ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গল্প ॥ বাবুই পাখির বাসা

প্রকাশিত: ০৩:৩৬, ৭ এপ্রিল ২০১৮

গল্প ॥ বাবুই পাখির বাসা

বৃষ্টি হচ্ছে খুব। ব্যাঙ ডাকছে। পাখিরা নিজ নিজ বাসায় বসে আছে। বৃষ্টি থামলেই নীল আকাশে উড়বে। বের হবে খাবারের খোঁজে। বেগুনগাছের ডালে টোনাটুনির বাসা। ওরা বসে আছে ছোট্ট খড়ের বাসায়। টুনি বলল, কখন বৃষ্টি থামবে আর বের উড়তে। টোনা বলল, তুমি বরং একটা গল্প বলল। তুমি তো গল্পের জাহাজ। টুনি হিহিহি করে হেসে বলল, কোন গল্পটা? ওই লেজকাটা বাঘের গল্পটা বলব? টোনা হো হো করে হেসে বলল, না, না। ওটা বলো না। ওই গল্পের নাম শুনলেই হাসি পায়। অন্য একটা গল্প বলো। টুনি বলল তাহলে একটা নতুন গল্প বলি। এটি কিন্তু সত্যি ঘটনা। বাবুই পাখির বাসা বানানোর সত্য কাহিনী। শুনবে? টোনা বলল, বলো শুনি। টুনি গল্প বলতে শুরু করে। অনেক বছর আগে এক দেশের রানীর ছিল আজব শখ। তিনি রাজপ্রাসাদের কোন কাজ করতেন না। শুধু সুঁইসুতো দিয়ে কাপড়ে ফুল তুলতেন। পাখির ছবি আঁকতেন। আরও কত কি? কিন্তু রাজার এসব কাজ একদম পছন্দ হতো না। তিনি রানীকে অনেকবার বারণ করার পরও রানীর কোন পরিবর্তন হয়নি। রানী নিজের কাজ নিয়েই থাকেন। রাজার কথায় আমলেই নিতেন না। এ কারণে রাজা রানীর ওপর মাঝে মাঝে রাগ করতেন। টোনা বলল, রাগ করারই কথা। টোনার কথা শুনে টুনি বলল, আমার গল্প বলার সময় কথা বললে কিন্তু গল্প বলব না। আমার মাথায় গ-গোল লেগে যায়। টোনা বলল, আচ্ছা, ঠিক আছে। আর কথা বলব না। টুনি আবার বলতে শুরু করে। একদিন ওই রাজ্য অন্য দেশের শত্রুরা আক্রমণ করল। রাজা সৈন্য-সামন্ত নিয়ে যখন যুদ্ধে যাচ্ছিলেন তখনও কিন্তু রানী সুঁইসুতোর কাজ নিয়ে ব্যস্ত। তখন রাজা রেগে আগুন হয়ে গেলেন এবং বিড়বিড় করে বললেন, এবার যদি ফিরে আসি তাহলে তোমাকে চরম শাস্তি দেব। যুদ্ধ জয় করে রাজা প্রাসাদে ফিরে এসে রানীর খোঁজ-খবর নিলেন। রাজা জানতে পারলেন রানী সুঁইসুতো নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। বড় অবাক কা-! রাজা আবার রেগে আগুন হয়ে গেলেন। তিনি রানীকে ডেকে বললেন, আমি অত্যন্ত দুঃখিত। তোমার জন্য এই রাজপ্রাসাদ উপযুক্ত স্থান নয়। তুমি বরং নির্জন বনে একাকী জীবনযাপন কর। আর তোমার সুঁইসুতো নিয়ে কাজ কর। তিনি পাইকপেয়াদাকে হুকুম করলেন, রানীর মর্যাদা দিয়ে তাঁকে বনবাসে পাঠানো হোক। কিন্তু খুবই অবাক কা- যে, রাজার হুকুম শুনেও রানীর কোন পরিবর্তন হলো না। রানী রাজার হুকুম মাথা পেতে মেনে নিয়ে বনবাসে যাওয়ার জন্য তৈরি হলেন। রাজার যদিও মন খারাপ হয়েছে তবু কিছু করার ছিল না। রানী যদি এমন হয় তাহলে রাজ্য সামলানোই কঠিন। তিনি রানীকে কয়েক বাক্স সোনার সুঁই আর কয়েক বাক্স সুতো দিয়ে সম্মানের সঙ্গে বনবাসে পাঠালেন। রাজা ভাবলেন, সেখানে থেকে যদি রানীর মনের পরিবর্তন হয় তাহলে আবার প্রাসাদে ফিরে আসবেন। একদিন রানী ঠিকই পালকিতে চড়ে স্বাভাবিকভাবেই বনবাসে গেলেন। টোনা বলল, রানী বড্ড বোকা। রাজপ্রাসাদ ছেড়ে কি কেউ বনবাসে যায়? টুনি রেগে গেল। সে বলল, দেখো টোনা। তুমি বলছিলে গল্প বলার সময় কথা বলবে না। তাহলে কথা বললে যখন আমি আর গল্প বলব না। গল্পটা শেষ করো না গো। শেষ না করলে মনে যে বড় আফসোস থাকবে গো। টুনি বলল, তাহলে আর কথা বলবে না। ঠিক আছে? টুনি আবার বলতে শুরু করে। ওই বনে ছিল অনেক পাখির বসবাস। একদিন ঘটে গেল এক ঘটনা। একটি ভয়ানক ঝড় হলো। সেই ঝড়ে বাবুই পাখির ছানারা মারা গেল। আর ছানাদের শোকে বাবুই পাখি কেঁদে কেঁদে সারা। একদিন রানী একটি গাছের নিচ দিয়ে হাঁটছিলেন। তখন তিনি শুনতে পেলেন বাবুই পাখির কান্না। রানী বাবুইকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কাঁদছ কেন? বাবুই বলল, ঝড়ে আমার ছানারা মারা গেছে। আমার কোন বাসা না থাকাতেই এমন হলো। বাবুই পাখির কথা শুনে রানীর মন খুব খারাপ হলো। কিন্তু তিনি কী করবেন? তার তো কিছুই করার নেই। শেষে রানী বাবুই পাখিকে বললেন, তুমি আমার কাছে বেড়াতে এসো। আমিও একা থাকি। তোমার সঙ্গে কথা বললে দুজনেরই মনের কষ্ট দূর হবে। পরদিন বাবুই পাখি গেল রানীর কাছে। রানীর পাশে বসে নানা রকম গল্প করল। বাবুই পাখি দেখে রানী সুঁই দিয়ে কত রকমের কাজ করেছেন। চোখ জুড়িয়ে যায়। বাবুই পাখির মন আনন্দে নেচে উঠল। বাবুই রানীকে বলল, তুমি আমাকে একটি সোনার সুঁই দেবে? রানী হেসে বলল, কেন? তুমি সুঁই দিয়ে কী করবে? বাবুই পাখি বলল, আমি এমন সুন্দর বাসা বানাব যে বাসা কোন পাখি এখন পর্যন্ত বানাতে পারেনি। আর এই বাসায় আমার ছানারা থাকবে নিরাপদে। বাবুই পাখির কথা শুনে রানীর বেশ ভাললাগল। রানী বাবুই পাখিকে এক বাক্স সোনার সুঁই দিলেন। বাবুই খুশি হয়ে চলে গেল। পরদিন থেকে বাবুই পাখি বাসা বুনতে শুরু করে দিল। আর দিনের পর দিন খেটে এমন বাসা বুনল যা আর কোন পাখিই এমনটি পারেনি। সেই বাবুই পাখির বাসা দেখে অন্য বাবুই পাখিরাও বাসা বুনতে শিখে গেল। তখন থেকেই বাবুই পাখি এতো সুন্দর বাসা বানায়। বাসা এতো সুন্দর হলে কী হবে? বাবুই পাখির মনে কিন্তু এখনও দুঃখ আছে। কারণ যে সোনার সুঁই দিয়ে বাসা বুনে সেটি বাসা বোনার পরই সেখানেই হারিয়ে যায়। বাবুই পাখি আর খুঁজে পায় না। এখন সব বাবুই পাখি খুব চিন্তায় থাকে সেই রানীর দেয়া সুঁইগুলো যদি শেষ হয়ে যায় তখন কি পারবে এমন বাসা বানাতে? টোনা বলল, তাই তো বলি বাবুই কী করে এতো সুন্দর বাসা বানায়। টুনি বলল, এমনি এমনি করে কি আর এতো সুন্দর বাসা বানায়? সবই ওই রানীর জন্য। বুঝলে টোনা, সবই ওই রানীর জন্য।
×