ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

টেলিগ্রাম যুগের নীরব সাক্ষী সাংবাদিক ইয়াছিন আলী

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ১২ মে ২০১৮

টেলিগ্রাম যুগের নীরব সাক্ষী সাংবাদিক ইয়াছিন আলী

টেলিগ্রাম যুগের নীরব সাক্ষী তিনি। পেশায় ছিলেন টাইপিস্ট। সেখান থেকে সাংবাদিক। পার করেছেন দীর্ঘ সময়। ৮০ বছর পেরিয়ে একাশিতে পা দিয়েছেন। শরীরে বার্ধক্যের ছাপ পড়েছে সামান্য। দেখে মনে হবে তরুণ। চলাফেরায় স্বাভাবিক। তবে স্পষ্ট দেখার জন্য চশমা ও শোনার জন্য হিয়ারিং এইড পড়তে হয়। তার নাম মোঃ ইয়াছিন আলী। বাড়ি বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার নশরতপুরের লক্ষ্মীপুর গ্রামে। স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে তিনি অতি পরিচিত মুখ। ৮০’র দশকের শুরু থেকে ২ হাজার সাল পর্যন্ত ইংরেজী দৈনিক বাংলাদেশ অবজারভারে (অধুনালুপ্ত) সাংবাদিকতা করেছেন। স্থানীয় পত্রিকাতেও কাজ করেছেন। এর আগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি। ১৯৭২ সালে টাইপিস্ট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। বগুড়ার সপ্তপদী মার্কেটের ভিতরে তিনি টাইপ মেশিন নিয়ে বসেন। ইংরেজীতে দ্রুত টাইপ ও দখল থাকায় ইংরেজী কাগজে কাজ পান। এই কাজে তাকে এগিয়ে দেয় সেদিনের টেলিগ্রাম। ওই সময়ে যারা সাংবাদিকতা করতেন দ্রুত খবর পাঠাতে অন্যতম অবলম্বন ছিল টেলিগ্রাম। যা লিখতে হতো ইংরেজীতে। টেলিগ্রামের ভাষা কিছুটা ভিন্ন। লিখতে পারদর্শী হতে হতো। একটু এদিক সেদিক হলে তা বুঝতে অসুবিধা হতো। অনেক সময় অর্থই পাল্টে যেত। এই কাজে ইয়াছিল আলী ছিলেন দক্ষ। ঘটনার একবারে নির্ভুল টেলিগ্রাম লিখতে পারতেন। ইংরেজী টাইপের গতিও ছিল বেশি। প্রতি মিনিটে ৬৫’র বেশি শব্দ। সাংবাদিকদের টেলিগ্রাম লিখে দিতে গিয়েই এক সময় তারও ইচ্ছা জাগে। বেছে নেন ইংরেজী দৈনিক। সূযোগ পান বাংলাদেশ অবজারভারে। বগুড়া প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতে থাকেন। সেদিনের টেলিগ্রামের নীরব সাক্ষী তিনি। টেলিগ্রাম ছিল তিন ধরনের। সাধারণ টেলিগ্রাম, আরজেন্ট টেলিগ্রাম ও প্রেস টেলিগ্রাম। নির্ধারিত ফর্ম এনে খবরটি ইংরেজীতে লিখে অথবা টাইপ করে নিয়ে যেতে হতো টেলিগ্রাম অফিসে। অপারেটর টেলিগ্রামের টরে টক্কা যন্ত্রে তা পাঠিয়ে দিতেন গন্তব্যে। গন্তব্যের টেলিগ্রাম অফিস তা গ্রহণ করে পত্রিকা অফিসে সরবরাহ করত। সাব এডিটর ভাষা বুঝে বাংলা পত্রিকা বাংলায় ও ইংরেজী পত্রিকা ইংরেজীতে খবর লিখে বার্তা সম্পাদকের কাছে দিতেন। ইয়াছিন আলীর টেলিগ্রাম ড্রাফট ভাল হওয়ায় পত্রিকা কর্তৃপক্ষের খবর লিখতে কোন অসুবিধা হতো না। মোঃ ইয়াছিন আলী ১৯৩৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৯ সালে ম্যাট্রিকুলেশন (বর্তমানের এসএসসি) পাস করার পর সরকারী আযিযুল হক কলেজ থেকে ১৯৬১ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। তারপর কেরানি হিসেবে চাকরি করেন তৎকালীন সি এ্যান্ড বিতে (বর্তমানে গণপূর্ত বিভাগ)। মাসে বেতন পান ৯২ টাকা। তারপর ইপিআইডিসি, ম্যালেরিয়া ইরিডিকেশন ও স্বাস্থ্য বিভাগে কেরানি চাকরি করার পর আর মন বসাতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি বিয়ে করেন নওগাঁর রানীনগরে। পরিবারে স্ত্রী ২ ছেলে ও ২ মেয়ে। সন্তানদের বিয়ে থা হয়ে গেছে। -সমুদ্র হক, বগুড়া থেকে
×