ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় আনারস আম লিচু যাচ্ছে ঢাকার বাজারে

মধু মাসের তাজা রসালো ফলে রাঙ্গামাটির বাজার সয়লাব

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ৪ জুন ২০১৮

  মধু মাসের তাজা রসালো ফলে রাঙ্গামাটির বাজার সয়লাব

নিজস্ব সংবাদদাতা, রাঙ্গামাটি ॥ বাংলা সালের দ্বিতীয় মাস জ্যৈষ্ঠ । আবহমান কাল থেকেই এই মাস বাঙালীদের নিকট মধুমাস হিসেবে পরিচিত। আমাদের দেশে আম-কাঁঠাল-লিচু-আনারসসহ হরেক রকমের রসালো ফল এই মাস পাকে। তাই এই মাসটি বাংলার মানুষের নিকট মধুমাস হিসেবে প্রিয়। পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির পথে ঘাটে, নাদীর ঘাটে, হাট-বাজারগুলো এখন আম-কাঁঠাল, লিচু ও আনারসের মৌ-মৌ সুগন্ধে মন মাতিয়ে তুলছে। প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা কাপ্তাই লেকে দিয়ে বোট ভরে বাগান থেকে চাষীরা তাদের উৎপাদিত আম-কাঁঠাল, লিচু ও আনারস বাজারে নিয়ে আসছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর আনারস, আম-কাঁঠাল এবং লিচুর ফলন ভাল হওয়ায় এই সব টসটসে রসালো ফলগুলো এখন স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে দেশের অন্য জেলাগুলোতে বাসে পিঠে ও ট্রাকে করে প্রতিদিন টনে টনে চলে গিয়ে সারা ধেমের চাহিদা মেঠাছে। পাহাড়ী অঞ্চলের মৌসুমি ফলের কদরও আলাদা। এই সব ফল স্বাদ ও গন্ধ আলাদা। রাঙ্গামাটিতে আনারসের যে স্বাদ ঢাকায় এর স্বাদ উল্টো। কারণ হিসেবে জানা গেছে, পাকা ফল মজলে স্বাদ হয় বেশি। রাঙ্গামাটির ফল ফরমালিন মুক্ত হওয়ায় এসব মৌসুমি ফলের চাহিদা রয়েছে বেশি। পাইকারি ব্যবসায়ীরা পাহাড়ের আনারস, লিচু, আম-কাঁঠাল বাজারজাত করার জন্য প্রতিযোগিতা দিয়ে বাগান মালিক থেকে ক্রয় করে নিয়ে যায়। ব্যবসায়ীরা ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার আড়তে সরবরাহ করছে। পাইকারের হাত ঘুরে এসব ফল চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। এ বছর কালবৈশাখী কম হওয়ায় রাঙ্গামাটিতে মৌসুমি ফলের ফলন বেশি হয়েছে। শহরের ট্রাক টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন অর্ধশত এই সব ফল বোঝাই গাড়ি দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। তবে প্রচুর উৎপাদনের পরও কাঁঠাল বাগান হতে বাজারে নিয়ে আসার জন্য বাগান চাষী পরিবহন খরচ ও বিভিন্ন ধরনের টোল এবং চাঁদা পরিশোধসহ অন্যান্য খরচের কারণে এই সব ফলের পিছনে যে ব্যয় হচ্ছে সে হিসেবে তারা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না বলে ভুক্তভোগী বাগান মালিক লক্ষ্মী চাকমা জানায়। কাপ্তাই হ্রদের পানি বাড়ানো ও কমানোর ক্ষেত্রে সঠিক পন্থা অবলম্বন না করায় পাহাড়ের বিভিন্ন ফসলাদি উৎপাদন করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলে ভুক্তভোগী চাষীরা জানায়। কয়েক বছর আগেও পার্বত্যাঞ্চলে রাজশাহীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে লিচু আনা হতো এখন চায়না থ্রি এখানকার চাহিদা মিঠিয়ে ঢাকা চট্টগ্রামের বাজার দখল করে নিয়েছে। রাঙ্গামাটির বাজারে প্রতিশত চায়না থ্রি লিচু বিক্রয় হচ্ছে ২ থেকে আড়াইশ টাকায়। প্রতিদিন রাঙ্গামাটির বিভিন্ন উপজেলায় উৎপাদিত লিচু, আনারস ও কাঁঠাল কৃষকরা নৌকা বোটে করে রাঙ্গামাটি শহরের সমতাঘাট, তবলছড়ি, পৌরা ট্রাক টার্মিনাল এবং রিজার্ভ বাজার নিয়ে আসে। সেখান বসে পাইকারি বাজার। খুচরা বিক্রেতা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ক্রয় করে এই সব ফল জেলার বাইরে নিয়ে যায়। প্রতি মঙ্গলবার, বুধবার ও শনিবার সমতাঘাট ও পৌর ট্রাক টারমিনালে পাশে কাপ্তাই হ্রদের স্বচ্ছ পানিতে বসে ভাসমান ফলের বিশাল বাজার। সেখানে প্রতিদিন কোটি টাকার ফল বেচাকেন হয়ে থাকে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে মে মাস পর্যন্ত ৩৩ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে আমের ফলন হয়েছে ২৩ হাজার ৪১০ মেট্রিক টন। লিচুর ফলন হয়েছে ১৩ হাজার ২৮৬ টন। অনুরূপভাবে ১৭৯৭ হেক্টর জমিতে ৫০ হাজার তিনশ পঞ্চাশ মেট্রিক টন আনারস উৎপাদন হয়েছে। ওই সময়ে মধ্যে ৪ হাজার ১৮২ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৫ হাজার ৪৮০ মেট্রিক টন কাঁঠাল উৎপাদন হয়েছে। রাঙ্গামাটি সদরের কুতুকছড়ি ইউনিয়নের তৈমুদং এলাকার আনারস চাষী অমর আলো চাকমা জানান গতবারের তুলনায় এবার আনারসের দামও ভাল পাওয়া যাচ্ছে। গত বছর প্রতিটি আনারস বিক্রয় করেছি ৭-৮ টাকা দরে। এবার একটি বড় সাইজের আনারস ১১-১৩ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হচ্ছে। শহরের বনরুপা বাজারে কাঁঠাল বিক্রি করতে আসা গুল্লো চাকমা ও সুচিত্র চাকমা বলেন, এবার কাঁঠালের ভাল ফলন হয়েছে। গত বছর তো পাহাড় ধসের কারণে আমাদের অনেক কাঁঠাল নষ্ট হয়েছে। সড়ক যোগ বন্ধ থাকায় কাঁচা ফল পচে নষ্ট হয়েছে। এবার আবহাওয়া ভাল আছে। আশা করছি ভাল ব্যবসা হবে। এই প্রসঙ্গে রাঙ্গামাটির কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক বলেন, এবার সবচেয়ে ফলন ভাল হয়েছে আনারসের। রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর ও বাঘাইছড়িতে আনারসের ফলন ভাল হয়ে থাকে। তিনি বলেন, তবে শিলাবৃষ্টির কারণে তরমুজ ও আমের ফলন কম হয়েছে। তিনি বলেন, এখানকার উৎপাদিত কোন ফলে ফরমালিন দেয়া হয় না। যার ফলে এখানকার ফলে চাহিদা বেশি।
×