ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কুখ্যাত দুই যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়াতেই সুমন জাহিদ খুন?

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ২৫ জুন ২০১৮

 কুখ্যাত দুই যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়াতেই সুমন জাহিদ খুন?

শংকর কুমার দে ॥ আন্তর্জাতিক ট্রাইবুন্যালে যুদ্ধাপরাধের মামলায় বিদেশে পলাতক যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে সাক্ষী হওয়ার কারণেই কি শহীদ বুদ্ধিজীবী সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের ছেলে সুমন জাহিদ খুন হয়েছেন? তার রহস্যময় মৃত্যুর দীর্ঘ দশ দিন অতিবাহিত হলেও তদন্তে কোন অগ্রগতি নেই। তিনি কি খুন হয়েছেন নাকি নিছক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ঘটেছে তার কোন সন্তোষজনক উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না তদন্ত কর্তৃপক্ষ। যুদ্ধাপরাধ মামলায় আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে চৌধুরী মঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়ার পর থেকেই বিভিন্ন ধরনের হুমকির সম্মুখীন হয়েছিলেন সুমন জাহিদ। যুদ্ধাপরাধের বিচারে যুক্তরাজ্যে পলাতক চৌধুরী মঈনুদ্দীন ও যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক আশরাফুজ্জামান উভয়কেই শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছিল। এসব হুমকির বিষয় পুলিশকেও জানিয়েছিলেন তিনি। এ কারণেই সুমন জাহিদের মৃত্যুর ঘটনা ক্রমেই রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে। তদন্তের সঙ্গে পুলিশ সূত্রে এ খবর জানা গেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধের মামলায় সাক্ষী দেয়ার ঘটনায় যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানের সাজা মৃত্যুদ-াদেশ হওয়ার পর সুমন জাহিদের কাছে হুমকি আসতে শুরু করে। ফোন, ফেসবুকে আসা হুমকির কারণে পুরো পরিবার আতঙ্কে থাকত। সন্তানদের নিয়ে আতঙ্ক ছিল তার পরিবারের। সন্তানরা বাড়ির বাইরে কিছু বেশি সময় কাটালেই সুমন জাহিদের আতঙ্ক বেড়ে যেত। খুব বেশি টেনশন করতেন তিনি। যুদ্ধাপরাধীরা তার ছেলেদের কোন ক্ষতি করে কিনা এই আতঙ্ক উদ্বেগের মধ্যে থাকতেন সুমন জাহিদ। তদন্তে এ ধরনের তথ্য বের হয়ে আসছে। গত ১৪ জুন সকালে খিলগাঁওয়ের বাগিচা এলাকায় রেললাইনের পাশ থেকে সুমন জাহিদের (৫২) দ্বিখন্ডিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরে কমলাপুর রেলওয়ে থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়। ময়নাতদন্তে প্রাথমিকভাবে ট্রেনে কাটা পড়ে সুমন জাহিদের মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানান। তবে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনের জন্য ভিসেরা রিপোর্ট হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ। সুমন জাহিদের খন্ডিত লাশ উদ্ধারের পর তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের সামনে কতগুলো প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সুমন জাহিদের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ট্রেনে কাটা পড়লে শরীর থেকে মাথা এভাবে বিচ্ছিন্ন হতো না। গলা ছিন্নভিন্ন হয়ে যেত। তার গলায় ধারালো কোন অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধী, জঙ্গী গোষ্ঠী ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্র আবারও তৎপর হয়ে সুমন জাহিদকে খুন করেছে? সুমন জাহিদের নিহত হওয়ার ঘটনাটি সুপরিকল্পিত হত্যাকান্ড। কারা, কীভাবে এবং কেন এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে তার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, তার পরিবারসহ বিভিন্ন মহল। নিহত সুমন জাহিদের পরিবারের দাবি, যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়া ও তাদের বিরুদ্ধে লেখালেখির কারণে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। পরিবারের অভিযোগ, নানামুখী হুমকির কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুলিশী পাহারার ব্যবস্থা করেছিল। পুলিশ নিয়মিত খোঁজ-খবর নিত। মৃত্যুর কিছুদিন আগেও সুমন জাহিদকে আর্মসের লাইসেন্স নিতে বলা হয়েছিল। তখন তিনি আর্মসের লাইসেন্স নেননি। পরিবারের দাবি, সুমন জাহিদ কিছুতেই ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যাবেন বা আত্মহত্যা করবেন এমনটা হতেই পারে না। কারণ সুমন জাহিদের পরিবারে এমন কোন অশান্তি ছিল না, যে কারণে তিনি আত্মহত্যা করবেন। এটা হতে পারে না। এগুলো ষড়যন্ত্র। এটা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। আগে হত্যা করে পরে তাকে রেল লাইনে ফেলে রেখে আত্মহত্যার নাটক সাজানো হচ্ছে বলে পরিবারের দাবি।
×