ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমির ৮০ লাখ টাকা গায়েব

প্রকাশিত: ০৪:০১, ৭ এপ্রিল ২০১৮

রাজশাহী শিল্পকলা  একাডেমির ৮০ লাখ টাকা গায়েব

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমির ৮০ লাখ টাকা গায়েবের চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। উচ্চতর তদন্তে বাংলাদেশে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে অভিযুক্ত কর্মচারীর বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সম্প্রতি মহাপরিচালক এই পত্রে স্বাক্ষর করেছেন। এর আগে রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমির একজন কর্মচারী নিজের অপকর্ম ঢাকতে প্রতিষ্ঠানের ছয়জন কর্মকর্তা-কর্মচারী বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন বলেও তদন্তে তথ্য পাওয়া যায়। রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমির এই কর্মচারীর নাম শহীদুল ইসলাম। তিনি স্থানীয়ভাবে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে ‘অফিস সহাকারী কাম হিসাবরক্ষক’ হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন। যদিও শিল্পকলা একাডেমিতে এই নামে কোন পদই নেই বলে জানা যায়। জানা যায়, ২০১৫ সালে এবং পরের বছর ২০১৬ সালে অপর দুটি পৃথক তদন্তে তার বিরুদ্ধে নানা রকম ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকা-ের অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রথম তদন্তটি করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন যুগ্ম সচিব মঞ্জুরুর রহমান (উন্নয়ন ও পরিকল্পনা)। এই তদন্তে তিনি শহীদুল ইসলামকে জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে বাদ দেয়ার সুপারিশ করেন। পরের তদন্তটি করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব (যগ্ম সচিব) জাহাঙ্গীর হোসেন চৌধুরী। ২০১৬ সালের ২৬ অক্টোবর দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনে তিনি শহীদুল ইসলামের বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ও দাফতরিক কাজে অসহযোগিতার কথা উল্লেখ করেন। একাডেমির প্রশিক্ষক ও কর্মচারীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, নথিপত্র বুঝে না দেয়া, বহিরাগতদের নিয়ে সন্ধ্যার পরে আড্ডা, দাফতরিক কাজ কর্মসহ সাংস্কৃতিক কর্মকা- প্রসারে বিঘœ সৃষ্টি করার কথা উল্লেখ করেন। ষড়ন্ত্রের শিকার হয়ে সর্বশেষ রাজশাহী থেকে বদলি হয়েছেন জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা (কালচারাল অফিসার) ফারুকুর রহমান ওরফে ফয়সল। বর্তমানে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে কর্মরত রয়েছেন। শুক্রবার মোবাইল ফোনে তিনি বলেন, তার আগেও রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমির চারজন কর্মকর্তা-কর্মচারী একইভাবে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে রাজশাহী ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। যেই রাজশাহী শিল্পকলায় যোগদান করেন তাকেই শহীদুলের ষড়যন্ত্রের শিকার হতেই হবে। প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই নামে-বেনামে একই ধরনের অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। সবকিছুর মূলেই থাকেন এই শহীদুল। ফারুকুর রহমান বলেন, এ কাজে শহীদুল কিছু অনিয়মিত খবরের কাগজকে ব্যবহার করেন। শুধু নাম বদলে একই প্রতিবেদন আরেকজনের নামে চালিয়ে দেয়া হয়। তিনি বলেন, তিনি শুনেছেন তার পরে রাজশাহীতে যে নতুন জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা যোগদান করেছেন তার বিরুদ্ধেও একই ধরনের অভিযোগ করা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে বিষয়টির সত্যতা জানা গেছে। সচিব জাহাঙ্গীর হোসেন চৌধুরীর তদন্ত প্রতিবেদনে একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে শহীদুল ইসলামকে অব্যাহতি দেয়া জন্য চিঠি দেয়া হয়। স্থানীয় প্রশাসন তা কার্যকর না করলে পর পর পাঁচটি চিঠি দেয়া হয়। অবশেষে গত ফেব্রুয়ারিতে তার স্থানীয় নিয়োগ বাতিল করা হয় এবং তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন তারপরেও তার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবর শহীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন রাজশাহীর কয়েকজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তি। তার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯ জানুয়ারি বিষয়টি তদন্ত করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির গবেষণা বিভাগের পরিচালক ও যুগ্ম সচিব গাজী সাইফুজ্জামান। গত ১ ফেব্রুয়ারি তিনি মহাপরিচালকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, তদন্তের হিসাবে গড়মিল, জাল রসিদ সৃষ্টি করা, প্যাডে অর্থগ্রহণের প্রাপ্তিস্বীকার করে রসিদে কম মূল্য প্রদর্শন করা, আদায়কৃত অর্থ জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে জমা না করা ইত্যাদি অভিযোগসমূহ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া তদন্তকালে সন্দেহাতীতভাবে ৯৫ হাজার ৩২৫ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ওই অর্থ আদায় ও তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে শহিদুল ইসলামের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি এ সব বিষয়ে কিছুই জানে না। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, তার ড্রয়ার খোয়া যাওয়ার কারণে তিনি প্রয়োজনীয় তথ্য উপস্থাপন করতে পারেননি। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি থেকে প্রতি বছর ‘অডিট’ করার কথা থাকলেও তারা নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছিলেন। এখন তার ওপরে এগুলো জোর করে চাপান হচ্ছে।
×