ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী

উন্নয়নশীল দেশ হওয়ায় বৈদেশিক ঋণ কমবে না

প্রকাশিত: ০৭:০৯, ২২ মার্চ ২০১৮

উন্নয়নশীল দেশ হওয়ায় বৈদেশিক ঋণ কমবে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উন্নয়নশীল দেশ হওয়াতে বাংলাদেশের রফতানি ও বিদেশী ঋণপ্রবাহ কমার কোন আশঙ্কা নেই। বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেছেন, উন্নয়নশীল দেশ হলে আমাদের রফতানি ও ঋণ কমবে না। বরং দাতাদের সঙ্গে বড় অঙ্কের ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে সুদের হার নির্ধারণে নেগোসিয়েশনের সুযোগ তৈরি হবে। আগে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দাতাদের শর্ত মতে ঋণ নিতে হতো। এছাড়া পোশাক খাতের পাশাপাশি নতুন করে আইসিটি (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি), চামড়া এবং ওষুধ শিল্প রফতানি খাতে অনেক সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। এসব নতুন পণ্য আগামীতে বাংলাদেশের রফতানি প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে। বুধবার স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়া উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান পরিকল্পনামন্ত্রী। শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় মন্ত্রী আরও বলেন, আমরা আমেরিকা ও ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে আমরা বিশেষ কোন শুল্ক সুবিধা ছাড়াই পোশাক রফতানি করি। তাই পোশাক খাতে রফতানি আয় কমার আশঙ্কার কোন কারণ দেখছি না। তিনি বলেন, সাধারণত এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশ হলে বেসরকারী ও বিদেশী বিনিয়োগ অনেক বেড়ে যাবে। আমরা আশা করছি, বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তাই হবে। বিনিয়োগ যত বাড়বে রফতানিও ততই বাড়বে। মন্ত্রী বলেন, আমরা এখন আর গরিব নই। স্বাধীনতার তিন বছর পর আমরা এলডিসিতে তালিকাভুক্ত হয়েছিলাম। কিন্তু এরপর পর উন্নয়নশীল দেশে যেতে ৪৩ বছর লাগল। মন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের যে তিনটি মানদ-ের সূচকে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশ হয়, সে তিনটি সূচকই বাংলাদেশ খুব ভালভাবে অর্জন করেছে। এখন আমরা ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ভারত এবং শ্রীলঙ্কার মতো উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশ করেছি। এটা গর্ব করার মতো অর্জন। এ অর্জন দেশের সবার। এখন আমাদের স্বপ্ন ২০৪১ সালে আমরা উন্নত দেশের কাতারে চলে যাব। এটা বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব। মন্ত্রী বলেন, আমরা মাত্র নয় বছর আগে ৫৮তম অর্থনীতির দেশ ছিলাম। এখন আমরা ৪৩তম অর্থনীতির দেশ হয়েছি। এ বছরের মধ্যে আরও দুই-তিনটা দেশকে টপকে যেতে পারবো বলে আশা করছি। তিনি বলেন, আমরা নয় বছরে ১৫টি দেশকে পেছনে ফেলেছি। আগামী ২৩ বছরে আরও ২৩টি দেশকে টপকে ২০৪১ সালে আমরা পৃথিবীর সেরা বিশ অর্থনীতির দেশে প্রবেশ করতে পারব। তবে চলার পথ সবসময় যে মসৃণ হবে সে সতর্কবাণী মনে করিয়ে দিয়ে মন্ত্রী বলেন, মানুষ একা হাঁটতে পারে কিন্তু পৃথিবীর কোন দেশ একা হেঁটে উন্নতি করতে পারে না। তাছাড়া অর্থনীতিতে লিফটে চড়ার সুযোগ নাই, উপরে উঠতে হবে সিঁড়ি ভেঙ্গে। এ সময় মন্ত্রী উন্নয়নশীল দেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড (জনমিতির সুবিধা) থেকে সুবিধা আদায়ের আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তার মতে, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের ক্ষেত্রে পৃথিবীতে আমাদের মতো সুবিধায় আর কেউ নেই। আমাদের মোট জনসংখ্যার ৬৭ শতাংশ কর্মক্ষম। এত বিপুল কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী আর কারও নেই। উন্নত বাংলাদেশের জন্য অবকাঠামো, শিক্ষিত ও দক্ষ জনগোষ্ঠী জ্বালানি ও বিদ্যুত এবং বেসরকারী বিনিয়োগকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ইতিমধ্যেই পায়রা ও মাতাবাড়িতে দুটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। একইভাবে নয় বছর আগে মাত্র তিন হাজার মেগাওয়াট থেকে বিদ্যুত এখন পনের হাজার মেগাওয়াটের বেশি উৎপাদসক্ষমতা আমাদের হয়েছে। আগামী ২০৩০ সালে ৩৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব হবে বলে জানান তিনি। তাছাড়া সরকারী বেসরকারী অংশগ্রহণের ভিত্তিতে (পিপিপি) কাজ করলে আমাদের বেসরকারী খাতের চাহিদা পূরণ করতে হবে।
×