ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সড়কের সংস্কার কাজের মান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বেগের প্রেক্ষিতে বৈঠক

টেকসই সড়ক নির্মাণে উন্নত দেশের ফর্মুলা অনুসরণ

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ৯ এপ্রিল ২০১৮

টেকসই সড়ক নির্মাণে উন্নত  দেশের ফর্মুলা অনুসরণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, আমরা এখন উন্নত দেশের দিকে এগুচ্ছি। তাই আমাদের রাস্তাঘাটও উন্নত দেশের মতো হওয়া উচিত। অর্থনৈতিক কর্মকা-ে দেশের মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ছে। প্রত্যন্ত গ্রামেও এখন ভারি যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু গ্রামীণ সড়কগুলো ভারি যান চলাচলের উপযোগী নয়। তাই সংস্কারের কিছুদিন পরই আবার সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখন থেকে টেকসই সড়ক নির্মাণে উন্নত দেশের ফর্মুলা অনুসরণ করা হবে। রবিবার সড়ক সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে পরিকল্পনামন্ত্রীর সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সড়কের সংস্কার কাজের মান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বেগের প্রেক্ষিতে এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রকৌশলীদের কাছে সড়কের স্থায়িত্ব কম হওয়ার কারণ জানতে চান জাতীয় সংসদ সদস্যরা। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের কাছে এসব বিষয়ে ব্যাখা ও করণীয়ও জানতে চাওয়া হয়। বৈঠকে এই সমস্যা সমাধানে বিশেষ উদ্যোগ নেয়াসহ বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে গঠন করা হচ্ছে একটি কমিটি। কমিটির সদস্যরা বিদেশ সফর করে এসে এ দেশে রাস্তা তৈরিতে আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের বিষয়ে সুপারিশ দেবেন। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান আমলে রাস্তা করা হতো রিজিড পেভমেন্ট (কংক্রিটের) পদ্ধতিতে। স্বাধীনতার পর ফ্লেক্সিবল পেভমেন্টে (বিটুমিন) রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। বিটুমিনের প্রধান শত্রু হলো পানি। ভারি বৃষ্টিপাত হলে বিটুমিনের রাস্তা দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাছাড়া আগে গ্রামাঞ্চলের সড়কগুলোতে ভারি যানবাহন চলত না। এখন প্রত্যন্ত গ্রামেও ৩০ টন পর্যন্ত ট্রাক যাচ্ছে। ফলে ওই রাস্তাগুলো টেকসই হচ্ছে না। এজন্য রাস্তাঘাট তৈরির পদ্ধতিগত পরিবর্তন প্রয়োজন। এছাড়া গ্রামীণ রাস্তা প্রশস্ত এবং মজবুত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবুল কামাল আজাদ, ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, মুহিবুর রহমান মানিক এমপি, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন (্আইএমইডি) সচিব মোঃ মফিজুল ইসলাম, এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ, সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, এখন থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী এলাকার বৈশিষ্ট্য মেনে রাস্তা সংস্কার ও পুনর্বাসন করা হবে। রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কারে বিদেশী অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তি কাজে লাগাতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদকে একটি কমিটি গঠন করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সড়ক সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো থেকে ২ জন করে সদস্য নিয়ে কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটি ১৫ দিনের মধ্যে বিদেশ সফর করে এসে প্রতিবেদন দাখিল করবে। তারপরই সিদ্ধান্ত হবে কংক্রিট, বিটুমিন বা অন্য কোন পদ্ধতি; যেখানে যেটি প্রয়োজন সে অনুযায়ী আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হবে। ব্যয় বেশি হলেও গুণগত মান ও স্থায়ীত্বের বিষয়টি অগ্রাধিকার দিতে হবে। জনগণকে উন্নত সার্ভিস দেয়াই হলো মূল কথা। এছাড়া উপকূলী ও হাওর অঞ্চলে সড়ক নির্মাণে ভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে। মন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে সারাদেশের ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা দ্রুত সংস্কার, রাস্তার পাশে যদি পুকুর থাকে তাহলে তার ধারে রিটেইনিংওয়াল এবং গাইডওয়াল দিতে হবে। নতুন করে রাস্তার ধারে পুকুর করা যাবে না। যেসব রাস্তার পাশে হাটবাজার আছে সেখানে কংক্রিট দিয়ে রাস্তা করতে হবে এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। বৈঠকে সূত্রে জানায়, আবুল কালাম আজাদ এমপি বলেন, আমরা দুই বছর আগে মালয়েশিয়ায় গেছিলাম। তখন বলা হয়েছিল দেশেও ওই রকম রাস্তাঘাট করা হবে। কিন্তু তার কোন বাস্তবায়ন নেই। গ্রামে গেলে নবম-দশম শ্রেণীর ছেলে-মেয়েরা পর্যন্ত জানতে চায় রাস্তা কেন টেকসই হয় না। সংসদ সদস্য মহিবুর রহমান মানিক বলেন, সামনে নির্বাচন। তাই রাস্তাঘাটের দূরবস্থা দূর করতে হবে। নির্বাচন ছাড়াও এটা জরুরী। প্রকৌশলীরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, আর আমরা জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক সরকার। তাই আমরা যেভাবে রাস্তা করতে বলব প্রকৌশলীরা সেভাবেই করবেন। সভায় প্রকৌশলীরা জানান, রাস্তা নির্মাণে ত্রুটি হচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বৃষ্টিপাতের মৌসুম উলটপালট হয়ে যাচ্ছে। এক টানা ভারি বৃষ্টিপাত ও অকাল বন্যা হচ্ছে। ফলে বিটুমিনের রাস্তা দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া বিটুমিনের চেয়ে কংক্রিটের রাস্তা নির্মাণে ব্যয় ও সময়ও বেশি লাগে।
×