ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনায় প্রচার তুঙ্গে, ভোট টানতে নানা প্রতিশ্রুতি প্রার্থীদের

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১১ মে ২০১৮

খুলনায় প্রচার তুঙ্গে, ভোট টানতে নানা প্রতিশ্রুতি প্রার্থীদের

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনের প্রচার এখন তুঙ্গে। ১৫ মে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ১৩ মে রাত ১২টা থেকে সকল নির্বাচনী প্রচার বন্ধ হয়ে যাবে। প্রার্থী ও তার নেতাকর্মীদের হাতে বেশি সময় নেই। ভোর হতে না হতেই প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে ছুটে যাচ্ছেন। ভোট প্রদানের জন্য দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি। প্রার্থীদের যেন দম ছাড়ারও ফুরসত নেই। প্রার্থীরা এলাকার উন্নয়নের আশ্বাস যেমন দিচ্ছেন, তেমনি অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ চলছে। মেয়র পদে পাঁচ প্রার্থী থাকলেও তর্কযুদ্ধ সমালোচনা, অভিযোগ করেন প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের দুই প্রার্থী। এই দুই প্রার্থীর মধ্যে বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু মনোনয়নপত্র জমাদানের পর থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ করে আসছেন। শাসক দল আওয়ামী লীগ সম্পর্কেও নানা অভিযোগ উত্থাপন করেন। এর পাল্টা হিসেবে তালুকদার আব্দুল খালেকও মঞ্জু ও তার দল বিএনপির শাসনামলের সময়ের অবস্থা জনগণের সামনে তুলে ধরছেন। এই দুই প্রার্থীকে ঘিরে নির্বাচনী মাঠে মাঝে মাঝে উত্তাপ ছড়ালেও প্রচার ও গণসংযোগে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন তারা। মেয়র প্রার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিল প্রার্থীরা সকলেই উন্নয়ন, নাগরিক সেবার মান বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। ৩১টি ওয়ার্ডের অলিগলি সর্বত্রই পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টায় ও ভোটারদের মন জয় করতে প্রার্থীদের খাওয়া ঘুম যেন বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে মেয়র প্রার্থীদের এরিয়া বড় হওয়ায় তাদের হাতে সময় কম। এরই মধ্যে তারা সব এলাকার ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে চান। পাঁচটি দলের পাঁচজন প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের ‘নৌকা’ ও বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের মধ্যে। ভোটার ও নগরীতে বসবাসকারীরা এমনটাই মনে করছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মওলানা মুজ্জাম্মিল হকও ‘হাতপাখা’ প্রতীক নিয়ে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন সিপিবি মনোনীত ‘কাস্তে’ প্রতীকের প্রার্থী মিজানুর রহমান বাবু ও জাতীয় পার্টির ‘লাঙ্গল’ প্রাতীকের প্রার্থী এ এম শফিকুর রহমান। সকলেই নগরীর উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা নিরসন, দুর্নীতিমুক্ত কেসিসি গড়াসহ নানান প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। নগরবাসীর কাছেও সিটির উন্নয়নের ইস্যু বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। কিন্তু কার দ্বারা নগর জীবনের বহুমুখী সমস্যার নিরসন হতে পারে সে হিসেব-নিকেশও কষতে শুরু করেছেন সাধারণ ভোটাররা। আর যারা কোন না কোন দলের একনিষ্ঠ ভক্ত তারা তো তাদের মতো বিবেচনা করবেন। যারা কোন দলের সঙ্গে যুক্ত নন এমন ভোটাররাই ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন। আর এই হিসেব-নিকেশ করেই প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও তার সমর্থকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশব্যাপী ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এ দিকে ভ্যাপসা গরমের পর বৃহস্পতিবার দুপুরে এক পশলা মাঝরি বর্ষণ হয় খুলনায়। এ সময় গণসংযোগে কিছুটা বিঘœ ঘটলেও বেলা দু’টার দিকে বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর মাইকে প্রচারসহ গণসংযোগ জোরদার হয়। নগরীর অনেক এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভাল না থাকায় রাস্তায় পানি জমে যায়। চলার পথে পানি কাদা ঠেলে প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা ভোটারদের কাছে যান। কুশল বিনিময় করেন, হ্যান্ডবিল হাতে দিয়ে ভোট প্রার্থনা করেন। রাস্তায় ও বিভিন্ন মোড়ে ঝুলিয়ে রাখা পোস্টার বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যাওয়াও পুনরায় তা টানাতেও তৎপর রয়েছেন কর্মীরা। পরিকল্পিত নগরী গড়তে নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান খালেকের ॥ কেসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক বৃহস্পতিবার নগরীর প্রাণ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। নির্বাচনী প্রচারকালে তিনি খুলনা মহানগরীকে নান্দনিক, পরিবেশবান্ধব পরিকল্পিত একটি নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হলে সিটি কর্পোরেশন দুর্নীতিমুক্ত একটি সত্যিকারের সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হবে। নগরবাসীর কাক্সিক্ষত উন্নয়নে দলমত নির্বিশেষে সমাজের অভিজ্ঞ ও বিশিষ্টজনদের পরামর্শ গ্রহণ করা হবে। কাজের গুণগত মান বজায় রাখতে আমি নিজেই বরাবরের মতো সরেজমিনে উপস্থিত থাকব। নিজেকে একজন সৎ, সাহসী, নির্লোভ নিষ্ঠাবান ব্যক্তি দাবি করে খালেক বলেন, ‘মাদকের দাপট, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও দুর্র্নীতির বিরুদ্ধে আমি জিহাদ ঘোষণা করেছি।’ তিনি সকাল পৌনে ১০টায় নগরীর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। এরপর তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক, শিশু হাসপাতাল, জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ, আইনজীবী সমিতি, রেজিস্ট্রি অফিস, টিএ্যান্ডটি অফিস সংলগ্ন এলাকাসমূহে গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে এবং জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। কলেজিয়েটের মতো আরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার আশ্বাস মঞ্জুর ॥ বিএনপি মনোনীত ও ২০ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর ৩০ নং ওয়ার্ড এলাকার খানজাহান আলী রোডের কলেজিয়েট স্কুল থেকে গণসংযোগ শুরু করেন। এরপর দারোগা পাড়া, গ্যাদন পাড়া হয়ে জোড়াকল বাজারে ব্যবসায়ী, দোকানদার, ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ও ধানের শীষের লিফলেট বিতরণ করেন। এরপর তিনি দলীয় কার্যালয়ে একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে অংশ নিয়ে আবার বিএনপি অফিস, থানার মোড়, কেসিসি, খুলনা জেনারেল হাসপাতাল হয়ে বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি বলেন, খুলনা সিটি নির্বাচনের ধানের শীষের পক্ষে জনতার ব্যালট অভ্যুত্থান ঘটবে। তিনি বলেন, ‘এই শহর, এই নগরীর মানুষ আমার অতি আপনজন। আমি তাদের সুখ-দুঃখ, অভাব- অভিযোগ, চাহিদার কথা জানি। চলমান শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে পরিবর্তন আনতে হবে রাষ্ট্র ক্ষমতায়। কেসিসি নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হবে না। কিন্তু তাদের পতন আন্দোলন ত্বরান্বিত হবে। জনতার রায়ে মেয়র নির্বাচিত হলে তিনি নগরবাসীর আধুনিক ও উন্নয়ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে কলেজিয়েট স্কুলের মতো আরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আশ্বাস দেন। গাজীপুরের মতো খুলনাতেও একই প্রক্রিয়া আছে দাবি-গয়েশ্বর রায়ের ॥ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়ক গয়েশ্বর চন্দ্র রায় অভিযোগ করেছেন, জনগণ এবং ভোটারদের ওপর আস্থা নেই আওয়ামী লীগের। তারা ভোটেরও ধার ধারে না, ভোটাররা ভোট দিক আর না দিক, তাদের জিততেই হবে- এ ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে আওয়ামী লীগ খুলনায় নির্বাচন করছে। সরকার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বন্ধ করে আদালতের মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করেছে। তিনি বলেন, খুলনা সিটিতেও একই ধরনের প্রক্রিয়া করে রেখেছে তারা। তবে নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ দলীয় কর্মীদের ব্যবহার করে ফলাফল আয়ত্ত করতে পারলে বন্ধের প্রক্রিয়ায় যাবে না। খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার, পুলিশের হয়রানি, ক্ষমতাসীন দল কর্তৃক হামলা-মামলা, হুমকি-ধমকি এবং ধানের শীষের প্রচারণায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকার অভিযোগ এনে বৃহস্পতিবার কে ডি ঘোষ রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব অভিযোগ করেন তিনি। প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, বরকত উলাহ বুলু, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, মশিউর রহমান, মোঃ শাজাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, হাবিবুর রহমান হাবিব, শ্যামা উবায়েদসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরাজয় নিশ্চিত জেনে বিএনপি অপপ্রচার চালাচ্ছে- শরীফ নূরুল আম্বিয়া ॥ বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি ও ১৪ দলের অন্যতম নেতা শরীফ নূরুল আম্বিয়া বলেছেন নিশ্চিত পরাজয় জেনে বিএনপি এখন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের পথ বেছে নিয়েছে। তবে দল মত নির্বিশেষে খুলনার উন্নয়নে এবার মানুষ তালুকদার আব্দুল খালেককে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করবে। বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে ১৪ দল আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন।
×