ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রার্থী দেয়া হবে ৩শ’ আসনে ॥ অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক দলগুলো জোটে স্থান পাবে

বামদলগুলো জোটবদ্ধ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ৭ এপ্রিল ২০১৮

বামদলগুলো জোটবদ্ধ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে

রাজন ভট্টাচার্য ॥ জোটগতভাবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাম দলগুলো। আসন ভাগাভাগির ভিত্তিতে সিপিবি-বাসদ ও গণতান্ত্রিক বামমোর্চাসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে এ প্রস্তুতি। পাশাপাশি নিজেদের কর্মসূচী তৈরির প্রস্তুতিও নিচ্ছে বাম জোট। শীঘ্রই আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন বাম জোটের আত্মপ্রকাশের ইঙ্গিত দিয়েছেন নেতারা। সেইসঙ্গে ৩০০ আসনে প্রার্থী নিশ্চিত করতে চায় এই জোট। সিপিবি-বাসদ-বাম মোর্চার নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বামপন্থী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নামলেও এই জোটের একটি নতুন নামকরণ নিয়ে আলোচনা চলছে। আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারে নামার আগে কর্মসূচী চূড়ান্ত এবং জোটের নাম ঠিক করা হবে। এ বিষয়গুলো নিয়ে জোটের নেতারা কয়েক দফায় সভা করেছেন এবং খসড়া তৈরির কাজ চলছে। কথা আছে একটি আনুষ্ঠানিক মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে নতুন এই বাম জোটের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে। এতে বেশিরভাগ বাম রাজনৈতিক দল অংশ নেয়ারও ইঙ্গিত মিলেছে। পাশাপাশি নতুন জোটের পক্ষ থেকে সব জেলায় চলবে নির্বাচনী প্রচার। এদিকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে জোটভুক্ত দলগুলো প্রত্যেকে আলাদাভাবে নিজেদের দলের প্রার্থী তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে বলে জানা গেছে। নির্বাচনে ৩০০ আসনেই এই বাম জোট প্রার্থী দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সিপিবি-বাসদ-বাম মোর্চ ছাড়াও অন্য যেসব বাম দল রয়েছে তাদেরও এই জোটে আনার প্রক্রিয়া চলছে। পাশাপাশি বৃহত্তর নির্বাচনী জোট গঠনের লক্ষ্যে স্বাধীনতার পক্ষের অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনী আসন ভিত্তিক সমঝোতার আলোচনাও আছে বলে বাম নেতারা জানান। বাম দলগুলো জোটগত আসন ভাগাভাগির আগে কোন আসনে কোন দলের প্রার্থীর অবস্থান ভাল, কোথায় কাকে ছাড় দেয়া যায় পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এজন্য জোটভুক্ত প্রত্যেক দলের প্রার্থী তালিকা আগে চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এর পর আলোচনা করে সমঝোতার ভিত্তিতে জোটের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। এদিকে দলগত নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সিপিবি ১৭০ থেকে ১৮০ আসনে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। এসব আসনে সিপিবির সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতোমধ্যে প্রচার কাজ শুরু করেছেন বলে সিপিবি নেতারা জানান। দলীয় প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বাসদ ৭০ থেকে ৮০টি আসনে প্রার্থী দেয়ার কাজ শুরু করেছে। এসব আসনে দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করেছেন এবং প্রচারে নেমেছেন বলে দলটির নেতারা জানিয়েছেন। এর বাইরে বাম গণতান্ত্রিক মোর্চার শরিক দলগুলোও নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে। বাম মোর্চার দলগুলো ৩০ থেকে ৪০টি আসনে প্রার্থী দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, নির্বাচনকে প্রহসন ও তামাশায় পরিণত করা হয়েছে। সেখান থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম করছি আমরা। পাশাপাশি নির্বাচনী প্রস্তুতিও নিচ্ছি। আমরা নির্বাচনকে সংগ্রামের অংশই মনে করি। নির্বাচনে অংশগ্রহণ পরিস্থিতিই বলে দেবে। আমরা বামপন্থীরা ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে পারি এবারের নির্বাচন শুধু দ্বিমুখী হবে না। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাশাপাশি বামপন্থীরাও সব আসনে তাদের চ্যালেঞ্জ করে জোটগতভাবে নির্বাচনী সংগ্রামে অবতীর্ণ হবে। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, আমরা নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে আমরা বামপন্থীরা জোটগতভাবেই নির্বাচনে অংশ নেব। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আমরা সিপিবি ও বাসদ প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা তৈরির কাজ করছি। বাম জোটের সবাই মিলে ৩শ’ আসনে যাতে প্রার্থী দেয়া যায় সে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গণতান্ত্রিক বাম মোর্চাভুক্ত দল গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি এ বিষয়ে বলেন, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হলে আমরা জোটগতভাবে অংশ নেব। এজন্য দলীয়ভাবে প্রাথমিক প্রস্তুতি নিচ্ছি। নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিকে আমরা প্রধান্য দিয়ে সংগ্রাম করছি। জোটগত নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, নির্বাচনী ব্যবস্থায় টাকার খেলা এবং পেশি শক্তির প্রভাবসহ সব অনিয়ম দূর করার জন্য আমরা জোটগতভাবে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। নির্বাচনেও আমরা জোটগতভাবে অংশ নেব। দলগতভাবে আমরা প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করেছি। প্রার্থীর সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছি। জোটের বাস্তব চিত্র ॥ ঐক্যবদ্ধ হয়ে বড় কোন রাজনৈতিক জোট গড়তে না পারার বদনাম রয়েই গেছে বাম দলগুলোর মধ্যে। দিন দিন ভাঙ্গনের মুখে খ- খ- এখন বাম দলগুলো। বাড়ছে মতবিরোধ। দূরত্ব। এরমধ্যে গত ডিসেম্বর মাসেই নতুন জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়েছিল সিপিবি, বাসদ ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চাভুক্ত দলগুলোর পক্ষ থেকে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের বাইরে আটটি বাম দলের ওই জোটের নাম ‘যুক্তফ্রন্ট’ হওয়ার সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছিলেন নেতারা। আশা জেগেছিল এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন পর দেশের মূলধারার বাম দলগুলো এক ছাতার নিচে আসতে যাচ্ছে। কিন্তু পুরনো বছর পেরিয়ে নতুন বছরের চার মাস চলছে। ঐক্যের সুতা এখনও সবাইকে এক কাতারে বাঁধতে পারেনি। প্রথম অবস্থায় সিপিবি, বাসদ (খালেকুজ্জামান) এবং গণতান্ত্রিক বাম মোর্চায় থাকা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলন ও বাসদ (মার্ক্সবাদী) এই আট দল মিলে নতুন জোট হওয়ার কথা ছিল। পরে আগামী নির্বাচনের আগেই আলোচনা সাপেক্ষে কাছাকাছি মতাদর্শের অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল দলগুলোকে জোটে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যেই নতুন জোটের আত্মপ্রকাশের কথা জানিয়েছেন বাম নেতারা।
×