ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

মানবাধিকার রেকর্ড নিয়ে নাক গলানো চলবে না, মধ্যস্থতাকারী হিসেবেও কাউকে মানবে না

কানাডাকে যে বার্তাটি দিল সৌদি আরব

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ১০ আগস্ট ২০১৮

কানাডাকে যে বার্তাটি দিল সৌদি আরব

সৌদি আরব থেকে কানাডার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি কানাডায় অধ্যয়নরত সৌদির হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে দেশে ডেকে পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থগিত করা হয়েছে। সৌদি কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট করেছে যে, কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আটক সৌদির মানবাধিকার কর্মীদের মুক্তির দাবি করে কূটনৈতিক শিষ্টাচার ভঙ্গ করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শুধু বিবৃতি নয় বরং এটি সবশেষ পদক্ষেপ যাতে রিয়াদ সতর্ক করে দিচ্ছে অন্য দেশগুলোকে তার দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কথা না বলার। আল-জাজিরা, সিবিএস ও ইউএসএ টুডে। ইউনিভার্সিটি অব ডেনভারর্স সেন্টারের জোসেফ কোরবেল স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের মিডেল ইস্ট স্টাডিজের পরিচালক নাদের হাশেমি বলেন, এটি স্পষ্ট যে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান কানাডাকে ব্যবহার করে বিশ্বের অন্যান্য দেশকে একটি বার্তা দিতে চাচ্ছেন আর তা হলো সৌদির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলানোর। যদি আপনারা চান সৌদির সঙ্গে বাণিজ্য করতে তাহলে সৌদি আরবের মানবাধিকার নিয়ে কথা না বলে চুপ থাকতে বলেছেন। কূটনৈতিক সঙ্কট এখন কানাডার সঙ্গে বিন সালমানের মধ্যে শুরু হয়েছে। যুবরাজ তার ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে তরুণদের নিজের পক্ষে রাখছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে তার পক্ষে রেখে তিনি যা চাই তাই করার ক্ষমতা রাখেন তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। ২০১৫ সালে ক্ষমতায় আসার পর তিনি নিজদেশে একজন সংস্কারবাদী হিসেবে ভাবমূর্তি তৈরি করেছেন। একই সময় তিনি আগ্রাসী নীতি অনুসরণ করে বহির্বিশ্বে একটি প্রতিমূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তিনি ইয়েমেন যুদ্ধ বাধিয়েছেন। এতে সেখানে মানবিক সঙ্কট তৈরি করেছেন। কাতারকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে জোর করে এক ঘরে করেছেন। সৌদি রাজ পরিবারের বেশ কয়েকজনকে আটক করেছেন। জোর করে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরিকে পদত্যাগে বাধ্য করেছেন। কানাডার সঙ্গে দ্বন্দ্ব নিয়ে বিন সালমান নতুন নিয়ম প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন আর তা হলো দেশগুলোর অযাচিত হস্তক্ষেপ কিভাবে সৌদি মোকাবেলা করবে তাই বুঝিয়ে দিচ্ছে। মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলে রিয়াদের রোষানলে পড়া কানাডা সরকার অচলাবস্থা কাটাতে মধ্যস্থতার জন্য আঞ্চলিক মিত্রদেশগুলোর দিকে হাত বাড়ালেও অনড় রয়েছে সৌদি আরব। বুধবার সৌদি আরব জানিয়ে দিয়েছে, তাদের সঙ্গে কানাডার সঙ্গে ঘোর কূটনৈতিক বিরোধে মধ্যস্থতার কোন সুযোগ নেই। তাছাড়া, কানাডা যে ‘বড় ধরনের ভুল’ করেছে তা শুধরে নিতে কি করা প্রয়োজন তাও অটোয়া জানে বলে মন্তব্য করেছে রিয়াদ। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবাঈর রিয়াদে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘মধ্যস্থতা করার কিছু নেই। একটি ভুল হয়েছে, তা শুধরে নেয়া উচিত।’ দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের আরও অবনতির ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, ‘সৌদি আরব এখনও কানাডার বিরুদ্ধে বাড়তি আরও পদক্ষেপ নেয়ার কথা ভাবছে।’ তবে এ বিষয়ে বিস্তুারিত আর কিছু বলেননি তিনি। রিয়াদকে কারাবন্দী অধিকার কর্মীদের মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিল কানাডা। আর তাতেই ক্ষুব্ধ হয়ে সৌদি আরব কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ এবং কানাডার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করাসহ সবশেষে কানাডায় সব ধরনের চিকিৎসা সেবাও বন্ধ করেছে। এ অচলাবস্থা কাটাতেই মধ্যস্থতার জন্য আঞ্চলিক মিত্রদেশগুলোর দারস্থ হওয়ার পরিকল্পনা নেয় কানাডা। এর মধ্যে প্রধানত সৌদি আরবের ভাল বন্ধুদেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাহায্য কামনা করছে দেশটি। আরেকটি সূত্র জানায়, কানাডা এ সঙ্কট কাটাতে ব্রিটেনের সহযোগিতাও চাইছে। ব্রিটিশ সরকার মঙ্গলবার দুই দেশকেই সংযত থাকার পরামর্শ দিয়েছে। তবে ঐতিহ্যগত দিক থেকে কানাডার অন্যতম বন্ধুদেশ যুক্তরাষ্ট্র রিয়াদের সঙ্গে অটোয়ার মধ্যকার বিরোধে নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখেছে।
×