ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাখাইনে অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ দ্রুত চালাচ্ছে মিয়ানমার

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৩ মে ২০১৮

রাখাইনে অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ দ্রুত চালাচ্ছে মিয়ানমার

তৌহিদুর রহমান ॥ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বিতাড়নের পর রাখাইনে অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ প্রকল্প দ্রুত চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার। রাখাইনে মংডুর একটি গ্রাম ও কিয়াপফু শহরে দুইটি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। একই সঙ্গে সেখানে রোহিঙ্গাদের জন্যও বেশ কিছু গৃহনির্মাণ করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, গত বছর ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের মাধ্যমে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া শুরু করে মিয়ানমার। নির্যাতনের মুখে জীবন বাঁচাতে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এই ঘটনার পর প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পাঠানোর পাশাপাশি মিয়ানমার সরকার নতুন নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির কাজ শুরু করে। মংডুর একটি গ্রামে এখন নির্মিত হচ্ছে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন। এতে বিনিয়োগকারীদের জন্য নামমাত্র মূল্য ইজারা ও করমুক্ত সুবিধা রাখা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ভিটে ছাড়া করায় জমি অধিগ্রহণে তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে না। আর এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে রাখাইন রাজ্য সরকার। রাখাইন রাজ্যের মংডু ও কিয়াপফু শহরে চলছে এখন বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির কাজ। মংডুতে মিয়ানমার সরকার আর কিয়াপফুর অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ করছে চীন। মংডুর কানইন চ্যাঙ গ্রামে তৈরি হচ্ছে ‘মংডু স্পেশাল ইকোনমিক জোন’। বিশেষ এই অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়তে ‘নাফ রিভার গ্যালাক্সি ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট গ্রুপ’ নামে একটি কোম্পানির সঙ্গে রাখাইন রাজ্য সরকারের সমঝোতা স্মারক সই হয়। তারপর থেকে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেখানে নামমাত্র মূল্যে জমি ইজারা ও করমুক্ত সুবিধা রাখা হয়েছে বিনিয়োগকারীদের জন্য। রাখাইনের আরেক শহর কিয়াপফু। যেখানে চার হাজার একর জমির ওপর বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। সেখানকার তেল ও গ্যাস টার্মিনালেও অর্থায়ন করেছে চীনের পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন। জমি অধিগ্রহণকালে মূল্য পরিশোধ না করারও অভিযোগ রয়েছে। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের পর সেখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির পরিকল্পনা ছিল মিয়ানমারের। রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরিই ছিল মিয়ানমারের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। সে কারণে রাখাইন থেকে দফায় দফায় রোহিঙ্গা জোরপূর্বক বাংলাদেশে পাঠিয়ে এখন সেখানের বিভিন্ন স্থানে অর্থনৈতিক জোন তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া রাখাইনের বিভিন্ন এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কাজও শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশটি। সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা বিতাড়নের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়ে মিয়ানমার। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারকে নানাভাবে কোণঠাসা করে ফেলার চেষ্টা করেছে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে এত কিছুর পরেও মিয়ানমার তাদের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রাখাইনে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরিয়ে নেয়ার পর তাদের জন্য সাময়িক আশ্রয়স্থল হিসেবে বেশ কিছু গৃহ নির্মাণ কার্যক্রমও শুরু করেছে মিয়ানমার। রোহিঙ্গাদের পরিচয় যাচাই বাছাই করার জন্য এসব ঘরে রাখা হবে। তবে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে আইওয়াশ করার জন্য মিয়ানমার এসব গৃহ নির্মাণ করছে বলে জানা গেছে। এছাড়া রাখাইন রাজ্যের অন্তর্গত বঙ্গোপসাগরে নির্মাণের লক্ষ্যে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ কিয়া কিউ গভীর সমুদ্র বন্দরের ৭০ শতাংশ মালিকানা পেয়েছে চীন। প্রাথমিক চুক্তিতে চীনকে কিয়া কিউ নামে ওই বন্দরের ৮৫ শতাংশ মালিকানা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু মিয়ানমারের আপত্তির কারণে শেষ পর্যন্ত তা কমিয়ে ৭০ শতাংশ করা হয়। প্রায় ৭ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ওই গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ বিষয়ে চীনের সিআইটিআইসি গ্রুপের নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে আলোচনায় শেয়ার বাড়ানোর চেষ্টা করছে মিয়ানমার। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সিআইটিআইসি গ্রুপ কিয়া কিউ বন্দরের ৭০ শতাংশ মালিকানা পেয়েছে চীন। আলোচিত ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই গুরুত্বপূর্ণ বন্দরের মালিকানাও পেয়েছে মিয়ানমারের প্রতিবেশী চীন। চীন ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড বাস্তবায়নের মাধ্যমে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার দেশগুলোকে একটি বাণিজ্য ও অবকাঠামো নেটওয়ার্কে আনতে চায়। এর মাধ্যমে মূলত প্রাচীন সিল্ক রুট নতুন করে চালু হবে বলে মনে করা হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে জ্বালানি আমদানির জন্য মালাক্কা প্রণালী বাদ দিয়ে বিকল্প পথের জন্য বঙ্গোপসাগরের কিয়া কিউ বন্দরের মালিকানা পেতে অনেক আগে থেকেই আগ্রহী ছিল চীন। এখানে চীন তার দেশের জন্য তেল ও গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ করবে।
×