঢুকতে দেয়া হয়। ঈদের দিন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কোন ঈদগায় জঙ্গী হামলার ঘটনা ঘটতে দেয়া হয়নি। কোন রাজনৈতিক হত্যাকা- বা গুপ্তহত্যার ঘটনা ঘটেনি। বড় ধরনের ছিনতাই বা ডাকাতির খবর পাওয়া যায়নি। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি নিয়ে সহিংসতা হয়নি। মাদকদ্রব্য, বৈদেশিক মুদ্রাসহ বড় ধরনের চোরাচালান ছিল অনুপস্থিত। জাল টাকার জমজমাট ব্যবসার কোন খবর পাওয়া যায়নি। যানবাহন নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু থাকায় ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে যাতায়াতে কোন ভোগান্তি ও দুর্ভোগ ছিল না। যুদ্ধাপরাধীদের তৎপরতা, জঙ্গী হামলার উল্লেখযোগ্য কোন রেকর্ড নেই পুলিশের খাতায়। পরিকল্পিতভাবে ডিএমপির ইউনিফর্ম পুলিশ, র‌্যাব, ডিবি, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্য, মহিলা পুলিশ দলসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দশ সহস্রাধিক সদস্যের নিরলস প্রচেষ্টায় রাজধানীবাসীর কাছে এবারের ঈদ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ের ছুটিতে জনমনে বয়ে এনেছে স্বস্তির নিশ্বাস। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একজন কর্মকর্তা জানান, এবারের ঈদ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসহ বিশেষ বিশেষ জায়গায় করা হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যে কোন ধরনের আপদকালীন মুহূর্ত মোকাবেলার জন্য রিজার্ভ ফোর্স প্রস্তুত রাখা হয়। জঙ্গীদের প্রাধান্য ও তৎপরতা রয়েছে এমন এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বেশি। বিশেষ নজরদারির মধ্যে রাখা হয় যুদ্ধাপরাধীদের দোসর ও বিশেষ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। নিরাপত্তার অংশ হিসাবে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও গেটগুলোতে বসানো হয় আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর, সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও যানবাহনে তল্লাশি চালানো হয়েছে। ঈদগাহ ময়দান, উচ্চ আদালতসহ আশপাশের বসানো হয়েছে বিপুল পরিমাণ সিসি ক্যামেরা। পাশাপাশি রাখা হয় বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। ঈদগাহ ময়দানে আসা সর্বস্তরের মুসল্লিদের নিরাপত্তার স্বার্থে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান ও তার আশপাশের এলাকায় ভাসমান দোকানপাট ও হকার তুলে দেয়া হয়। যানবাহন চলাচলেও নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। পুলিশের বম্ব ডিজপোজাল ইউনিট দফায় দফায় তল্লাশি চালায়। র‌্যাবের ডগ স্কোয়াডও ছিল তৎপর। রাজধানীর কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া ও র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা বলেছেন, প্রায় দুই কোটি মানুষের মেগাসিটি রাজধানী ঢাকাতে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটতেই পারে। এটা সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির তুলনায় কিছুই নয়। পবিত্র রমজান মাসের শেষে ঈদের ছুটিতে ফাঁকা হয়ে যাওয়া রাজধানী ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ম্যাজিক দেখিয়েছে বলে আমরা দাবি করতে পারি। ঈদের ছুটিতে চৌদ্দ সহস্রাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার (ডিসি-মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, প্রায় দুই কোটি মানুষের মেগাসিটি রাজধানী ঢাকাতে অপরাধী চক্রের তৎপরতা থাকারই কথা। কিন্তু ম্যাজিক দেখানোর মতোই অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সাফল্য অর্জন করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ কারণে রাজধানীতে বড় ধরনের কোন অপরাধ সংঘটিত হয়নি। অপরাধ সংঘটিত হবে তা ধরে নিয়েই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ছঁক কষা হয়। তারপরও এবারের ঈদের ছুটিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণের ফলে অপরাধ প্রবণতার হার ছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। এতে ঘুরমুখো, ঘরফেরা মানুষজনসহ রাজধানীবাসী নিশ্চিন্তে নির্বিঘেœ আনন্দ বিনোদনের মধ্য দিয়ে এবারের পবিত্র ঈদ-উল আজহার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ছুটি কাটিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঈদের ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে ঈদ বিনোদন ভাগাভাগি করার বিসর্জন দিয়ে সাধারণ মানুষজনের জানমাল নিরাপত্তা বিধানে সচেষ্ট থাকার ভূমিকা পালন করেছে, যা প্রশংসা অর্জনের দাবিদার।
×