ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বছর শেষে আওয়ামী লীগের উদ্বৃত্ত ৬ কোটি ৬১ লাখ

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১৫ আগস্ট ২০১৮

বছর শেষে আওয়ামী লীগের উদ্বৃত্ত ৬ কোটি ৬১ লাখ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিগত এক বছরের দল পরিচালনায় আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এতে ২০১৭ সালে দল পরিচালনা করতে বিভিন্ন উৎস হয়ে দলটির আয় দেখানো হয়েছে ২০ কোটি ২৪ লাখ ৯৬ হাজার ৪৩৬ টাকা। অপরদিকে তাদের ব্যয় হয়েছে ১৩ কোটি ৬৩ লাখ ৪৮ হাজার ৩১৯ টাকা। আয়-ব্যয় বাদ দিয়ে বছর শেষে তাদের উদ্বৃত্ত দেখানো হয়েছে ৬ কোটি ৬১ লাখ ৪৮ হাজার ১১৭ টাকা। মঙ্গলবার দুপুরে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে ইসি সচিব হেলাল উদ্দিন আহমদের কাছে বিগত ২০১৭ সালের এই আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দেয়। প্রতিনিধি দলে ছিলেন দফতর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন ও বিজ্ঞানপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুর সবুর। আব্দুস সোবহান গোলাপ পরে সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগের ‘আয়ের প্রধান উৎসের মধ্যে রয়েছে দলের নতুন ভবন নির্মাণের অনুদান, দলের সদস্যদের কাছ থেকে পাওয়া বার্ষিক চাঁদা, ব্যাংকের টাকা থেকে লাভ ইত্যাদি। ব্যয়ের প্রধান খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে দলের ভবন নির্মাণ, কর্মচারীদের বেতন-বোনাস, আপ্যায়ণ, সভা-সেমিনার, ইউটিলিটি বিল ইত্যাদি। তিনি বলেন, নতুন ভবন নির্মাণে প্রায় ১০ কোটি টাকার মতো অনুদান পাওয়া গেছে এবং সমপরিমাণ অর্থ সেখানে তারা ব্যয় করেছে। ইসি’র তথ্য অনুযায়ী বিগত পাঁচ বছরের দল পরিচালনায় আওয়ামী লীগের দল পরিচালায় বিভিন্ন উৎস যে যে আয় হয়েছে তা ব্যয়ের চেয়ে বেশি। ইসির দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১৬ সালেও আওয়ামী লীগের আয় হয়েছিল ৪ কোটি ৮৪ লাখ ৩৪ হাজার ৯৭ টাকা এবং ব্যয় হয় ৩ কোটি ১ লাখ ৮৪ হাজার ৭৯৯ টাকা। উদ্বৃত্ত রয়েছে ১ কোটি ৮২ লাখ ৪৯ হাজার ২৯৯ টাকা। ২০১৫ সালে দলটির আয় হয় ৭ কোটি ১১ লাখ ৬১ হাজার ৩৭৫ টাকা। ব্যয় দেখানো হয়েছে ৩ কোটি ৭২ লাখ ৮১ হাজার ৪৬৯ টাকা। ওই বছর দলটি প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত দেখায়। ২০১৪ সালে দলটি আয় দেখিয়েছে ৯ কোটি ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪৩ টাকা। আর ব্যয় দেখিয়েছে ৩ কোটি ৪৪ লাখ ৪০ হাজার ৮২১ টাকা। এ বছর প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত ছিল আওয়ামী লীগের। ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ আয় দেখিয়েছিল ১২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর ব্যয় দেখিয়েছিল ৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এ বছর প্রায় ৬ কোটি টাকা দলটির উদ্বৃত্ত ছিল। দল পরিচালনায় ইসির দেয়া নিবন্ধনের শর্ত অনুযায়ী প্রতিবছর ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে নিবন্ধিত দলগুলোর এক বছরের আয় ব্যয়ের হিসাব ইসিতে দাখিল করতে বাধ্য। আইন অনুযায়ী পরপর তিন বছর কোন দল ইসিতে তাদের হিসাব জমা না দিলে সেই দলের নিবন্ধন বাতিলের বিধান রয়েছে। এ বছর ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে হিসাব দাখিলের সময়সীমা থাকলেও ইসির কাছ থেকে সময়ে আবেদন জানায়। সে অনুযায়ী তারা মঙ্গলবার তাদের হিসাব ইসিতে জমা দেয়া। এর আগে গত ৩১ জুলাই বিএনপির পক্ষ থেকে ইসিতে আয় ব্যয়ের হিসাব জমা দেয়া হয়। ইসির তথ্য অনুযায়ী এবার জমা দেয়া হিসাব বিবরণীতে বিএনপি বিগত বছরের মোট আয় দেখিয়েছে ৯ কোটি ৪৬ লাখ ২৪ হাজার ৯০২ টাকা। তাদের মোট ব্যয় হয়েছে ৪ কোটি ১৯ লাখ ৪১ হাজার ৯৫৪ টাকা। উদ্বৃত্ত হিসেবে ৫ কোটি ২৬ লাখ ৫২ হাজার ৯৪৮ টাকা হাতে বা ব্যাংকে রয়েছে। বিএনপি ২০১৪ ও ২০১৫ সালে টানা ব্যয় বেশি দেখিয়েছিল। তবে পরবর্তীতে কাউন্সিলের পর (বিভিন্ন অনুদান) থেকে আয় বেড়ে ঘাটতি মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে। এবার জাতীয় পার্টি (জাপা) আয় দেখিয়েছে ১ কোটি ৮ লাখ ৫৫ হাজার ২৪০ টাকা। এ সময় দলটি ব্যয় করেছে ১ কোটি ৭ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ টাকা। এক লাখ টাকারও বেশি উদ্বৃত্ত রয়েছে জাতীয় পার্টির। এর আগে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নিবন্ধিত সব দলগুলোতে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে তাদের আয় ব্যয়ের হিসাব দাখিলের জন্য চিঠি দেয়া হয়। ইসির কর্মকর্তারা জানান ৪০টি দলের মধ্যে সর্বশেষ নিবন্ধন বাতিলের তালিকায় থাকা ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলনের কাছে হিসাব চাওয়া হয়নি। দলটির পক্ষ থেকে নিবন্ধন বাতিল নিয়ে শুনানির সুযোগ রয়েছে। ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালুর পর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ মেনে প্রতিবছর আর্থিক লেনদেনের হিসাব দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর। তখন নিবন্ধন পেলেও পরে আদালতের আদেশে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে ইসি।
×