ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-আমিরাত যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক এ মাসেই

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৭ এপ্রিল ২০১৮

বাংলাদেশ-আমিরাত যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক এ মাসেই

ফিরোজ মান্না ॥ বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে এ মাসেই জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এবার বৈঠক হবে ঢাকায়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত আসতে পারে সংযুক্ত আমিরাত বাংলাদেশ থেকে কত কর্মী নিয়োগ করবে। দীর্ঘদিন ধরে শ্রমবাজারটির সঙ্গে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আলাপ-আলোচনা করছে। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাত কেবল আশ্বাস দিয়েই যাচ্ছে। বাজার খোলার বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে কয়েকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও বাজারটি খুলছে না। বাজারটি চালু করার বিষয়ে গত বছরের মাঝামাঝি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করেন। তখন দেশটির কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের আশ্বাস দেয়। শুধু তাই নয়, একই সঙ্গে দেশটিতে কর্মরত ৭ লাখ বাংলাদেশী কর্মীর আকামা (চাকরি) পরিবর্তনের বিষটি অনুমোদন করে কর্তৃপক্ষ। বলা হয়, এখন থেকে বাংলাদেশী কর্মীরা তাদের ইচ্ছেমতো চাকরি পরিবর্তন করতে পারবেন। ঘোষণা দেয়ার পর ১০ মাস কেটে গেলেও বাংলাদেশী কর্মীরা সেই সুযোগ পায়নি। তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো নতুন চাকরি নিতে পারছেন না। তবে আকামা পরিবর্তনের বিষয়টিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি সম্প্রতি বলেছেন, দেশটির মানবসম্পদ ও এমিরেটাইজেশন মন্ত্রী সাকর গোবাশ সাঈদ গোবাশের সঙ্গে তার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে অধিকসংখ্যক কর্মী নেয়া ও কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। দেশটির মানব সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে সরকারের কাছে বাংলাদেশী কর্মীর চাহিদাপত্র পাঠানো হবে। এই চাহিদার অনুকূলে কতসংখ্যক কর্মী তারা নেবে সে বিষয়টি ওয়ার্কিং কমিটির মিটিংয়ে ঠিক হবে। আরব আমিরাতের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। তারা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে ঠিক করবেন কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া কি হবে। সংযুক্ত আরব আমিাতের মানব সম্পদমন্ত্রী গোবাশ আশ্বাস দিয়েছিলেন, বাংলাদেশী কর্মীদের আকামা পরিবর্তনের সুযোগ দেয়া হবে। দুই দেশের ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক, মুসলিমপ্রধান দেশ, একই ধর্মীয় মূল্যবোধের অনুভূতি ও পারস্পরিক অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্টতা বজায় রাখার জন্য পরস্পরের প্রতি একটা ঘনিষ্ঠতা আগে থেকেই বিরাজমান। বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাত অভিবাসন ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে একযোগে কাজও করে যাচ্ছে। উভয় দেশ আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ফোরামসমূহে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে সুষ্ঠু ও নিরাপদ অভিবাসন ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের বিভিন্ন ইস্যুতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে চলেছে। এতে কর্মীদের স্বার্থ ও অধিকার সুরক্ষা হচ্ছে। সংযুক্ত আরব আমিররাতের মানবসম্পদ ও এমিরেটাইজেশন মন্ত্রণালয় বিদেশী কর্মীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে জারিকৃত সর্বশেষ ডিক্রীসমূহের উদ্যোগকে প্রশংসা করেন। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে আরও অধিক দক্ষ কর্মী নেয়ার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের মানবসম্পদ ও এমিরেটাইজেশন মন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে তাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রীর সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরকে মন্ত্রণালয় সবচেয়ে ইতিবাচক হিসেবে বলা হচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত হয় সেই অপেক্ষা করতে হবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০১৬ সালে অন্যান্য দেশের কর্মীদের জন্য আকামা পরিবর্তনের সুযোগ দেয়া হয়। সেই সময় বাংলাদেশের কর্মীদের আকামা পরিবর্তনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। গত বছর মন্ত্রীর সফরের সময় দেশটির মানব সম্পদমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশী কর্মীদের আকামা পরিবর্তনের সুযোগ দেবেন তারা। কিন্তু এখনও এ সুযোগ বাংলাদেশী কর্মীরা ভোগ করতে পারছেন না। উল্লেখ্য, ১৯৭৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৩ লাখের অধিক কর্মীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ২৩ হাজারের বেশি নারী কর্মী দেশটিতে কর্মরত। সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার উন্মুক্তকরণের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ইতোমধ্যে একাধিক বৈঠক হয়েছে।
×