ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাতিসংঘ বিশেষ দূতের সংবাদ সম্মেলন

রোহিঙ্গাদের নিশ্চিহ্ন করতেই নিধন নির্যাতন

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৪ মার্চ ২০১৮

রোহিঙ্গাদের নিশ্চিহ্ন করতেই নিধন নির্যাতন

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরে যাওয়াটাই একমাত্র সমাধান বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা সফররত জাতিসংঘ মহাসচিবের গণহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক বিশেষ দূত আদামা দিয়েং। তিনি আরও বলেছেন, রোহিঙ্গাদের পরিকল্পিতভাবে নিশ্চিহ্ন করতেই জাতিগত নিধন, নির্যাতন ও আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। আর এই সঙ্কট সমাধানে মিয়ানমারকে কার্যকর ভূমিকা নিতে দেখা যাচ্ছে না। মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। এছাড়া মঙ্গলবার সচিবালয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন আদামা দিয়েং। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিবের গণহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক বিশেষ দূত আদামা দিয়েং বলেন, রাখাইনে রোহিঙ্গা সঙ্কটের উদ্ভব হয়েছে। সেখানেই এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরে যাওয়াটাই একমাত্র সমাধান বলে তিনি মন্তব্য করেন। আদামা দিয়েং বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু আমরা আর ব্যর্থ হতে চাই না। এ ঘটনায় মিয়ানমারের পুরো সেনাবাহিনী জড়িত বলে আমি মনে করি না। গুটি কয়েক সেনা এতে জড়িত বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। জাতিসংঘের বিশেষ দূত বলেন, আমি এ সম্পর্কে জানতে মিয়ানমার যেতে চেয়েছি। কিন্তু তারা এখনও আমাকে ভিসা দেয়নি। আমি আশা করি তারা দ্রুত এটা দিয়ে দেবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাশিয়া ও চীনের অবস্থা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি আশা করি আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো শুধু অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিকভাবে না দেখে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে পদক্ষেপ নেবে। এক সপ্তাহের সফরে গত ৭ মার্চ বাংলাদেশ আসেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত আদামা দিয়েং। পরেরদিন দুপুরে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যান। সেখানে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন এবং রাখাইনের গণহত্যা-বর্বরতার সাক্ষী বাস্তুচ্যুত নারী-পুরুষদের সঙ্গে কথা বলেন। পালিয়ে রক্ষা পাওয়া রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে সরাসরি তাদের দুর্দশার কথা শোনেন জাতিসংঘ দূত। নিউইয়র্কে ফিরে তিনি এ নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব এ্যান্তনিও গুতেরেসের কাছে রিপোর্ট করবেন বলে জানান। আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ এলে সাক্ষী হিসেবে এটি আমলে নেয়ার সুযোগ থাকবে বলে আশা করছে রোহিঙ্গা সঙ্কটের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী বাংলাদেশ। আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক ॥ এদিকে মঙ্গলবার সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেন জাতিসংঘ মহাসচিবের গণহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক বিশেষ দূত আদামা দিয়েং। বৈঠকের পর আনিসুল হক জানান, রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মিয়ানমারের অবস্থান আগের চেয়ে খুব একটা পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে করেন না জাতিসংঘ মহাসচিবের গণহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক বিশেষ দূত আদামা দিয়েং। আনিসুল হক জানান, মহাসচিবের গণহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক বিশেষ দূত বলেছেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে নিদর্শন দেখিয়েছেন তা অনুকরণীয় এবং প্রশংসনীয়। তাই বিশ্ব এখন এ সমস্যার বিষয়ে চোখ বন্ধ করে রাখতে পারবে না। জাতিসংঘ চেষ্টা করবে সব দেশ মিলে মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করে সমস্যার সমাধান করার। আর চাপ সৃষ্টি করার জন্য জাতিসংঘ যা কিছু করা দরকার সবই করবে। রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মিয়ানমারকে চাপ দেয়ার বিষয়ে জাতিসংঘ অত্যন্ত সিরিয়াস। তিনি ফিরে গিয়ে এ বিষয়ে কাজ শুরু করলে আমরা বুঝবো তারা কতটা সিরিয়াস। আইনমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে এবং তারপর খুনীদের বাঁচাতে যে ‘ইনডেমিনিটি অডিয়েন্স’ করা হয়েছিল, তা তুলে ধরেছি। আমি মহাসচিবের বিশেষ গণহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক উপদেষ্টাকে বলেছি, আমরা মনে করি আইনের শাসন এবং বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য মানবতার বিরুদ্ধে যারা অপরাধ করে তাদের বিচার হওয়া উচিত। বিচারে দোষী প্রমাণিত হলে তাদের সাজা হওয়া উচিত। ২৫ মার্চের গণহত্যার বিষয়ে তাকে অবহিত করা হয়েছে।
×