ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পেটে ভরে ইয়াবা পাচার করে ভাগ্য বদলাতে চেয়েছিল সারোয়ার

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ৯ এপ্রিল ২০১৮

পেটে ভরে ইয়াবা পাচার করে ভাগ্য বদলাতে চেয়েছিল সারোয়ার

আজাদ সুলায়মান ॥ এক সঙ্গে এক হাজার ইয়াবা পেটে ঢোকানো জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ। এটা নিশ্চিত জেনেও-শুধু পেটের দায়ে পেটকেই হুমকির মুখে ফেলে দেয় সারোয়ার হোসেন। পেটে লুকিয়ে প্রতিবার এক হাজার ইয়াবা পাচারের বিনিময়ে পারিশ্রমিক মাত্র ১৪ হাজার টাকা। মাসে চার বার আনতে পারলে ৫৬ হাজার টাকা উপার্জন। এটাই ছিল তার উপার্জনের একমাত্র পথ। কিন্তু তাতেও বাধ সাধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম। সোর্সের দেয়া তথ্যমতে তিনি অভিযান চালান সারোয়ারের পেটের ভেতর। তাতেই মিলে যায় মওকা। তারপর বেরিয়ে আসে ইয়াবা পাচারের চাঞ্চল্য ও অবিশ্বাস্য কাহিনী। ঘটনা গত শুক্রবার গভীর রাতের। রমনা জোনের মাদক পরিদর্শক কামরুল ইসলামের কাছে সোর্স তথ্য পাঠায় চট্টগ্রাম থেকে বাসে করে ঢাকায় আসছে। তার নাম সারোয়ার, তার পেটে এক হাজার পিস ইয়াবার চালান। কামরুলের কাছে প্রথমে অবিশ্বাস ঠেকে এমন আজব তথ্য। তবে সাম্প্রতিক বিমানবন্দরে পেটে লুকিয়ে সোনা পাচারের ঘটনা ঘটায় তিনি সোর্সের দেয়া তথ্য নিয়েই ফাঁদ পাতেন। জানা যায়, পরিদর্শক কামরুল ইসলাম নিজেই ক্রেতা সেজে সোর্সের মাধ্যমে সারোয়োরের কাছ থেকে ইয়াবা কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। চট্টগ্রামের দামের চেয়ে তিনগুণ বেশি দিয়ে তিনি এ সব কেনার লোভনীয় অফার দেন। সারোয়ার ঠিক সেভাবে দিনক্ষণ গুণে সময়মতো হাতিরঝিলে এসে হাজির। এখানে এসেই কামরুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করে জানান, তার পেটের ভেতর ইয়াবার দুটো প্যাকেট রয়েছে। প্রত্যেকটিতে ৫শ’ করে ইয়াবা রয়েছে। এটা স্বীকার করার পর তার পেট থেকে ইয়াবার চালান বের করতে বলা হয়। এ সময় সেখানে হাজির হয় কামরুলের টিমের অন্য সদস্যরা। তখন সারোয়ার জেনে যায় সে পাতান ফাঁদে ধরা পড়েছে। তখন তাকে নিয়ে যাওয়া হয় পাশের একটি বেসরকারী ক্লিনিকে। সেখানে এক্স-রে করে দেখা যায় পেটের ভেতর দুটো প্যাকেট। এতে অনন্যোপায় হয়ে সে পেট থেকে ইয়াবার চালান বের করে দিতে রাজী হয়। কামরুল তাকে হোটেলে নিয়ে পেট ভরে খাবার খাওয়ানোর পর সে টয়লেটে যেতে চায়। এ সময় তেজগাঁয়ের মাদক নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে ডাক্তারের উপস্থিতিতে একটা প্যানে বসিয়ে দেয়া হয়। মুহূর্তেই পেট থেকে সে নিজেই বের করে দেয় দুটো পলিতে মোড়ান প্যাকেট ইয়াবা। প্যাকেটগুলো পরিষ্কার করে ইয়াবা বের করে গুণার পর তা জব্দ করা হয়। এ বিষয়ে কামরুল ইসলাম জানান, কনডম সাইজ পলি প্যাকের ভেতর ৫শ’ ইয়াবার প্যাকেটে লুব্রিক্যান্ট লাগিয়ে পিচ্ছিল করা হয়। তারপর সেটা গুহ্যদ্বার দিয়ে পেটের ভেতর ঢুকিয়ে রাখা হয়। ধরা পড়ার পর সারোয়ার জানায় চট্টগ্রামের একটি হোটেলে বসে এভাবে দুটো প্যাকেট পেটের ভেতর ভরার পর বাসে ঢাকায় রওনা হয়। প্রায় ৭ ঘণ্টার জার্নিতে সে রাস্তায় একমাত্র পানি ছাড়া আর কিছুই পান করেনি। অন্য খাবার খেলে প্যাকেটের ওপর বেগ দেখা দেয়। সেজন্য অনেকটা উপোস থেকেই অনেক কষ্ট সহ্য করেই তাকে এতটা ঝুঁকি নিতে হয়। কামরুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি ৫শ’ ইয়াবার একটি প্যাকেট এ পদ্ধতিতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এনে দিলে ৭ হাজার করে পারিশ্রমিক দেয়া হয়। দুটোতে ১৪ হাজার টাকা। এমন একটি চালানেই সে ১৪ হাজার টাকার উপার্জন করতে পারে। এ পর্যন্ত সে ৮/৯ বার চট্টগ্রাম থেকে চালান এনে ঢাকায় ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কাছে হস্তান্তর করেছে বলে স্বীকার করেছে সারোয়ার। বিশেষত যাত্রাবাড়ি এলাকার কয়েকটি মাদক আস্তানায় ইয়াবা সরবরাহ করাই ছিল তার কাজ। জিজ্ঞাসাবাদে সারোয়ার জানায়, তার বাড়ি ফেনীতে। পেটের দায়ে পেটের ভেতর ইয়াবার প্যাকেট ঢুকানোর মতো ঝুঁকিপূর্ণ ও কঠিন কাজ ছাড়া তার কোন উপায় ছিল না। এটা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও আয় যথেষ্ট। ধরা না পড়লে এভাবে যদি এক দু বছর শুধু ইয়াবার চালান আনা সম্ভব হতো তাহলে আর্থিক সচ্ছলতা এসে যেত। এ দিকে মহাপরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, এটা নতুন পদ্ধতি। সোর্সের দেয়া তথ্য শতভাগ নিশ্চিত না হলে এ পদ্ধতির ইয়াবা পাচারের ঘটনা ফাঁস করা কিংবা চালান জব্দ করাটা কঠিন। যদিও উন্নত দেশে পেটের ভেতর লুকান জিনিস সহজেই ডিটেক্ট করার বিশেষ কিট রয়েছে, কিন্তু আমাদের কাছে এমন কিছু নেই। তবে আমরা এ বছরই একটা ডিভাইস কেনার উদ্যোগ নিয়েছি। ওটা দিয়ে বহনকারী শ্বাস নিলেই বেরিয়ে আসবে পেটের ভেতর লুকান যে কোন পদার্থ। তার আগ পর্যন্ত আপাতত এক্স-রে করেই পেটের ভেতর লুকান ইয়াবা শনাক্ত করতে হচ্ছে।
×