ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নাজনীন বেগম

নিরাপদ মাতৃত্ব মা ও শিশুর সুরক্ষা

প্রকাশিত: ০৭:৩৩, ১ জুন ২০১৮

নিরাপদ মাতৃত্ব মা ও শিশুর সুরক্ষা

২৮ মে ছিল নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। দশ মাস দশ দিন জঠরে ধারণ করে একজন মা যখন তার সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখান তার চেয়ে সুখকর মুহূর্ত অন্য কিছু হতে পারে না। সেটা সন্তান কিংবা মা দু’জনেরই জীবনে এক মহিমান্বিত ক্ষণ। এমন স্মরণীয় সময় যদি বিপরীত কোন অবস্থার মুখোমুখি হয়ে সঙ্কটের আবর্তে পড়ে তাহলে সেটা কখনই কারও জন্য কাক্সিক্ষত অবস্থা হতে পারে না। এই অনাকাক্সিক্ষত প্রসূতি সমস্যা প্রতিরোধ করা অসম্ভব কিছুই নয়। চিরায়ত মাতৃমহিমার আকাক্সক্ষা প্রত্যেক কন্যা সন্তানের স্বপ্নে, কল্পনায় এমনকি বাস্তবের কষাঘাতেও বিরাজ করতে থাকে। মা হওয়ার সুপ্ত আকাক্সক্ষা অতি বাল্যকাল থেকে মেয়েদের অনুভব-অনুভূতিতে নাড়া দেয়। এ যেন এক চিরায়ত বোধ-প্রত্যাশায় শুধু নয় শরীরের প্রতিটি অস্থিমজ্জায় এর আবেগ আর আমেজ ছড়ানো থাকে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুভব আর অভিব্যক্তি ক্রমান্বয়ে বিকাশ লাভ করে পূর্ণ পরিণতিতে রূপ নেয় যখন সত্যি সত্যিই সন্তান তার গর্ভে নিজের অবস্থান জানান দেয়। সেই ছোট বেলা থেকে পুতুল খেলার মধ্য দিয়ে মায়ের মমতায় নিজেকে রাঙিয়ে দেয়া কোন কন্যাশিশু বাস্তব জীবনের সব চাইতে মূল্যবান সময়কেই নিজের অজান্তেই স্তুতি কিংবা অর্ঘ্য নিবেদন করে। আর এই বহুকাক্সিক্ষত মাতৃত্ব যদি নিরাপদ বা নির্বিঘœ না হয় মা যদি সন্তানসহ এই স্মরণীয় মুহূর্তটিতে বিপন্ন অবস্থার শিকার হয় তাহলে এর চেয়ে দুঃখজনক অবস্থা আর কিছু হতে পারে না। তাই শুধু মা হওয়াই নয়, নিরাপদ মাতৃত্বও এক্ষেত্রে অনেক বেশি জরুরী। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের যুগে প্রসূতির যথার্থ পরিচর্যা একেবারে হাতের মুঠোয়। শুধু তাই নয়, সমস্ত বিপদ সঙ্কট সামলানো এখন আর অসম্ভব কিছু নয়। এখানে সবচাইতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে ছোট্ট পরিবারটিকে। সমাজের এই ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানটি একজন কন্যা সন্তানকে যেভাবে সুরক্ষা দেবে নিরাপদ মাতৃত্বও সেই পর্যায়ক্রমিক ধারায় গড়ে উঠবে। এই কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, অকাল আর অনিরাপদ মাতৃত্ব এক অবিচ্ছিন্ন সুতায় গাঁথা যাকে অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে ঠেকাতে না পারলে সমূহ বিপদকে মোকাবেলা করা কঠিন হয়ে যাবে। এই কথা কারও অজানা নয় যে, এক সময় প্রসূতি এবং শিশু মৃত্যুহার অনেক বেশি ছিল। নিত্য নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, চিকিৎসা পদ্ধতির আধুনিকায়ন গর্ভকালীন মায়েদের যে পরিমাণ স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করছে যাতে প্রসূতি এবং তার সদ্যজাত সন্তান নিরাপদ আর নিশ্চিন্তে পৃথিবীতে আসতে পারে। শুধুমাত্র স্বাস্থ্য কেন্দ্র কিংবা চিকিৎসা পদ্ধতির আধুনিকায়নই নয় ব্যক্তি সচেতনতা এবং দায়বদ্ধতাকে এড়িয়ে গেলে সমস্যা। যে তিমির সেই তিমিরেই থেকে যাবে। অর্থাৎ কন্যা সন্তানের বিয়ের বয়স এই ক্ষেত্রে সব থেকে জরুরী। সবার আগে বাল্য বিয়েকে ঠেকাতে হবে। শুধু তাই নয় অকাল মাতৃত্বকেও কঠিন কঠোর স্বরে না বলাটাই সঙ্গত। অল্প বয়সে অপরিণত শরীর ও মনে কোনভাবেই এমন গুরুভার চাপানো যাবে না যাতে মা ও সন্তান দু’জনেই মারাত্মক পরিণতির শিকার হতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে নির্দিষ্ট করা আছে একজন মেয়ের মা হওয়ার সময় একজন অবোধ বালিকা কিংবা উদীয়মান কিশোরী যখন নিজেই নিজেকে সামলাতে পারে না তখন তার শরীরের প্রতিটি রক্তবিন্দু দিয়ে অন্য একজনকে জঠরে লালন করা কিভাবে সম্ভব? সুতরাং এই বিশেষ দিকটা নজরে আনা সংশ্লিষ্ট সবার দায়বদ্ধতা। এর পরও আছে যথার্থ সময়ে গর্ভকালীন অবস্থায় মা ও তার শিশুর পরিচর্যা একজন সচেতন এবং সুস্থ মাই পারেন একজন স্বাস্থ্যকর শিশু উপহার দিতে। প্রসূতিকে নিজেই সাবধান হতে হবে যাতে সে এবং তার গর্ভজাত সন্তান সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় মায়ের নিরাপদ আশ্রয়ে বড় হতে পারে। প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্য থেকে শুরু করে অতিরিক্ত কায়িক শ্রম পরিহার করা সঙ্গে পর্যাপ্ত ঘুম এবং হাঁটা-চলাও নিশ্চিত করা জরুরী। সব থেকে বেশি প্রয়োজন একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সর্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে থাকা। প্রসূতি নিজেই বুঝতে পারে তার শরীরের ভেতরে একটু একটু করে বেড়ে ওঠা সন্তানের গতিবিধি। একজন সচেতন মায়ের সে ব্যাপারে অত্যন্ত কড়া নজর রাখা আবশ্যক। এক্ষেত্রে সামান্য অনিয়ম দেখা দিলে জরুরী ভিত্তিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রসবকালীন ব্যথা এবং গর্ভে শিশুর অবস্থানও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সবদিক সুরক্ষিত রেখে বিধাতার অশেষ কৃপায় সন্তান যখন ভূমিষ্ঠ হয় সে আনন্দ যেমন মায়ের একইভাবে সমাজেরও। কারণ একজন সুস্থ স্বাভাবিক শিশু দেশের ভাবী প্রজন্ম। তাকে শুধু পৃথিবীর আলো দেখানোই নয় সার্বিক তত্ত্বাবধান আর পরিচর্যায় যোগ্য নাগরিক হিসেবে দেশের ভবিষ্যত নির্মাতার কাতারেও তাকে নিয়ে আসতে হবে। বিশ্ব মাতৃত্ব দিবসে এই হোক সংশ্লিষ্টদের অঙ্গীকার।
×