ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

মধ্য শাওনের বৃষ্টিতে জো এসেছে জমিতে, চাষী ব্যস্ত আমন চারা রোপণে

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৩০ জুলাই ২০১৮

 মধ্য শাওনের বৃষ্টিতে জো এসেছে জমিতে, চাষী ব্যস্ত আমন চারা রোপণে

সমুদ্র হক ॥ মধ্য শ্রাবণের বৃষ্টিতে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। দিন কয়েক আগেও বৃষ্টি না ঝরায় ওদের মুখ ছিল বেজার। মহাদুশ্চিন্তায় পড়েছিল আমন আবাদ নিয়ে। এরই মধ্যে প্রকৃতি মুখে তুলে চাইল। আকাশের কালো মেঘ জানান দিল বৃষ্টি নামবে। শেষ পর্যন্ত অঝোর ধারার বৃষ্টিতে কৃষক তড়িঘড়ি মাঠে নামে। এখন তারা মহা আনন্দে মাঠে আমনের চারা রোপণে ব্যস্ত। একদন্ড ফুরসত নেই। বগুড়ার সোনাতলার রানীরপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল বাসেত বললেন ‘যেঙ্কা অদ উট্যে ভিঁউ ফাট্যে যাচ্চিল হামাগেরে মাতাত তো হাত পড়ছিল। হাঁইরে আমন ব্যন এবার গেল। ঝরি পড়ে কি যে উপকার দেছে, হামরা এখন চারা আরজিব্যর জন্যি ভিঁউত নামিছি। (যে রোদ উঠে জমি ফেটে যাচ্ছিল আমাদের মাথায় হাত পড়েছিল। আমন বুঝি এবার গেল। বৃষ্টি যে কী উপকারে এসেছে, আমরা এখন চারা রোপণের জন্য জমিতে নেমেছি)।’ কৃষি প্রধান উত্তরাঞ্চলের প্রতি এলাকায় বর্ষা শেষের টানা বৃষ্টিতে আবাদের ভূমি চাষ ও আমন চারা রোপণের জো এসেছে। কৃষক যত তাড়াতাড়ি চারা রোপণ করে ততই ভাল। আমন আবাদ প্রকৃতির সেচ নির্ভর। শ্যালো ইঞ্জিনের সেচে বোরো আবাদের পর কৃষক আমনের প্রস্তুতি নেয় বৃষ্টির দিকে চেয়ে। বোরো ও আমনের মধ্যবর্র্তী সময়ে কিছু জমিতে তারা আউশও আবাদ করে। আউশের চাষ প্রায় উঠেই গিয়েছিল। আবার ফিরে এসেছে। সরকার আউশ আবাদের জন্য প্রণোদনাও দিয়েছে। আমন ও আউশ আবাদের কৃষকের অবস্থান এখন সমান্তরাল। তারা একযোগে মাঠে নেমেছে। একটা সময় এই আমন ছিল প্রধান আবাদ। ষাটের দশকে যন্ত্র সেচে রোরো আবাদ উদ্ভাবনের পর বোরো ও আমন উভয় আবাদ গুরুত্ব পায়। পার্থক্য বোরো আবাদ যন্ত্রের সেচনির্ভর, আর আমন বৃষ্টির সেচ নির্ভর। তবে আমন মৌসুমে খরা হলে কৃষক সেচ যন্ত্র মাঠে নামায়। এই আমন ধান ঘরে ওঠার পর অঘ্রাণের শুরুতে নবান্নের উৎসব হয় বা বাঙালীর চিরন্তন সংস্কৃতি। সূত্র জানায়, কৃষি প্রধান উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় চলতি আমন মৌসুমে প্রায় ২৯ লাখ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের টার্গেট ধরা হয়েছে। বর্তমানে উত্তরাঞ্চলের সব জেলা বরেন্দ্র অঞ্চলের আওতায়। একটা সময় নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ছিল রুক্ষভূমির অঞ্চল। বরেন্দ্র বহুমুখী প্রকল্পের আওতায় ওই অঞ্চলে বনায়ন, খাল খনন, রাবার ড্যাম নির্মাণ করে এক ফসলি জমিকে বহুমুখী ফসলের জমিতে রূপান্তর করা হয়। আবাদ উদ্বৃত্ত বগুড়া জেলায় আমনের টার্গেট ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার হেক্টর। এই পরিমাণ জমি থেকে আমন চালের উৎপাদন টার্গেট ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মেট্রিক টন। মাঠপর্যায়ে খোঁজ করে জানা যায়, কৃষক এখন আমন চারা রোপণে ব্যস্ত। কিছু কৃষকের বীজতলা তৈরিতে দেরি হওয়ায় তারা দ্রুত চারা সংগ্রহে নেমেছে। আবাদ উদ্বৃত্ত নওগাঁ অঞ্চলে আমন আবাদের টার্গেট ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৩০ হেক্টর। এর মধ্যে উফশীর আবাদ হবে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে। বাকি স্থানীয় জাত। এক সময়ে নওগাঁ অঞ্চলে আমন আবাদ হতো না। অধিক বনায়নে বৃষ্টিপাতের হার বেড়ে যাওয়ায় নওগাঁ এখন আমন আবাদেরও উদ্বৃত্ত এলাকা। একইভাবে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকাতেও আমন আবাদ বেড়েছে। দিনাজপুর অঞ্চলে ২ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদের টার্গেট নেয়া হয়েছে। যদিও দিনাজপুর অঞ্চলে পতিত জমির পরিমাণ বেশি তারপরও আমন আবাদে দিনাজপুর আগের চেয়ে অনেক এগিয়ে গেছে। বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে গত ক’বছরে আমন চাষ বেড়েছে। এভাবে উত্তরাঞ্চলের প্রতি এলাকা এখন আমনসহ নানা জাতের ধান উৎপাদনের উর্বর ভূমি। উদ্বৃত্ত চাল বিদেশে রফতানিও শুরু হয়েছে।
×