ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফাতেমা শিমু

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি বরফ গলছে এ্যান্টার্কটিকার

প্রকাশিত: ০৭:৪২, ২৫ মে ২০১৮

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি বরফ গলছে এ্যান্টার্কটিকার

গ্রীনল্যান্ডের বরফ গলছে। কমে আসছে বরফের আয়তন। সাগরে বরফের তটরেখা দূরে সরে যাচ্ছে। বরফ কমে আসার কারণে গ্রীনল্যান্ডবাসীদের পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হচ্ছে। তাদের জীবনধারা বদলে যাচ্ছে। দিন যত ছোট হয়ে আসে দিগন্ত ততই প্রসারিত হয়। আবার শীত বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে বরফ গলা শুরু হয়। বরফের তটরেখা দূরে সরে যেতে থাকে। জেগে ওঠে সাগর। কিন্তু গত কয়েক দশক ধরে গ্রীনল্যান্ডের বরফ দ্রুতহারে গলে চলেছে। সাগর সম্পূর্ণ বরফে ঢাকা পড়ে থাকছে বছরে এমন দিনের সংখ্যাও কমে আসছে। বরফ যেভাবে গলছে এবং বরফের তটরেখা প্রতিবছর যেভাবে একটু একটু করে দূরে সরে যাচ্ছে তাতে গ্রীনল্যান্ডের মানুষ আশঙ্কা করছে যে, বরফের এই তটরেখা চিরতরে দূরে সরে যাবে। ইউকে সেন্টার ফর পোলার অবজারভেশন অ্যান্ড মডেলিং ওই গবেষণা কর্ম সম্পন্ন করেছে। নেচার জিওসায়েন্সে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, পানির উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে ২০১০-২০১৬ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি সাগরের তলদেশে থাকা বরফগুলো ১,৪৬৩ বর্গ কিলোমিটার সঙ্কুুচিত হয়েছে; যার আয়তনের দিক দিয়ে গ্রেটার লন্ডনের সমান। ইউকে সেন্টার ফর পোলার অবজারভেশন অ্যান্ড মডেলিং মনে করছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ্যান্টার্কটিকার ওপর আগের চেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে। সে কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি নিয়ে বৈশ্বিক পর্যায়ে যে আভাস রয়েছে তা পাল্টে আগের চেয়ে আরও বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে। ওপর থেকে তাকালে দেখা যায়, উত্তর মেরু অঞ্চলে যেভাবে নাটকীয় হারে ভূপৃষ্ঠ ও সমুদ্রে বরফের ব্যাপ্তি কমেছে, সে মাত্রায় দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের বরফের পরিমাণে পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু নতুন গবেষণা বলছে, তাপমাত্রার সামান্য বৃদ্ধির কারণেও বরফ খ-ের তলানি থেকে প্রতি বছর পাঁচ মিটার করে ক্ষয় হতে পারে। এসব বরফ খ-ের কোনও কোনওটির অবস্থান পানি থেকে ২ কিলোমিটার তলদেশে। নতুন প্রতিবেদনটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গবেষক এ্যান্ড্রু শেপার্ড বলেন, ‘যা ঘটছে তাহলো এ্যান্টার্কটিকা অঞ্চলের তলদেশ গলে যাচ্ছে। আমরা এটা দেখতে পাই না, কারণ তা সাগরের তলদেশে ঘটছে। যে পরিবর্তন দেখা দিয়েছে, তাতে শিগগিরই এ্যান্টার্কটিকা অঞ্চলের সমুদ্রের পানির উচ্চতা গ্রিনল্যান্ডের পানির উচ্চতাকে ছাড়িয়ে যাবে।’ এমনকি পূর্ব এ্যান্টার্কটিকা, যেখানে ভূপষ্ঠে বরফের পরিমাণ বাড়ছে বলে অনেক বিজ্ঞানী দাবি করে থাকেন; সেখানেও পানির তলদেশে থাকা বরফকে বিবেচনায় নিলে হিমবাহ অপসৃতের হার বেশি। গবেষক শেপার্ড মনে করেন, ‘এতে লোকজনের উদ্বিগ্ন হওয়া প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ‘এখন আমরা বিস্তীর্ণ বরফ খ-ের সমগ্র প্রান্তের মানচিত্র তৈরি করেছি। সে অনুযায়ী বলা যায়, এ্যান্টার্কটিকার অবস্থার আংশিক অগ্রগতি হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। আমরা আরও কিছু জায়গায় হিমবাহ বেশি গতিতে অপসৃত হতে দেখেছি এবং অন্যত্র তা কম হতে দেখেছি। কমা-বাড়ার তুলনা করে নিট প্রভাব হিসেব করতে গেলে বলা যায় সর্বোপরি বিস্তীর্ণ বরফ খ-ের ক্ষয় হচ্ছে। লোকজন বলতে পারবে না কোনও কিছু বাদ দেওয়া হয়েছে। আমরা এবার সব জায়গা খেয়াল করেছি।’ এর মধ্য দিয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি নিয়ে দেওয়া আভাসগুলো পরিবর্তন করতে হবে। ১০ বছর আগে এক্ষেত্রে মুখ্য চালক ছিল গ্রীনল্যান্ড। খুব সম্প্রতি এ্যান্টার্কটিকার বরফ গলা নিয়ে আগের হিসেব পরিবর্তন করে তা বাড়িয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গঠিত আন্তঃরাষ্ট্রীয় প্যানেল। ২১০০ সাল পর্যন্ত সময়কে বিবেচনায় নিয়ে তাদের সর্বশেষ মূল্যায়নে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। আইপিসিসির পঞ্চম ওই মূল্যায়ন অনুযায়ী ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৫ থেকে ১০ ভাগ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গেলে সম্ভাব্য পরিণতি কী হতে পারে তা নিয়ে পূর্ববর্তী গবেষণাগুলোতে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল। ২০১৬ সালের এক গবেষণায় আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়, ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৬ ফুট বেড়ে যেতে পারে, এর কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ বন্যার কবলে পড়তে পারেন। ফ্লোরিডার ৬০ লাখ এবং লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্য ও ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের ১০ লাখ করে বাসিন্দা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রভাব নিয়ে ২০১৭ সালে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে হাজারো ঐতিহাসিক এলাকা তলিয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে, সমাধি ক্ষেত্র, মহাকাশ যান উৎক্ষেপণ কেন্দ্র এবং প্রাচীন বসতিগুলো। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে গাছপালা এবং প্রাণীর আবাসস্থলগুলো ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। হিমবাহের দ্রুত গতির গলনে সমুদ্রপৃষ্ঠের ধারণাতীত উচ্চতা বৃদ্ধির আশঙ্কায় হুমকি বেড়েছে উপকূলীয় শহর এবং দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর। গবেষণা দলের প্রধান হানেস কনরাড বলেন, বিজ্ঞানীরা যদি সাগরকে শীতলও রাখতে পারেন তারপরও হিমবাহকে স্থিতিশীল করা সম্ভব হবে না। বেশকিছু দ্বীপ হারিয়ে যাবে পৃথিবী থেকে। বড় বড় শহরগুলোর ঝুঁকি বৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন কনরাড। ‘পশ্চিম এ্যান্টার্কটিকার কারণে বিশ্বের সমুদ্রগুলোর পানির উচ্চতা আরও সাড়ে চার মিটার বেড়ে যেতে পারে। কনরাড বলেন, তাহলে ভেবে দেখুনতো, লন্ডনের মতো সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এ উচ্চতায় থাকা শহরগুলোর পরিণতি কী হবে।’ আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, তৃতীয় বর্ষ সূত্র : ন্যাশনাল জিওগ্রাফি
×