ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নাগরিকদের সচেতন হতে পৌর মেয়রের আহ্বান

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ২৮ জুলাই ২০১৮

  নাগরিকদের সচেতন হতে পৌর মেয়রের আহ্বান

সাজেদ রহমান, যশোর অফিস ॥ যশোর পৌরসভার পানি নিষ্কাশনের ড্রেনে ময়লা আবর্জনা ফেলছেন শহরবাসী। বাসাবাড়ির বাসিন্দাদের ফেলা এসব ময়লায় ভরে যাচ্ছে শহরের ড্রেনগুলো। যার ফলে বৃষ্টির দিনে পানি সরতে না পারায় ড্রেন উপচে শহরের রাস্তায় জমছে পানি। পৌরসভা থেকে ময়লা ফেলার জন্য স্থান নির্দিষ্ট করে দিলেও অসচেতন অনেকে সেটি মানছেন না। আর প্রতিনিয়ত ময়লায় ভরাট ড্রেন পরিষ্কার রাখতে গিয়ে পৌরসভার প্রতিমাসে ছয় থেকে সাত লাখ টাকা বাড়তি ব্যয় হচ্ছে। সরেজমিন যশোর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ময়লা আবর্জনা ড্রেনে ফেলার দৃশ্য নজরে এসেছে। দেখা গেছে, পলিথিন ব্যাগ, বালতি, গামলা, ঝুড়ি, কুলোয় করে ঘরগৃহস্থালির ময়লা ড্রেনে ঢালছেন নাগরিকরা। ৃশহরের বিভিন্ন এলাকার ঢাকনাবিহীন ড্রেনগুলোয় নির্বিচারে ফেলা ময়লায় ভরাট হয়ে গেছে। বিশেষ করে পলিথিনে মোড়া ময়লার স্তূপে ড্রেনের পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। যশোর পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, পানি নিষ্কাশনের জন্য শহর এলাকায় ৪৫ কিলোমিটার ড্রেন রয়েছে। এর মধ্যে ২৫ কিলোমিটার ড্রেনের ওপর ফুটপাথ নির্মাণ করা হয়েছে। বাদবাকি ২০ কিলোমিটার ড্রেন উন্মুক্ত রয়েছে। অর্থাৎ এসব ড্রেনের ওপর কোন স্লাব বা ঢাকনা নেই। সহকারী প্রকৌশলী আহসান বারী জানান, উন্মুক্ত ড্রেনগুলোয় আপাতত ঢাকনা নেই। কারণ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে নির্মিত এসব ড্রেনের নির্মাণ কাজের নক্সায় ঢাকনা ছিল না। তবে ভবিষ্যতে এসব ড্রেনে ঢাকনা নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। শহরবাসীর অনেকের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ঢাকনাবিহীন এসব ড্রেনে ইচ্ছা খুশি ময়লা ফেলে চলেছেন অনেক বাসাবাড়ির বাসিন্দা। পৌরসভা থেকে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় ময়লা ফেলার স্থান নির্দিষ্ট করে দেয়া হলেও অসচেতন অনেকে সেখানে ময়লা না ফেলে সরাসরি ড্রেনে ফেলছেন। পৌরসভার ছয় নম্বর ওয়ার্ডের রায়পাড়া মাদ্রাসা রোড, রাজা বরদাকান্ত রোডে গিয়ে দেখা গেছে, এখানকার ড্রেনগুলোতে ঢাকনা নেই। এই সুযোগে এলাকার অনেক বাসাবাড়ির লোকজন প্রতিনিয়ত সেখানে ময়লা ফেলছেন। ফলে ড্রেনগুলো আবর্জনায় ভরে উঠেছে। বৃষ্টি হলেই রাস্তায় পানি জমছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা ফিরোজ হক ও মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। তারা বলেন, পৌরসভা সম্প্রতি মাদ্রাসা রোডে ড্রেন নির্মাণ করেছে। সেখানে এখনও ঢাকনা বসানো হয়নি। আর এই সুযোগে মহল্লার অসচেতন বাসিন্দারা সেখানে ময়লা ফেলে ভরে ফেলছেন। এদিকে, শহরের খড়কি এলাকায় একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তায় পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এ এলাকার সরকারী মাইকেল মধুসূদন কলেজের দক্ষিণ গেট থেকে জেবিন মোড় পর্যন্ত বৃষ্টি হলেই জলমগ্ন হয়ে পড়ে। গোড়ালি থেকে হাঁটু সমান পানি জমে যায়। এ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাসাবাড়ির ফেলা ময়লা আবর্জনায় এখানকার ড্রেন ভরে গেছে। পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টি হলে এখানকার রাস্তা জলমগ্ন হয়ে পড়ছে। আরমান সোহেল নামে স্থানীয় একজন জানান, পৌরসভা থেকে ড্রেন পরিষ্কার করার কয়েকদিনের মধ্যেই আবারও ভরে যায়। কারণ যে যার ইচ্ছেমতো ড্রেনে ময়লা ফেলেন। এমন চলতে থাকলে ভরা বর্ষায় জলাবদ্ধতার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া শহরের হাটখোলা, হাটচান্নিসহ বড়বাজারের বেশ কয়েকটি স্থানে ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত স্থানে ময়লা না ফেলে ড্রেনে ফেলছে। এ ব্যাপারে সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) যশোর শাখার সদস্য এ্যাডভোকেট প্রশান্ত দেবনাথ বলেছেন, বাসাবাড়ির বাসিন্দাদের পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন বাজার এলাকায় ব্যবসায়ীরা ময়লা ড্রেনে ফেলছে। ফলে ড্রেনগুলো ময়লায় ভরাট হয়ে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে শহর জলাবদ্ধ হচ্ছে। যেটি জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। আমাদের নিজেদের জীবন-যাপনের স্বাচ্ছন্দ্য ও স্বস্তির কথা ভেবে নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলার ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে। এর পাশাপাশি ড্রেনে ময়লা ফেলা বন্ধে সোচ্চার হতে হবে সবাইকে। যোগাযোগ করা হলে যশোর পৌর সচিব আজমল হোসেন বলেছেন, নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলার জন্য প্রতিনিয়ত শহরবাসীকে আহ্বান জানানো হচ্ছে। নাগরিকদের বলা হচ্ছে, আপনারা নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলান। পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা সেখান থেকে সেগুলো তুলে আনবে। কিন্তু অনেকেই সেটি না করে ড্রেনে ময়লা ফেলে ভরে ফেলছেন। আর ড্রেনের ময়লা আবর্জনা সাফ করতে গিয়ে প্রতিমাসে ছয় থেকে সাত লাখ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। যশোর পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু ময়লা আবর্জনা যত্রতত্র নয়, নির্ধারিত স্থানে ফেলার ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শহরবাসীর নিজেদের স্বার্থে ময়লা ড্রেনে ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ ড্রেনে ময়লা ফেললে পানি নিষ্কাশন বাধাপ্রাপ্ত হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। এজন্য ড্রেনে যাতে কেউ ময়লা ফেলতে না পারে সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
×