ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রাহকের টাকা নিয়ে উধাও ইনসিওরেন্স কোম্পানি

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ১৪ মে ২০১৮

গ্রাহকের টাকা নিয়ে  উধাও ইনসিওরেন্স  কোম্পানি

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর, ১৩ মে ॥ ভবিষ্যৎ সঞ্চয়, একক ও ক্ষুদ্র বীমার নামে সহস্রাধিক গ্রাহকের প্রায় এক কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে বায়রা লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানির কর্মকর্তারা। কোম্পানির অধিক মুনাফার ফাঁদে পড়ে সর্বশ্বান্ত হয়েছেন এলাকার এসব দরিদ্র মানুষ। এদের বেশিরভাগ গ্রাহকই নারী সদস্য। কোম্পানির রাজৈর শাখা ব্যবস্থাপক তুষার মজুমদার ইতালী চলে গেছেন। আর কোম্পানির ফরিদপুর বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মোঃ ইব্রাহীম কিছুই জানেন না বলে দায় এড়িয়ে গেছেন। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, বায়রা লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানি প্রধান কার্যালয় ঢাকা বিজয়নগর শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণির মাহতাব সেন্টারের ১০তলায়। ২০০৪ সালে জেলার রাজৈর উপজেলা বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি দোতলা ভবন ভাড়া নিয়ে কাজ শুরু করে বায়রা লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানি। এরপর ১০ বছর মেয়াদি দুই ২/৩ গুণ লাভের প্রলোভন দেখিয়ে গ্রামের দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতে শুরু করে। বীমার মেয়াদ শেষ হলে গ্রাহকরা টাকা ফেরত চাইলে ব্যবস্থাপকসহ কর্মকর্তারা নানা রকম টালবাহানা শুরু করে। গ্রাহকের তোপের মুখে পড়ে চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে রাতের আঁধারে অফিসে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যায় তারা। ভুক্তভোগী রাজৈরের মজুমদার কান্দি গ্রামের জব্বার সরদারের স্ত্রী বিলকিস বেগম ২০০৭ সালের কোম্পানির বীমাকারী সদস্য হন। প্রতি মাসে তিনি এক‘শ টাকা করে জমা দেন। তিনি এই পর্যন্ত ১২ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন। চলতি বছর তার কিস্তি শেষ হয়। তিনি একাধিকবার ইনসিওরেন্স কোম্পানির অফিসে গিয়েও তার টাকা তুলতে পারেননি। বর্তমানে কোম্পানির অফিসে কোন কর্মকর্তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতারণার শিকার রাজৈর নরারকান্দি গ্রামের লাকি বেগম বলেন, ‘কোম্পানির কর্মীরা আমাদের গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলতো আমাদের এখানে একটি সঞ্চরের বই করেন। ১০ বছর কেটে গেলে যে টাকা রাখবেন তার তিনগুণ পাবেন। আমরা সরকারী অনুমোদিত। সরকার আমাদের চালায়। তাই আপনাদের টাকা হারানোর কোন সুযোগ নেই। এসব বলায় আমরা বিশ^াস করে ওদের কথা মতো প্রতি মাসে টাকা জমা রাখি। এতোদিন ওরা প্রতি মাসেই আমাদের বাড়িতে এসে টাকা নিয়ে যেত। এখন বইয়ের মেয়াদ শেষ সব টাকা আমাদের দিতে হবে তাই এখন আর তাদের খবর নাই।’ রাজৈর বাসস্ট্যান্ড এলাকার পলাশ শেখ বলেন, ‘ইনসিওরেন্স কোম্পানিটি সোনালী ইসলামী ডিপিএস প্রকল্প ও একক ও ক্ষুদ্র বীমা প্রকল্পের নামে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে গ্রাহক তৈরি করে। গ্রাহকরা অধিক লভ্যাংশের আশা করে প্রতি মাসে নির্ধারিত টাকা জমা করতেন। কিন্তু এখন কোম্পানির কোন কর্মকর্তাকেই আর কোথাও দেখা যায় না। শুনেছি, যারা এখানে কর্মকর্তা হয়ে কাজ করতেন তারা সবাই বিদেশে পালিয়ে গেছে। বায়রা লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানীটির রাজৈর কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক তুষার মজুমদার। তার বাড়ি রাজৈর উপজেলা শহরে। তার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তুষার মজুমদারের স্ত্রী রিংকু মজুমদার বলেন, ‘আমার স্বামী অফিসকে সবকিছু ফরিদপুরের বিভাগীয় অফিসে বুঝিয়ে দিয়ে গেছে। সে আরও অফিসের কাছ থেকে ৬৩ হাজার টাকা বেতন পাবেন। যা আমার স্বামীকে তারা এখনও দেয়নি। আমার ভাইদের সহযোগিতায় আমার স্বামী এখন ইতালিতে আছেন। কোম্পানির গ্রাহকরা আমাদের খুব বিরক্ত করেই চলেছে। গ্রাহকের কোন টাকা আমার স্বামী নেন নি।’ কোম্পানির ফরিদপুর কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মোঃ ইব্রাহীমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে এ বিষয়ে কেন ফোন করেছেন? আমার এ বিষয়ে কিছু জানা নেই।’ অন্য প্রশ্ন তুলতেই তিনি ফোনটি কেটে দেন। কোম্পানির মাঠকর্মী আসমা বেগম ও রুমা বেগম বলেন, ‘আমরা এখানে স্থানীয়। কোম্পানির শুরু থেকে কাজ করছি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক তুষার মজুমদার কাউকে কিছু না জানিয়ে কেটে পড়েছেন। তার হাতেই সবকিছু ছিল। গ্রাহকের টাকা পয়সার বিষয়ে সেই সব জানে। বিভিন্ন সময় গ্রাহকের জন্য আমাদের অনেক হেনস্তার শিকার হতে হয়। আমরা গ্রাহকের টাকা ফেরত দেয়ার জন্য ফরিদপুর ও ঢাকা অফিসে একাধিকবার যোগাযোগ করেছি। কিন্তু কোন কিছুতেই কোন কাজ হচ্ছে না।’ এ ব্যাপারে রাজৈর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সোহানা নাসরিন বলেন, ‘আমি এখানে দুই মাস হলো এসেছি। ইনসিওরেন্স কোম্পানি গ্রাহকের টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে এ ধরনের বিষয়ে আমি এখনও কিছু শুনিনি বা আমার কাছে কোন ভুক্তভোগী অভিযোগও করেনি। তারপরেও বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিব।’
×