ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পঞ্চগড়ে মরিচের ফলন কম হলেও চড়া দাম পাচ্ছেন কৃষক

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ৪ জুলাই ২০১৮

পঞ্চগড়ে মরিচের ফলন কম হলেও চড়া দাম পাচ্ছেন কৃষক

স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড় ॥ পঞ্চগড়ে এবার আগাম বর্ষণ আর রোগ বালাইয়ের কারণে মরিচের ফলন কিছুটা কম হয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় মরিচের দাম দ্বিগুণ পাওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন চাষীরা। এছাড়া অন্য ফসলের তুলনায় কম খরচে বেশি মুনাফা হওয়ায় চাষীরা দারুণ খুশি। চলতি মৌসুমে পঞ্চগড়ের পাঁচ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় চাষ হয়েছে গ্রীষ্মকালীন মরিচ। সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে আটোয়ারী উপজেলায়। এখানকার উৎপাদিত মরিচ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। এই সময়টাতে গ্রীষ্মকালীন মরিচ বাজারে উঠেছে। অতিবৃষ্টির কারণে মরিচের ক্ষেত পানিতে ডুবে গাছ মরে যাওয়ায় জেলার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। অনবরত বৃষ্টিতে গাছ থেকে তোলা কাঁচা মরিচ ঠিকমতো শুকাতেও পারছেন না। গত কিছুদিন আগেও যে মাঠ লাল রঙে রঙিন হয়ে উঠেছিল সেই মাঠে এখন শুধু মরা গাছ। শুরুতে নিজেদের প্রয়োজনে মরিচ চাষ করলেও এখন পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে মরিচ চাষ শুরু হয়েছে। অন্য ফসলের তুলনায় অল্প খরচে বেশি মুনাফা পাওয়ায় দিন দিন মরিচ চাষ বাড়ছে। জেলায় এবার স্থানীয় জাতের মরিচ ছাড়াও উচ্চফলনশীল হাইব্রিড জাতের বাঁশগাইয়া, মল্লিকা, বিন্দু, হট মাস্টার, সুরক্ষাসহ বিভিন্ন জাতের মরিচের ব্যাপক চাষ হয়েছে। উঁচু যেসব জমিতে অন্য ফসল ভাল হয় না সেসব জমিতেই বেশি মরিচ চাষ করা হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। পাঁচটি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মরিচ চাষ হয়েছে আটোয়ারী উপজেলায়। শুধুমাত্র আটোয়ারী উপজেলাতেই মরিচ চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে। তবে এবার বৈশাখ জ্যৈষ্ঠেই ভারি বর্ষণ, শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় মরিচের বেশ ক্ষতি হয়েছে। তাই গত বছরের তুলনায় মরিচের ফলন কম হয়েছে। গতবছর প্রতিবিঘা জমিতে মরিচ (শুকনো) উৎপাদন হয়েছিল ১০ থেকে ১২ মণ। এবার তা কমে দাঁড়িয়েছে ৭ থেকে ৯ মণে। তবে বাজারে মরিচের দাম ভাল থাকায় গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ দাম পাচ্ছেন কৃষকরা। গতবছর শুকনো মরিচ ২৫শ’ টাকা মণ বিক্রি হয়েছিল আর এবার শুকনো মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪৫শ’ টাকা মণ দরে। তাই মরিচের উৎপাদন কম হলেও লাভ পাচ্ছেন চাষীরা। মরিচচাষীরা জানান, প্রতিবিঘা জমিতে মরিচ চাষ করতে সার, বীজ, কীটনাশক ও মজুরি সব মিলে খরচ হয় ১০ হাজার টাকা আর মরিচ বিক্রি করে খরচ বাদে লাভ আসে ৪০ হাজার টাকার মতো। যা অন্য কোন ফসল চাষ করে অল্প খরচে এত মুনাফা সম্ভব নয়। আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর এলাকার কৃষক কলিম উদ্দিন জানান, শিলা বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার কারণে মরিচের ফলন কম হয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ দাম পাচ্ছি। তাই আমাদের লাভ হচ্ছে। একই এলাকার কৃষক লাড়াই মিয়া জানান, এবার ফলন কম হলেও আমার এক বিঘা জমি থেকে ৫০ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি। যার মধ্যে ৪০ হাজার টাকাই লাভ। অন্য কোন ফসলে এ রকম লাভ হয় না। তাই গ্রীষ্মকালে আমরা অন্য ফসল কমিয়ে দিয়ে মরিচ চাষ করি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোঃ শামছুল হক জানান, পঞ্চগড় জেলার বিভিন্ন এলাকায় এখন বাণিজ্যিকভাবে মরিচ চাষ হচ্ছে। এবার জেলায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে মরিচ চাষাবাদ হয়েছে। শিলা বৃষ্টি ও গ্রীষ্মকালেই ভারি বর্ষণে পঞ্চগড়ে মরিচের চাষাবাদে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। তবে বাজার দর ভাল থাকায় কৃষকরা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ দাম পাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
×