ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

গৃহহীন পরিবারটির ঠাঁই হলো কুড়িগ্রামে

প্রকাশিত: ০৪:২১, ১৪ জুলাই ২০১৮

গৃহহীন পরিবারটির ঠাঁই হলো কুড়িগ্রামে

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ ঢাকায় ওভারব্রিজে আশ্রয় নেয়া অসুস্থ ফরিদা, তার স্বামী ও সন্তানদের অবশেষে ঠাঁই হলো সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নে। জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে শুক্রবার সকালে পরিবারটিকে পাঁচগাছিতে বসবাসের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। রাতের গাড়িতে ঢাকা থেকে কুড়িগ্রামে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন ঢাকাস্থ কুড়িগ্রাম সমিতির মহাসচিব সাদুল আবেদীন ডলার। কুড়িগ্রাম শহরে পৌঁছলে তাদেরকে প্রেসক্লাবে নিয়ে আসা হয়। এখানে নিজের জীবনের কথা শোনান ফরিদা বেগম (৪০) ও তার স্বামী আনছার আলী (৬০)। উলিপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে দুর্গম বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ইসলামপুর মৌজার মরাকাটি গ্রামে বাড়ি ছিল ফরিদার স্বামী আনছার আলীর। দুই একর জমি ছিল তাদের। আনছার আলী দুধের ব্যবসা করত। ভালই চলছিল পরিবারটি। প্রতিদিন প্রায় দুই মণ করে দুধ সংগ্রহ করে ১৫ কিলোমিটার সাইকেল মাড়িয়ে কুড়িগ্রাম শহরে হোটেলগুলোতে দুধ সরবরাহ করত সে। কিন্তু ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গনে ২০১৬ সালে একমাসের মধ্যে বাড়িঘর, আবাদি জমি সবই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। গৃহহীন হয়ে পড়ে পরিবারটি। এরপর আশ্রয় নেয় জামালপুরের ইসলামপুরে জেঠাত ভাইয়ের বাড়িতে। সেখানে একমাস থাকার পর ঢাকায় চলে আসে পরিবারটি। ফরিদা বেগম জানান, ছোট বেলায় বাবা মা হারান তিনি। নানী কুলসুম আর খালা তারামনি তাকে সিতাইঝাড় ছিন্নমুকুল এনজির আশ্রয় কেন্দ্রে রেখে আসে। সেখানে ৭ বছর থাকার এক সময় আশ্রয় কেন্দ্রটি ভেঙ্গে যায়। আবারও নানির বাড়িতে ফিরে আসি। সেখানে আমার বিয়ে হয়। তিন মাস পর বিয়ে ভেঙ্গে যায়। দুই বছর পর আনছার আলীর সঙ্গে আবার বিয়ে হয়। অভাব-অনটন সহ্য করতে না পেরে তারা গত নবেম্বর মাসে ঢাকায় পাড়ি দেয়। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে শেষে আশ্রয় নেয় কলাবাগান ওভারব্রিজের নিচে পলিথিন বিছিয়ে। এখানে ধানমন্ডি ক্লাবে দারোয়ান জামালের সহযোগিতায় পাতা কুড়ানোর কাজ করে দিনে আয় হতো দু শ’ থেকে আড়াই শ’ টাকা। সেই অর্থেই চলছিল জীবন। কিছুদিন পর পাতা কুড়ানোর কাজটাও বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় প্রায় না খেয়ে থাকতে হচ্ছিল পরিবারটিকে। সন্তানদের দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে না পেরে অসুস্থ শরীর নিয়ে নিজেই ভিক্ষাবৃত্তি করতে বেরিয়ে পড়েন ফরিদা । তাদের তিন সন্তানের মধ্যে আকলিমা (১১) প্রতিবন্ধী, দ্বিতীয় কন্যা সন্তান আখিতারা (৭) কে তারা গ্রামের বাড়িতে চাচির কাছে রেখে এসেছেন। একমাত্র ছেলে ফরিদুল (সাড়ে ৩) তাদের কাছে থাকে। ফরিদা বেগম জানান, ঘটনার দিন দু সন্তানকে নিয়ে কলাবাগান থেকে ল্যাব এইডের দিকে ভিক্ষা করতে বের হন। অসুস্থ শরীর নিয়ে বের হওয়ার ফলে ল্যাব এইডের কাছে অসুস্থ হয়ে ফুটপাথে পড়ে যান তিনি। মনে হচ্ছিল আর কিছুক্ষণ পরে মরে যাব। বড় মেয়ে আমাকে ধরে রাখে। আর ছোট ছেলেটা মাথায় পানি দিতে থাকে। এর পর জানি না। জ্ঞান ফিরলে নিজেকে হাসপাতালে দেখি। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া কুড়িগ্রামের এই পরিবারটির ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেন জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন।
×