জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে ১০ মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছে। এসব বন্দুকযুদ্ধের সময় কয়েক পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে দেশীয় অস্ত্র, গোলাবারুদ, গাঁজা, ফেনসিডিল ও ইয়াবাসহ বিপুল মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে যশোরে দুজন, কুষ্টিয়ায় দুজন, কুমিল্লায় দুজন, সাতক্ষীরা, ঠাকুরগাঁও, বরগুনা ও ময়মনসিংহে একজন করে মাদক বিক্রেতা রয়েছে। সোমবার রাত ও মঙ্গলবার ভোরে বন্দুকযুদ্ধে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের পাঠানো।
মঙ্গলবার ভোরে যশোর শহরের চাঁচড়া রায়পাড়া এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের কথিত গোলাগুলিতে দুজন নিহত হয়েছে। নিহত দুই মাদক ব্যবসায়ী হলো যশোর শহরের রায়পাড়া এলাকার মানিক ও ম-লগাতি এলাকার আসর আলী। পুলিশ নিহত দুজনের লাশ উদ্ধার করে যশোর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে। একইসঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র, গুলি ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি কেএম আজমল হুদা জানান, মঙ্গলবার ভোরে শহরের চাঁচড়া রায়পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকায় দু’দল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দুজনকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে আসে। হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
ওসি আজমল হুদা আরও জানান, নিহত মানিক ও আসর আলী চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৬শ’ পিস ইয়াবা, দুটি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি ও ৫টি গুলির খোসা উদ্ধার করেছে।
কুষ্টিয়া ॥ একদল মাদক বিক্রেতা দৌলতপুরের বোয়ালিয়া ইউনিয়নের শেহালা মাঠে মাদক ক্রয় বিক্রয় করছে এমন সংবাদ পেয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশের টহল দল মঙ্গলবার ভোর ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে অভিযান চালায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক বিক্রেতারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। জবাবে পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুজন মাদক বিক্রেতা গুলিবিদ্ধ হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে দৌলতপুর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পুলিশের এসআই ফিরোজ আলম, এসআই আব্দুর রাজ্জাক ও কনস্টেবল সজিত কুমার আহত হয়েছেন বলে পুলিশ দাবি করেছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশীয় তৈরি বন্দুক, ৫ রাউন্ড গুলি, একটি পিস্তলের ম্যাগজিন ও ২৫০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা ও ছিনতাইসহ ৮টি করে মামলা রয়েছে। নিহতরা রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের সীমান্ত সংলগ্ন মুন্সীগঞ্জ গ্রামের রেজাউল ইসলামের ছেলে মুকাদ্দেস আলী ও প্রাগপুর বাজারের মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে ফজলুর রহমান ওরফে টাইটেল।
কুমিল্লা ॥ কুমিল্লায় মাদকবিরোধী অভিযান চলাকালে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুলিশের বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে লিটন ওরফে কানা লিটন (৪৩) এবং বাতেন (৩৪) নামের ২ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে মুরাদনগরে গুঞ্জর এলাকায় গোমতী প্রতিরক্ষা বাঁধের পাশে ভাই ভাই ব্রিক ফিল্ডের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত লিটন পৈয়াপাথর এলাকার আবদুস ছামাদের পুত্র, তার বিরুদ্ধে ৭টি মাদকের মামলা রয়েছে। বাতেন বাখরনগর গ্রামের সহিদ মিয়ার পুত্র। তার বিরুদ্ধে ৮টি মাদকের মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
অভিযানের সময় এসআই মোজাম্মেল, এএসআই রোকন ও এএসআই মাসুদুর রহমান আহত হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ঘটনাস্থল থেকে ১ রাউন্ড কার্তুজসহ একটি পাইপগান, ৪০০ বোতল ফেনসিডিল ও ১টি ছোরা উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মঙ্গলবার থানায় পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করেছে।
সাতক্ষীরা ॥ কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার নাথ জানান, সোমবার রাত সোয়া দুটায় তার কাছে খবর আসে যে দেয়াড়া ইউনিয়নের চিতলার মাঠে মাদকের ভাগাভাগি নিয়ে চোরাচালানিদের দুটি বিবদমান গ্রুপ গোলাগুলি করছে। খবর পেয়ে খোরদো পুলিশ ক্যাম্পের উপপরিদর্শক (এসআই) সিরাজুল ইসলাম একদল পুলিশ সদস্য নিয়ে সেখানে তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ তিন রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। ওসি আরও জানান, কিছুক্ষণ পর গোলাগুলি থেমে গেলে ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তার বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা জেলায় ১০টি মাদক মামলা রয়েছে। তিনি জানান, ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ানশুটার গান, ২ রাউন্ড গুলি ও ৭০ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে। নিহত আনিসুরের লাশ ময়না তদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও ॥ পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার ভোরে হরিপুরের শীতলপুর এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় মাদকব্যবসায়ীরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ সময় পুলিশও পাল্টাগুলি চালায়। উভয় পক্ষের গুলিবর্ষণের ফলে হারুন নামে এক মাদক ব্যবসায়ী ঘটনাস্থলে নিহত হয়। হরিপুর থানার অফিসার্স ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুস বলেন, নিহত হারুনের বিরুদ্ধে হরিপুর থানায় মাদকবিরোধী আইনে একাধিক মামলা রয়েছে।
বরগুনা ॥ পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার ভোরে বেতাগীর কাজিরাবাদ ইউনিয়নের কুমড়াখালী এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান চালায় র্যাব-৮ এর পটুয়াখালী ক্যা¤েপর সদস্যরা। এ সময় র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে ফিরোজ ও তার সহযোগীরা র্যাবকে উদ্দেশ করে গুলি ছোড়ে। পরে র্যাব আত্মরক্ষার জন্য পাল্টা গুলি চালায়। উভয়পক্ষের গুলিবিনিময় একপর্যায়ে পিছু হটে মাদক ব্যবসায়ীরা।
এ সময় ঘটনাস্থলে তল্লাশি করে ফিরোজের গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার করে র্যাব। ঘটনাস্থল থেকে আরও উদ্ধার করা হয় একটি রিভলবার, একটি শুটার গান, রিভলভারের দুই রাউন্ড গুলি ও বন্ধুকে দুই রাউন্ড গুলি। এ ঘটনায় বেতাগী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে র্যাব।
ভালুকা, ময়মনসিংহ ॥ জানা গেছে, সোমবার রাতে পাড়াগাঁও চটনপাড়া সামাদ ফকির বাড়ির পাকা রাস্তার পাশে কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী মাদকদব্য ভাগাভাগি করছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে ময়মনসিংহ ডিবির ওসি আশিকুর রহমান ও ভালুকা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাজহারুল ইসলাম নেতৃত্বে যৌথ অভিযানে গেলে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট, পাটকেল নিক্ষেপসহ এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ শুরু করে। এ সময় পুলিশ ও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোঁড়ে। উভয়ের পক্ষের গোলা গুলির মাঝে দক্ষিণ কাচিনা গ্রামের নূরুল ইসলামের ছেলে মিজানকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক করা হয়। চিকিৎসার জন্য দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হলে চিকিৎসক মিজানকে মৃত ঘোষণা করেন।
ভালুকা মডেল থানা পরিদর্শক (তদন্ত) মাজহারুল ইলসাম জানান, মিজানের বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র, ডাকাতিসহ ৯টি মামলা রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ১০০ গ্রাম হেরোইন, ১০০ পিস ইয়াবা, তিনটি গুলির খোসা, ১টি রামদা, ১টি চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: