ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাকা ধান তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা

হাওড়ে জলাবদ্ধতার জন্য অপ্রয়োজনীয় বাঁধ নির্মাণ দায়ী

প্রকাশিত: ০৫:০০, ৭ মে ২০১৮

হাওড়ে জলাবদ্ধতার জন্য অপ্রয়োজনীয় বাঁধ নির্মাণ দায়ী

এমরানুল হক চৌধুরী, সুনামগঞ্জ থেকে ॥ গত দুবছর পরপর সুনামগঞ্জের হাওড়গুলোতে ব্যাপক বিপর্যয়ের পর এবার বাম্পার ফলন। কিন্তু কৃষকের মুখে হাসি ফুটতে না ফুটতে আবারও শঙ্কা জলাবদ্ধতার পাকা ধান তলিয়ে যাওয়ার। তার ওপর শ্রমিক সংকট প্রতিটি হাওড়ে হাওড়ে। মাঠভরা ফসল কিন্তু তা ঘরে তুলতে হিমশিম খাচ্ছেন কৃষকরা। কয়েকদিনের বর্ষণের ফলে জেলার বেশ কিছু হাওড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে বজ্রপাত আতঙ্ক কৃষকের কাছে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দাবি এ পর্যন্ত জেলায় ৮০% ধান কাটা শেষ। তবে কৃষক ও কৃষি বিশ্লেষকরা এর পরিমাণ আরও অনেক কম বলে জানিয়েছেন। জলাবদ্ধতা সৃষ্টির অন্যতম কারণ হিসেবে অপ্রয়োজনীয় বাঁধকেই দায়ী করলেন কৃষকরা। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, অনেক এলাকায় অপ্রয়োজনীয় বাঁধ হয়েছে। বাঁধ নির্মাণে নীতিমালা লঙ্ঘন করে স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ছাড়াই। যার ফলে এখন হাওড়ে হাওড়ে জলাবদ্ধতা। পানি উন্নয়ন বোর্ড, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণের বিরুদ্ধে বারবার অপ্রয়োজনীয় বাঁধ নিয়ে অভিযোগ করলেও তখন দায়িত্বপ্রাপ্তরা গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি আমলে নেননি। অপ্রয়োজনীয় বাঁধের নামে সরকারী অর্থ লুটপাট ও আত্মসাত করতেই এসব অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নেয়া হয়েছিল। তাদের দাবি কয়েকদিনের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে তলিয়ে গেছে হাওড়ে হাওড়ে পাকা ধানের ক্ষেত। সরেজমিন ডাকুয়ার হাওড়ের কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, হাওড়বাসী বাঁধ নির্মাণের পূর্ব থেকেই প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বারবার অবহিত করেছিল অপ্রয়োজনীয় স্থানে বাঁধ নির্মাণ নিয়ে। তারপরও কর্তৃপক্ষ এসব স্থানে বাঁধ দিয়ে সরকারী টাকার অপচয়ের পাশাপাশি ডাকুয়ার হাওড়বাসীর জন্য স্থায়ী সমস্যা সৃষ্টি করেছেন। যা স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে। তারা বলেন লুটপাটের উদ্দেশ্যে এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। অথচ যেখানে জনগণ দাবি করেছে সেই স্থান স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থ রক্ষায় প্রকল্প নেয়া হয়নি। বাঁধ নির্মাণ কোথাও কোন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়নি উল্লেখ করে তারা বললেন, বাঁধ নির্মাণে নীতিমালা লঙ্ঘন করে স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ আলোচনা না করে অপ্রয়োজনীয় বাঁধ নির্মাণ হয়েছে। তারা আরও জানান, আমরা এসব অপ্রয়োজনীয় বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে গত ১৩ মার্চ মানববন্ধনসহ ভিন্ন ভিন্ন সময় নানা প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করেছি কিন্তু কাজ হয়নি। এখন আমাদের সোনার ফসল জলাবদ্ধতার কারণে পানির নিচে। এমন দৃশ্য জেলার অন্যান্য হাওড়েও। সুনামগঞ্জের হাওড়ে এ বছর প্রায় ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়েছে। এবার ১৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সুনামগঞ্জের ৫২টি হাওড়ে এসব বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত করা হয়। যা অন্যান্য যে কোন বছরের তুলনায় ছিল ফসল রক্ষা বাঁধের জন্য সর্বাধিক বরাদ্দ। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসনের অধীনে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে এসব বাঁধের কাজ করানো হয়েছিল। যার মধ্যে বেশকিছু অপ্রয়োজনীয় বাঁধও নির্মাণ করা হয়েছে বলে একাধিকবার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট হাওড়ের কৃষকদের কাছ থেকে। এখন সেসব হাওড়েই পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলের পানিতে সুনামগঞ্জে অন্তত ৫০০০ হেক্টর জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে বলে কৃষকরা দাবি করছেন। এ কারণে পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে গিয়ে নতুন করে দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন কৃষকরা। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে জলাবদ্ধতা আরও বাড়বে। তখন জমির ধান জমিতেই নষ্ট হয়ে যাবে বলে জানান কৃষকরা। জেলায় এ বছর ২ লাখ ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। একইভাবে সদর উপজেলার মোহনপুর ও কাঠইর ইউনিয়নের ডাকুয়ার এবং ছন্দোয়ার হাওড়ে অপরিকল্পিত বাঁধের কারণে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
×