ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জনপ্রিয় হয়ে উঠছে খাঁচায় মাছ চাষ

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ১৪ জুলাই ২০১৮

জনপ্রিয় হয়ে উঠছে খাঁচায় মাছ চাষ

মাছ চাষে মুক্ত জলাশয়ের ধারণা পাল্টে দিচ্ছে এক শ্রেণীর যুবক। এখন জলাশয়ে খাঁচায় করে মাছ চাষের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন। মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার বেশ কয়েকটি মৃতপ্রায় নদীতে দীর্ঘদিন ধরেই দেখা যাচ্ছে খাঁচায় মাছ চাষের এ পদ্ধতি। দিন যাচ্ছে আর বাড়ছে খাঁচার সংখ্যা। সেই সঙ্গে বাড়ছে চাষি সংখ্যা। শিবচর উপজেলার বাঁশকান্দি ইউনিয়নের শেখপুর বিলপদ্মা নদীতে এবং শিরুয়াইল ইউনিয়নের আড়িয়াল খাঁ নদীসহ বিভিন্ন স্থানের উন্মুক্ত জলাশয়ে চলছে খাঁচায় মাছ চাষ। এ সব মাছ স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণ করেও আশপাশ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। খাঁচায় উৎপাদিত মাছ সুস্বাদু হওয়ায় দিন দিন বেড়ে চলেছে চাহিদা। স্বল্প জায়গায় খাঁচায় করে অধিক পরিমাণে বিভিন্ন প্রজাতের মাছ চাষ করা যায় এ পদ্ধতিতে। ফলে সহজেই অধিক পরিমাণে মাছ চাষ করে ছয় থেকে সাত মাসের মধ্যেই এ মাছ বাজারে বিক্রির উপযোগী হয়। শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের আড়িয়াল খাঁ নদের একটি অংশ চর পরে আলাদা হয়ে যায় অনেকদিন আগে। মূল নদীর সঙ্গে সংযোগ থাকলেও নেই কোন স্রোত। বৃহৎ জলাশয়ের মতো এ জলাভূমিতে বড় বড় খাঁচায় করে চলছে মাছের চাষ। প্রথমে একটি খাঁচা নিয়ে চাষ শুরু করা হলেও বর্তমানে বেড়েছে খাঁচার সংখ্যা। সেই সঙ্গে বেড়েছে নানা প্রজাতির মাছের চাষও। আর এই সকল খাঁচার মাছ স্থানীয় বাজারে ও আশপাশে বিক্রি করা হচ্ছে বলে চাষীরা জানান। খাঁচা পদ্ধতির এই মাছ চাষীদের একজন তানজিল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘প্রায় ৫/৬ লাখ টাকা খরচ করে একটি ফ্রেমের সঙ্গে ত্রিশটি করে খাঁচা তৈরি করা হয়। প্লাস্টিকের ভাসমান ড্রামের মাধ্যমে দীর্ঘ এই খাঁচাগুলোকে ভাসিয়ে রাখা হয়। প্রতিটি খাঁচার গভীরতা ৬ ফুট, প্রস্থ ১০ ফুট এবং দৈর্ঘ্য ২০ ফুট।’ প্রতিটি খাঁচায় তিনি তেলাপিয়া জাতের মাছ চাষ করছেন। বছরের জুলাই মাসে ০২ মিমি সাইজের পোনা মাছ কিনে খাঁচার মধ্যে লালন করতে শুরু করেন। পাঁচ মাসের মধ্যেই মাছ বিক্রির উপযুক্ত হয়। সাধারণত ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম হলেই বিক্রি করে দেন। বাজারে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা খুচরা মূল্যে কেজি দরে বিক্রি হয় এ মাছ। খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষের সুবিধা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খাঁচা পদ্ধাতিতে মাছ চাষ করতে পুকুরের প্রয়োজন হয় না। এ ধরনের জলাশয়ে একাধিক খাঁচায় করে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করা যায়। তাছাড়া বড় ধরনের বিনিয়োগ মূলত একবারই করতে হয়। সাধারণত খাঁচা তৈরি করতেই খরচ বেশি পড়ে যায়। তবে খাঁচা তৈরির পরে দীর্ঘদিন এই একই খাঁচা ব্যবহার করা যায়। ত্রিশটি খাঁচার মাছের জন্য প্রতিদিন এক বস্তা করে খাবার লাগে। বাজারে কিনতে পাওয়া সাধারণ মাছের খাবারই এদের দেয়া হয়।’ স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করলে জানা যায়, মাছের বাজারে যে তেলাপিয়া মাছ পাওয়া যায় তা এই সকল খাঁচায় চাষ করা মাছ। এ মাছ আকারে তুলনামূলক বড় ও সুস্বাদু। ফলে চাহিদাও বেশি। শিবচর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, ‘শিবচরের জলাশয়গুলোতে খাঁচা পদ্ধতিতে মাছের চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলত এভাবে চাষ করলে সঠিক পরিমাণে নির্দিষ্ট সময়ে মাছ বাজারে বিক্রি করা যায়। এ কারণেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে খাঁচায় মাছের চাষ। আমাদের মৎস্য অফিস খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষের ওপর চাষীদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আসছে।’ -সুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর থেকে
×