ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চমকে ভরা রাশিয়া বিশ্বকাপ

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৬ জুলাই ২০১৮

চমকে ভরা রাশিয়া বিশ্বকাপ

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ মাঠ ও মাঠের বাইরে রাশিয়া বিশ্বকাপ ছিল সত্যি চমক জাগানিয়া। নিন্দুকদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সফল আয়োজনে গোটা দুনিয়ার ফুটবলপ্রেমীদের মন কেড়েছে রাশানরা। মাঠেও ছিল একের পর এক চমক। গ্রুপপর্ব থেকে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানির বিদায়, দ্বিতীয় রাউন্ডে বাড়ির পথ ধরে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। কোয়ার্টারে স্বপ্নভঙ্গ হয় নেইমারের ব্রাজিলের। অথচ সেমিতে উঠে আসে বেলজিয়াম-ক্রোয়েশিয়ার মতো দেশ। সে অর্থে এবারের বিশ্বকাপকে সুপার তারকাদের পতনের বিশ্বকাপ বললেও অত্যুক্তি হবে না। অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে আয়োজক রাশিয়া ছিল র‌্যাঙ্কিংয়ে সবার পেছনে, অথচ সেই তারাও দুর্দান্ত ফুটবল খেলে মন জয় করে নিয়েছে। নিñিদ্র আয়োজনে ভøাদিমির পুতিনের দেশের প্রশংসা করেছে ফিফা। সবমিলিয়ে চমক আর আয়োজনে সফলতায় শেষ হলো বহুল আলোচিত রাশিয়া বিশ্বকাপ। রাশিয়া বিশ্বকাপ আসলে আগাগোড়া পুরোটাই চমকে ভরা। মেসি, নেইমার, রোনাল্ডো, সুয়ারেজ, মুলারÑ বড় বড় তারকারা খসে পড়েছেন অনেক আগেই। তাদের কাঁধে চেপে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখা ভক্তরা তাই কেঁদেই বুক ভাসিয়েছেন। বড় দল, বড় নাম, বড় তারকাদের এই পতনে বিশ্বকাপ শেষ দিকে হয়ে পড়েছে তারকাবিহীন। তাতে কী! বিশ্বকাপ উত্তেজনা তো এভাবেই বাড়ে! আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি, ব্রাজিলের নেইমার, পর্তুগালের রোনাল্ডো, উরুগুয়ের সুয়ারেজ, জার্মানির ম্যানুয়েল নয়্যার, স্পেনের ইনিয়েস্তা, সার্জিও রামোস। এই তারকাদের ওপর বাজি ধরেছিলেন ভক্তরা। বাজি ছিল বিশ্বকাপ জয়ের। তাদের কাঁধে ভর করে বিশ্বকাপ নিজ দেশে নিয়ে যাবেন তারা। তা আর হয়নি। ক্লাব ফুটবলে তাদের নৈপুণ্য আশা জাগিয়েছিল ভক্তদের। বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে তারা জ্বলে উঠবেন। ভক্তদের উপহার দেবেন জয়। কিন্তু মাঠের খেলায় আবেগের উত্থান-পতন তো রয়েছেই। আনন্দ-বেদনার মিশেল আবেগ জানান দিয়েছে বড় তারকা দিয়ে বিশ্বকাপ জেতা যায় না। আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসিকে ফুটবল রাজপুত্র মানেন সবাই। জীবনে সেরা খেলোয়াড়ের কত তকমা তার নামের পাশে। এসবে কাজ হয়নি। একা লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনাকে দ্বিতীয় রাউন্ডও পার করতে পারেননি। ফ্রান্সের কাছে হেরে বিষণœœ মুখে বিদায় নিয়েছে মেসির আর্জেন্টিনা। ব্রাজিলের নেইমারের ওপর বাজি ছিল ছয় নম্বর বিশ্বকাপ জেতার। নেইমার-কুটিনহো-মার্সেলো দুর্দান্ত খেলেও বিদায় নিতে হলো। জার্মানিও এসেছিল তারকায় ঠাসা দল নিয়ে। ২০১৪ বিশ্বকাপ জয়ের সুখ স্মৃতি নিয়ে খেলতে এসেছিল তারা। টমাস মুলারের ওপর বাজি রাখা জার্মানিকে আটকে দেয় দক্ষিণ কোরিয়া। কে ভাবতে পেরেছিল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা বিদায় নেবে গ্রুপপর্বেই? এই বিশ্বকাপে প্রথম হ্যাটট্রিক করে জ্বলে ওঠা পর্তুগালের রোনাল্ডো সবেমাত্র ম্যাজিক দেখাতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু শেষটা হলো না। উরুগুয়ের কাছে হেরে রোনাল্ডো তারকাও ঝরে পড়েন। উরুগুয়ের সুয়ারেজও মাঠে জ্বলজ্বল করেছিলেন। কোয়ার্টার ফাইনালে তারও বিদায়ঘণ্টা বাজে। রাশিয়ার সঙ্গে হেরে বিদায় নেয় স্পেন। স্পেনের সার্জিও রামোস, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা সেই পরাজয় ঠেকাতে পারেননি। তারাও বিদায় নিয়েছেন। ফ্রান্সের এ্যান্টনি গ্রিজম্যান আর বেলজিয়ামের লুকাকু ছাড়া কোন বড় তারকাই তাদের নামের ওজন রাখতে পারেননি। বিশ্বকাপ মঞ্চটাই এমন। শুধু তারকা খ্যাতি দিয়ে ম্যাচ জেতা যায় না। বড় বড় তারকাদের বিদায়ে বিশ্বকাপ তারকাশূন্য হয়ে গেছে এমনটা বললে ভুল হবে। ভুলে গেলে চলবে না, বিশ্বকাপটাই সবচেয়ে বড় তারকা। এই বিশ্বকাপের আলোচিত যত ঘটনা : ২০১৮ বিশ্বকাপে মনে রাখার মতো অসংখ্য উপলক্ষ রয়েছে। ছোট দলগুলোর কাছে ধরাশায়ী হয়ে বিদায় নিয়েছে বড় দলগুলো। একে রেকর্ড ভাঙ্গার বিশ্বকাপও বলা যায়। বলা যায় রেকর্ডের ফুল ফুটেছে এবার। সেমিফাইনাল পর্যন্ত হিসেব আমলে নিয়ে তা তুলে ধরা হলো- পেনাল্টি গোলের রেকর্ড : টাইব্রেকারের হিসেব বাদ দিলে এবার সেমিফাইনাল পর্যন্ত ম্যাচের নির্ধারিত সময়ে পেনাল্টি থেকে ১৬ জন খেলোয়াড় গোল করেছেন। সবমিলিয়ে তাদের গোলসংখ্যা ২০টি। এর আগে এক বিশ্বকাপে এমন নজির নেই। পেনাল্টি থেকে সর্বোচ্চ গোলসংখ্যা ছিল ১৭টি। ১৯৯৮ ফ্রান্স বিশ্বকাপে এমনটি দেখা যায়। সেট পিস থেকে গোলের রেকর্ড : পেনাল্টি কিক, ফ্রি-কিক, কর্নার কিক, লম্বা থ্রোকে সেট পিস বলে। এবার সেমিফাইনাল পর্যন্ত তা থেকে গোল এসেছে ৭০টি। এর আগে সেট পিস থেকে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড ছিল ৪৬টি। ২০০৬ বিশ্বকাপে হয়েছিল এ রেকর্ড। শেষ মুহূর্তের গোলের রেকর্ড : সেমিফাইনাল পর্যন্ত ম্যাচের শেষ পাঁচ মিনিটে গোল হয়েছে ২৯টি। যার ১৯টিই আবার অতিরিক্ত যোগ করা সময়ে। আগের রেকর্ডটি ১৯৯৮ বিশ্বকাপের। ফ্রান্স বিশ্বকাপে শেষ পাঁচ মিনিটে গোল হয়েছিল ২৪টি। আত্মঘাতী গোলে রেকর্ড : রাশিয়া বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল পর্যন্ত আত্মঘাতী গোল হয়েছে ১১টি। এর আগে কোন বিশ্বকাপ তা দেখেনি। সর্বোচ্চ আত্মঘাতী গোলের রেকর্ড ছিল ৬টি। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে এ রেকর্ড হয়। টাইব্রেকারে নতুন রেকর্ড : সেমি পর্যন্ত টাইব্রেকারে গড়িয়েছে চারটি ম্যাচ, যা বিশ্বকাপ ইতিহাসে রেকর্ড। অবশ্য ১৯৯০, ২০০৬ ও ২০১৪ বিশ্বকাপেও চারটি করে ম্যাচ পেনাল্টি শূটআউটে গড়ায়। এবার টাইব্রেকারে দুটি ম্যাচ জিতেছে ক্রোয়েশিয়া। এটিও একটি রেকর্ড। ১৯৯০ বিশ্বকাপে একই কীর্তি গড়ে আর্জেন্টিনা। সবমিলয়ে মনে রাখার মতো চমক আর রেকর্ডের মধ্য দিয়ে শেষ হলো রাশিয়া বিশ্বকাপ।
×