ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

উদীচীর প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক কর্মী সমাবেশ বর্ষবরণ অনুষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ

প্রকাশিত: ০৫:২১, ১৪ এপ্রিল ২০১৮

উদীচীর প্রতিবাদী  সাংস্কৃতিক কর্মী সমাবেশ বর্ষবরণ অনুষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিকেল পাঁচটার মধ্যে বর্ষবরণের সকল আয়োজন শেষ করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। বাঙালীর প্রাণের উৎসবের সময় নিয়ন্ত্রণ এবং মুখোশ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিবাদে শুক্রবার দেশব্যাপী প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক কর্মী সমাবেশ করে সংগঠনটি। বিকেলে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, সাবেক ছাত্রনেতা আকরামুল হক, গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক জীবনানন্দ জয়ন্ত, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এ এন রাশেদা, চিত্রশিল্পী আনোয়ার হোসেন, সঙ্গীতশিল্পী দোলা বন্দোপাধ্যায়, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি প্রবীর সরদার, সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন, সহ-সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, সঙ্গীত ইমাম ও ইকবালুল হক খান। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, বিকাল ৫টার মধ্যে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শেষ করা এবং মঙ্গল শোভাযাত্রায় মুখোশ ব্যবহার নিষেধ করা বিষয়ক সরকারের একতরফা সিদ্ধান্ত নিন্দনীয়। সংস্কৃতি কর্মীসহ সমাজের প্রায় সর্বস্তরের মানুষের প্রবল আপত্তির মুখেও গত কয়েক বছর ধরে বর্ষবরণ উৎসবকে নির্দিষ্ট সময়ের ঘেরাটোপে বেঁধে দেয়ার একতরফা পদক্ষেপ নিয়ে আসছে সরকার। বারবার আপত্তি জানানোর পরও এবারও রমনা বটমূল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত পহেলা বৈশাখের সব উন্মুক্ত অনুষ্ঠান বিকাল ৫টার মধ্যে শেষ করার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানান। এ ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এর মাধ্যমে উৎসবমুখর বাঙালীর প্রাণের উচ্ছ্বাসকে দমন করা হচ্ছে তাই, নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে বিকাল ৫টার মধ্যে সব অনুষ্ঠান শেষ করার এ নির্দেশনা গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকলে ধর্মীয় মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী প্রশ্রয় পাবে। এছাড়া, বৈশাখ উদ্যাপনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা মঙ্গল শোভাযাত্রায় মুখোশ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা বিষয়ক যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তা সার্বিকভাবে উৎসবের বৈচিত্র্যকে খর্ব করবে। তাই অবিলম্বে সময় সঙ্কোচনের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা এবং বাঙালীর ঐতিহ্যের অন্যতম অনুষঙ্গ মুখোশ ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আবারও দাবি জানান তারা। সমাবেশে লিটন নন্দী বলেন, বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সময় সঙ্কোচনের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে যারা বাঙালী সংস্কৃতিকে সীমাবদ্ধ করে রাখতে চায় তাদের স্বার্থই রক্ষা করা হলো। সঙ্গীতা ইমাম বলেন, উদীচী সরকারের এই একতরফা সিদ্ধান্ত মানবে না। অবিলম্বে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে অমিত রঞ্জন দে বলেন, বিভিন্ন সময়ে মৌলবাদী অপশক্তির আক্রমণ ও রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে যাত্রাপালাসহ সংস্কৃতির অনেক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ ধারা চলতে দেয়া যায় না বলে মন্তব্য করেন তিনি। উদীচী সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন অভিযোগ করেন, সাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধ গোষ্ঠী ধারাবাহিকভাবে এদেশের চিরায়ত সংস্কৃতির ওপর বর্বর আক্রমণ চালিয়ে আসছে। এর বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সময় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক জাগরণ বন্ধ করা যাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। সরকার সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন জামসেদ আনোয়ার তপন। অনুষ্ঠানে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদ ও মিরপুর শাখা সংসদের শিল্পীরা। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন আনান বাউল ও উচ্ছ্বাস পাল। আবৃত্তি পরিবেশন করেন বেলায়েত হোসেন, শিখা সেন গুপ্তা ও সুমিত পাল। দেশব্যাপী এ কর্মসূচীতে উদীচী ছাড়াও দেশের অন্যান্য প্রগতিশীল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অসাম্প্রদায়িক ভাবধারার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও যোগ দেয়। সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে এ কর্মসূচীতে অংশ নেয়ার আহ্বানও জানায় উদীচী।
×