ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

১৪ দলের বৈঠক শেষে নাসিমের আহ্বান

শিক্ষার্থীরা দ্রুত ঘরে ফিরে শিক্ষাজীবন শুরু করবে

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ৪ আগস্ট ২০১৮

  শিক্ষার্থীরা দ্রুত ঘরে ফিরে শিক্ষাজীবন শুরু করবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিটি দাবি মেনে নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তাদের ঘরে ফিরে যাওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট। জোটের বৈঠক শেষে ১৪ দলের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এ আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের ছেলেমেয়েরা দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘরে ফিরে যাবে এবং ক্লাসে ফিরে গিয়ে তাদের স্বাভাবিক শিক্ষা জীবন শুরু করবে। কারণ লক্ষ্য অর্জনের পরও যদি তারা বাইরে থাকে তাহলে লক্ষ্য অর্জন নয়, বরং লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে যাবে। এটা মনে রাখতে হবে যখন লক্ষ্য অর্জিত হয়ে যায় তখন ক্ষান্ত দিতে হয়, না হলে লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সকল শ্রেণী পেশার মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা এই সময়ে আমাদের সহযোগিতা করুন। সরকারকে সহযোগিতা করুন। এমন কোন কথা বলবেন না, এমন কোন উক্তি করবেন না, এমন কোন আচরণ করবেন না, যার জন্য এই আন্দোলনটি লক্ষ্য অর্জন না করে অন্য পথে চলে যায়। এজন্য সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানাই। কারণ আমরা বিশ্বাস করি দেশে মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী আছেন, সেক্ষেত্রে অবশ্যই অন্য যে কোন সমস্যার মতো এই সমস্যারও দ্রুত সমাধান হবে। শুক্রবার বিকেলে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ের পার্শ্ববর্তী দলটির নির্বাচনী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় ১৪ দলের বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান। বৈঠকে শোকাবহ আগস্ট মাস উপলক্ষে ১৪ দলের পক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের সিদ্ধান্ত হয়। ব্রিফিংকালে মোহাম্মদ নাসিম আরও বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে আমাদের সন্তানের মতো দুটি শিশু বাসের চাপায় মর্মান্তিকভাবে নিহত হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আমরা চৌদ্দ দলের পক্ষ থেকে গভীরভাবে শোক জানাচ্ছি। শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীরভাবে সমবেদনা জানাচ্ছি। তিনি বলেন, এটি একটি সড়ক দুর্ঘটনা নয়, এটি একটি হত্যাকান্ড। চৌদ্দ দল মনে করে এই ধরনের হত্যাকান্ডের দ্রুত বিচার করে খুনীদের বিচার বিধান নিশ্চিত করতে হবে। ইতোমধ্যে মানুষ দেখেছে যে, সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা রাস্তায় নেমে পড়েছে এই সড়ক দুর্ঘটনার বিরুদ্ধে, হত্যার বিচার দাবিতে। তিনি বলেন, এই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের প্রতি আমরা সম্মান জানাই, শ্রদ্ধা জানাই। তাদের প্রতি সম্পূর্ণ সহানুভূতি আছে চৌদ্দ দলের। কারণ দীর্ঘ দিনের এই সড়ক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে যে অব্যবস্থাপনা সৃষ্টি হয়েছে তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা যে প্রতিবাদ করছে তা অবশ্যই যুক্তিসঙ্গত। এই ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত আমরা মনে করি এর বিচার হওয়া উচিত। তবে আন্দোলনের লক্ষ্য অর্জনের পরেও রাস্তায় থাকলে সেই লক্ষ্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে বাংলাদেশের পরিবহন সেক্টরকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে গেছে যেখানে মানুষ জিম্মি হয়ে গেছে। এখান থেকে পরিত্রাণ পেতে হবে। এখানে কিন্তু বাম-ডান বলে কিছুই নাই। সবাই এক স্বার্থে এক হয়ে গেছে। মোহাম্মদ নাসিম বলেন, অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, আমাদের স্বীকার করতে হবে। আমাদের স্বীকার করতে লজ্জা নেই। কিছু অব্যবস্থাপনার কারণে এই পরিবহন সেক্টরে যারা কাজ করে, যারা শ্রমিকদের নেতৃত্ব দেন- তারা কিন্তু দলমত নির্বিশেষে একই স্বার্থে কাজ করে। বাম বলেন, ডান বলেন, এই শ্রমিক পরিবহনের নেতৃত্বে যারা আছেন তাদের সরকারী দল, বিরোধী দল বলে কিছু নেই। তারা দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে বাংলাদেশের পরিবহন সেক্টরকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে গেছেন যেখানে মানুষ জিম্মি হয়ে গেছে। এখান থেকে আমাদের পরিত্রাণ পেতে হবে। এই ব্যাপারটি অনেক আলোচিত হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করেছেন, আগামী কেবিনেট মিটিংয়ে পরিবহন সেক্টরের আইনটি পাস করা হবে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রী পদত্যাগ করবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে নাসিম বলেন, তিনি তো দুঃখ প্রকাশ করেছেন, ক্ষমাও চেয়েছেন। আর কত? এখন আমার কাছে মনে হয় এটা রাজনৈতিক দাবি উঠেছে। আন্দোলনের উদ্দেশে এটা ছিল না। কারণ পদত্যাগের মাধ্যমে এর সমাধান হবে না। আইন করে তা কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়ার সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জাসদ একাংশের সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির আনিসুর রহমান মল্লিক, কামরুল আহসান খান, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডাঃ ওয়াজেদুল ইসলাম, গণতন্ত্রী পার্টির শাহাদাত হোসেন, বাসদের রেজাউর রশিদ খান, গণআজাদী লীগের এস কে শিকদার, আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, বিএমএ’র সভাপতি ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডাঃ দিলীপ রায় প্রমুখ।
×