ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কচুরিপানার হস্তশিল্প ও নারীদের প্রশিক্ষণের টাকা সমবায় কর্মকর্তার পকেটে

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ২ জুলাই ২০১৮

  কচুরিপানার হস্তশিল্প ও নারীদের প্রশিক্ষণের টাকা সমবায় কর্মকর্তার পকেটে

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ ঝিকরগাছা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা রনজিত দাশের বিরুদ্ধে এডিবির প্রকল্পের অর্থ আত্মসাত, দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বুধবার যশোর জেলা প্রশাসকের সাপ্তাহিক গণশুনানিতে দুইটি পৃথক অভিযোগ করা হয়। ঝিকরগাছার গঙ্গানন্দপুর সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমিতি লিমিটেডের সভাপতি সাইদ হাফিজ এক অভিযোগে জানান, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কচুরিপানা দিয়ে হস্তশিল্প তৈরির জন্য তাকে এডিবির একটি প্রকল্পের কাজ দেয়া হয়। এই প্রকল্পে এডিবি এক লক্ষ টাকা বাজেট নির্ধারণ করে প্রকল্পের সভাপতি রনজিত দাশকে দেন। কিন্তু রনজিত দাশ প্রকল্পে ৪০ হাজার টাকা খরচ করেন। কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য বাকি টাকা চাইতে গেলে ওই টাকা খরচ হয়ে গেছে বলে জানানো হয়। এ সময় খরচের খাত জানতে চাইলে ওই উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা তার ওপরে রেগে যান এবং বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি প্রদর্শন করেন। এছাড়া রনজিত দাশ ‘গঙ্গানন্দপুর সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি’র রেজিস্ট্রেশনের সময় জেলা সমবায় কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে ১৫ হাজার টাকা নেন। অথচ সমবায় রেজিস্ট্রেশনের জন্য সরকারি মাত্র ৩শ’ ৪৫ টাকা। এসব বিষয় পরে সাইদ হাফিজ ও তার সমবায় সমিতির সদস্যদের মধ্যে জানাজানি হয়ে গেলে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা তাদের নতুন কোন প্রকল্প থেকে বরাদ্দ দেয়া হবে না বলে হুমকি দেন। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় গত বৃহস্পতিবার ওই কর্মকর্তার লেলিয়ে দেয়া অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা সাইদ হাফিজকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে এবং এসব নিয়ে আর মাথা ঘামাতে নিষেধ করে। অপর এক অভিযোগে গঙ্গানন্দপুর নারী উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য এলিজা শিরিন জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়ালকে জানান, প্রশিক্ষণ না দিয়েই প্রশিক্ষণ হয়েছে দেখিয়ে ‘উন্নত জাতের গাভী পালনের মাধ্যমে সুবিধা বঞ্চিত মহিলাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন’ প্রকল্প অর্থ থেকে সরিয়েছেন উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা রনজিত দাশ। এছাড়া ৬টি প্রশিক্ষণে সরকারি বরাদ্দের ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে ব্যয় করেছেন ৬০ হাজার টাকা। বাকি অর্থ নিজে পকেটস্থ করেছেন। এছাড়া প্রশিক্ষণ না দিয়েই সদস্যদের প্রশিক্ষণের ব্লাঙ্ক ভাউচারে স্বাক্ষরের জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। এলিজা শিরিন স্বাক্ষর করতে না চাইলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। গণশুনানিতে এসব বিষয় জানানো হলে জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল অভিযোগ তদন্তের জন্য ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামকে নির্দেশ দেন। অভিযোগ প্রসঙ্গে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা রনজিত দাশ বলেন, ‘ছেলেটি বেশি বোঝে। এছাড়া পূর্বের ডিসি মহোদয় তাকে একটু বেশি স্নেহ করতেন বলে সে এ দফতর ও দফতরে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে কথা বলে বেড়াচ্ছে। অফিসারদের থেকে এত বেশি বুঝতে হয় ? এখন তাকে পাত্তা দেয়া হচ্ছে না এবং সমিতির গবর্নিং বডি সভাপতি পদ থেকে তাকে বাদ দিতে চাচ্ছে বলে সে এসব করে বেড়াচ্ছে।’ প্রকল্পের টাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটি এডিবির আওতাধীন কাজ। এ বিষয়ে ইউএনও জড়িত আছেন।’ তবে ‘এ বিষয়ে জড়িত’ থাকা প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানান, ‘প্রকল্পটি এডিবির হওয়ায় উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা একথা বলতে পারেন।’ তিনি বলেন, ‘সমিতি থেকে ওনারা আমার কাছে এসেছিলেন। আমরা বিষয়টি শুনানির মাধ্যমে তদন্ত করে দেখব। অসঙ্গতি ধরা পড়লে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা নেয়ার বিষয়ে জেলা সমবায় কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হক জানান, ‘এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে তারা আমাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। আগামী রবিবার ঢাকা থেকে কর্মকর্তা আসবেন। আমরা ওখানে গিয়ে সরেজমিনে বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করার পর ব্যবস্থা নেব।
×