ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গারাও যাবে না ৬ দফা পূরণ না হলে

প্রমাণ ছাড়া কাউকে ফেরত নেবে না মিয়ানমার

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ৬ এপ্রিল ২০১৮

প্রমাণ ছাড়া কাউকে ফেরত নেবে না মিয়ানমার

মোয়াজ্জেমুল হক/ এইচএম এরশাদ ॥ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি দিন দিন কেবল জটিলই হচ্ছে। মিয়ানমার সরকারের পক্ষে স্পষ্টভাবে আবারও বলে দেয়া হয়েছে, সে দেশে বসবাস করত এমন কোন প্রমাণ ছাড়া তারা কাউকে নেবে না। পক্ষান্তরে, রোহিঙ্গা সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের নাগরিকত্ব প্রদানসহ ছয় দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত স্বেচ্ছায় তারা মিয়ানমারে ফিরে যাবেনা। এ অবস্থায় আগামী জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে উখিয়া টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তর শুরু হবে বলে সরকারের দায়িত্বশীল একটি সূত্রে জানানো হয়েছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ভাসানচরে ৫০ হাজার রোহিঙ্গার জন্য অস্থায়ী আশ্রয় শিবির গড়ে তোলা হয়েছে। পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে অবশিষ্টদের জন্য অনুরূপ আশ্রয় শিবির প্রস্তুত হয়ে যাবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে যাবতীয় আলোচনা এখন শ্লথগতি। পত্র চালাচালি এবং বৈঠক চললেও মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যরা নিজ নিজ সিদ্ধান্তে অটল অবস্থানে রয়েছে। রোহিঙ্গাদের মাঝে আলোচনা একটিই। আর তা হচ্ছে নাগরিকত্ব প্রাপ্তিসহ ছয় দফা দাবি পূরণ হলেই তারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে। টেকনাফ ও উখিয়ায় আশ্রিত রোহিঙ্গাদের একটিই বক্তব্য তারা সকলে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা। অপরদিকে, মিয়ানমার পক্ষকে বাংলাদেশের পক্ষে প্রেরিত আট সহস্রাধিক রোহিঙ্গার তালিকার মধ্যে সে দেশে ইতোপূর্বে বসবাসকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে মাত্র ৬৯৫। এদের মধ্যে ১০ জন চিহ্নিত হয়েছে জঙ্গী হিসেবে। এ অবস্থায় প্রথম পর্যায়ে প্রেরিত ৮ হাজার ৩২ জনের মধ্যে ৬৮৫ রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে মিয়ানমার। মিয়ানমারের ইমিগ্রেশন ও পপুলেশন ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা, সচিব মিন্ট কায়িং সে দেশের গণমাধ্যমকে একথা জানিয়েছেন বলে সীমান্তের ওপারের সূত্রগুলো জানিয়েছে। মিন্ট কায়িং নিশ্চিত করেছেন, বাংলাদেশ থেকে যে ৮ হাজার ৩২ জনের তালিকা দেয়া হয়েছে সেখান থেকে যাদের নেয়া হবে তাদের তালিকা অনুমোদন দিয়ে এদেশে প্রেরণ করা হয়েছে। ৮ হাজার ৩২ জনের তালিকার মধ্যে অবশিষ্টদের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয়নি। রোহিঙ্গাদের কারণে ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য ॥ রোহিঙ্গারা বনভূমি ধ্বংস করে দখলে নেয়ায় মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে প্রাণিকুল। টেকনাফ ও উখিয়ায় সামাজিক বনায়নসহ প্রায় ৭ হাজার একর বনভূমি দখল করে ঝুপড়ি তৈরি করে বসবাস করছে রোহিঙ্গারা। এ কারণে উখিয়া ও টেকনাফ এলাকায় আগের মতো পশু-পাখি দেখা মেলেনা। বন্য হাতির পালও অদূরে পাহাড়ে-জঙ্গলে অসহায় হয়ে পড়েছে। হাতির ভয়ে লাকড়ি সংগ্রহ বা সামাজিক বনায়ন রক্ষণাবেক্ষণ করতে যেতে পারছে না স্থানীয়রা। হাতি চলাচলের জন্য বহু করিডর দখল করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং বিভিন্ন এনজিও সংস্থার অফিস স্থাপন করা হয়েছে। গত ৭ মাসে হাতির আক্রমণে ১৩ রোহিঙ্গা নিহত ও আহত হয়েছে ২০ জন। ২০ এপ্রিলের মধ্যে ২৪ হাজার রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর ॥ উখিয়া কুতুপালং আশ্রয় শিবিরে অন্তত ২ লাখ রোহিঙ্গা ভূমিধসের ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে অতি ঝুঁকিতে থাকা ২৪ হাজার মিয়ানমারের নাগরিককে ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। আগামী ২০ এপ্রিলের মধ্যে তাদের অন্যত্র স্থানান্তর করা হবে বলে জানা গেছে। আগামী জুনে ভাসানচরে স্থানান্তর ॥ আগামী জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের কাজ শুরু হবে। সরকারী সূত্রে এ তথ্য দিয়ে বলা হয়েছে, ভাসানচরে ইতোমধ্যে ৫০ হাজার রোহিঙ্গার জন্য অস্থায়ী আশ্রয় শিবির নির্মিত হয়েছে। আগামী দুমাসের মধ্যে আরও প্রস্তুত হবে। সরকার পক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব শাহ কামাল গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, যেসব রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় যেতে চাইবে কেবল তাদেরই ভাসান চরে নেয়া হবে।
×