ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যান্ত্রিক যুগে কৃষি খরচ কমছে অর্ধেক

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ২৬ মে ২০১৮

যান্ত্রিক যুগে কৃষি খরচ কমছে অর্ধেক

কৃষি উৎপাদনে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের আলাদা খ্যাতি রয়েছে। এখানকার জনগোষ্ঠীর চাহিদার চেয়ে অন্তত দেড়গুণ উদ্ধৃত্ত ফসল উৎপাদন করেন কৃষক। সেকেলের গবাদিপশু দিয়ে আবাদ করছেন এখনও। কাটা মাড়াই করছেন কৃষকরা নিজের হাতে। কিন্তু এবার আধুনিক যান্ত্রিক প্রযুক্তির ছোঁয়া পেয়েছেন। সাগরপাড়ের এই জনপদে প্রথম যান্ত্রিক যুগে পা রেখেছেন নীলগঞ্জের কৃষক। কম খরচে উৎপাদনে যাওয়ার এই পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে শুরুতেই। সেক্ষেত্রে মিনি কম্বাইন্ড হারভেস্টর পদ্ধতিতে দ্রুত ধানকাটাসহ একই সঙ্গে বস্তাবন্দী করার প্রযুক্তি তাদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। নীলগঞ্জ ইউনিয়নের গোলাম সরোয়ার বেপারী ও সাইফুল ইসলাম এ প্রযুক্তির প্রশিক্ষিত কৃষক। তারা নিজের জমি ছাড়াও চুক্তিভিত্তিক অন্যের জমির ধান কাটার কাজ করছেন আধুনিক প্রযুক্তিতে। গোলাম সরোয়ার জানান, তারা মোস্তফাপুর ও আমিরাবাদ গ্রামের চাষীদের নিয়ে ২০ সদস্যের একটি দল নিয়ে কৃষিক্লাব করেছেন। সমন্বিত পদ্ধতিতে তারা দীর্ঘদিন রবিশস্য থেকে শুরু করে উন্নত জাতের ধানের আবাদ করে আসছেন। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে তারা আগেই আবাদ, কাটা, মাড়াইয়ের কাজ করে আসছেন। কিন্তু এবার তারা মিনি কম্বাইন্ড হারভেস্টর পদ্ধতিতে ধান কাটছেন। একই সময়ে মেশিনে ধান কেটে বস্তাবন্দী করতে পারছেন। যেখানে তিনজন কৃষক এক বিঘা জমির ধান কাটতে অন্তত একদিন লাগছে। মজুরি লাগছে কমপক্ষে ১৫শ’ টাকা। আর মাড়াই করতে আরও ৩০ কেজি ধান মজুরি দিতে হয়। আর আধুনিক এই যান্ত্রিক পদ্ধতিতে এখন এক বিঘা জমির ধান কেটে বস্তাবন্দী করতে খরচ হয় সর্বোচ্চ আট শ’ টাকা। আর সময় লাগছে সর্বোচ্চ দেড় ঘন্টা। সরোয়ার জানালেন, একদিনে কমপক্ষে আট বিঘা জমির ধান কেটে বস্তাবন্দী করতে পারছেন। এটি এখন এখানকার কৃষকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মসিউর রহমান জানান, ইতোমধ্যে বিনামূল্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়) পূর্ব মোস্তফাপুর আইএপিপি কৃষক সমবায় সমিতি লিমিটেড কলাপাড়াকে একটি এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহের যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগ একটি মিনি কম্বাইন্ড হারভেস্টর মেশিন হলদিবাড়িয়া দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল সবজি চাষী দলকে দিয়েছে। একেকটি মেশিনের দাম প্রায় সাত লাখ টাকা। এ মেশিন চালানো, রক্ষণাবেক্ষণ করতে আবার কৃষককে সব ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। সরোয়ার ও সাইফুলকে এলাকার কৃষকরা এখন যান্ত্রিক কৃষক বলে ডাকেন। তারা জানালেন, এ মেশিনে নিজেদের ক্লাবের সকল সদস্যের জমির ফসল কাটার পরে অন্যের জমির ফসল কেটে নিজেরা লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। ফসল কেটে পাওয়া বাড়তি টাকা থেকে মেশিন রক্ষণাবেক্ষণ মেরামত ব্যয় ছাড়া বাকি টাকা ক্লাবের কৃষকরা সমানহারে পাবেন। সম্পুর্ণ বিনামূল্যে এ মেশিন পেয়ে কৃষকরা যতটা না খুশি তার চেয়ে বেশি খুশি কমমূল্যে কমসময়ে আধুনিক যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদনের সুযোগ পেয়ে। উৎপাদন খরচ কমবে প্রায় অর্ধেক। আর এর ফলে এ অঞ্চলে কৃষিতে নতুন বিপ্লবের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। -মেজবাহ উদ্দিন মাননু, কলাপাড়া থেকে
×