ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

নাটোর শহরে সড়ক প্রশস্তকরণে অনিয়ম

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ১৪ মার্চ ২০১৮

নাটোর শহরে সড়ক  প্রশস্তকরণে অনিয়ম

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর, ১৩ মার্চ ॥ নানা অনিয়মের মধ্যে দিয়ে নাটোর শহরে চলছে রাস্তা প্রশস্তকরণ কাজ। অবৈধভাবে গাছ কর্তন, উচ্ছেদে লেনদেন, দায়সারা ড্রেন নির্মাণসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল। আর এ কারণে নাটোরবাসীর প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ না হওয়ায় প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য থেকে নাটোরবাসী বঞ্চিত হবে বলে জানিয়েছেন তারা। তবে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সওজ বিভাগ। নাটোর সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম বলেন, কোন অনিয়মের অভিযোগ পাইনি। কোথাও কোন অনিয়ম দেখা গেলে ঠিকাদারকে বলে তাৎক্ষণিক তা সংশোধন করা হয়েছে। তিনি জানান, অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দ না থাকায় আপাতত ড্রেন নির্মাণ না করে সড়ক প্রশস্ত করা হচ্ছে। এছাড়া উচ্ছেদের নামে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। সূত্রে জানা গেছে, নাটোর শহরের ভিতর দিয়ে প্রায় ৬ কিলোমিটার রাস্তার প্রশস্তকরণ ও ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। এর আগে রাস্তা নির্মাণের জন্য সওজ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে নামে। শুরু হয় মাপজোক ও চিহ্নিত করার কাজ। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ শাখা, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ইচ্ছামতো মাপজোক করায় অনেক বৈধ জমির মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হন। টাকা দিয়ে অনেকে অবৈধ জায়গা টিকিয়ে রেখেছে। আবার টাকা না দেয়ায় অনেকের বৈধ জায়গা ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। ফলে আতঙ্কে অনেকেই টাকা দিতে বাধ্য হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল। এছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই রাস্তার দুই ধারের গাছকাটা হয়েছে। অন্যদিকে, রাস্তার পাশে ড্রেন নির্মাণের প্রকল্প থাকলেও তা পরিবর্তন করে সওজের সীমানা ঘেঁষে করা হচ্ছে। ফলে ড্রেন সমান্তরাল না হয়ে আঁকাবাঁকা হচ্ছে। এতে পানি না নেমে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ড্রেন নির্মাণের ক্ষেত্রে আটটি রড ব্যবহার করার কথা থাকলেও কোথাও পাঁচটি, কোথাও ছয়টি বা সাতটি করে রড ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া দরপত্রে ব্রোকেন স্টোন (ভাঙ্গা পাথর) ব্যবহারের কথা থাকলেও ব্যবহার করা হচ্ছে আস্ত পাথর। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ১২ ডিসেম্বর নাটোর শহরের কানাইখালী মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহরের প্রধান সড়ক প্রশস্ত করার প্রতিশ্রুতি দেন। এ অনুযায়ী ৫৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার সড়ক দুই লেনের কাজ শুরু করা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শামিম এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেড এবং মীর হাবিবুল আলম ও মীর শরিফুল আলম যৌথভাবে কাজটি পায়। গত বছর ৬ অক্টোবর স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের উদ্বোধন করেন। সড়কের মধ্যে ১ দশমিক ২০ মিটার বিভাজক ও দুই পাশে ১ দশমিক ২০ মিটার করে ড্রেন রয়েছে। মূল রাস্তা রাখা হয়েছে ৯ মিটার করে ১৮ মিটার। শহরের কান্দিভিটার বাসিন্দা ও সাংস্কৃতিক সংগঠক সাজিদ আলী ঝর্না বলেন, ছায়াবাণী সিনেমা হল থেকে কেন্দ্রীয় মসজিদ মার্কেটের সামনে নিমতলা মোড়ের পশ্চিম পাশে ৪৮ ফুট জায়গা না থাকায় ড্রেন বাদ দিয়েই রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া অনেক স্থানে ৪৮ ফুট জায়গা না থাকায় রাস্তা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। শহরের বাসিন্দা, বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক ও চিকিৎসক জাকির তালুকদার বলেন, একটি পরিকল্পিত সড়ক নির্মাণের প্রত্যাশা দীর্ঘদিন ধরে লালন করে আসছে শহরবাসী। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণসহ নিম্ন মানের কাজের সন্দেহ করা হচ্ছে। এজন্য শহরবাসী হতাশ। আমরা চাই, দরপত্রের শর্তানুযায়ী কাজ হবে। কিন্তু তা হচ্ছে না। এটি দুঃখজনক। এর ফলে সরকারের সম্পদের অপচয় হচ্ছে। নাটোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, দরপত্র অনুযায়ী যেখানে যে পরিমাণ সিমেন্ট, রড দেয়ার কথা তা দেয়া হচ্ছে না। এছাড়া ড্রেন নির্মাণকাজে পুরাতন ইটের খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। মাটি খননের পর রোলার করার নিয়ম থাকলেও, তা করা হচ্ছে না। খোয়া ও ইট ব্যবহার শর্তানুযায়ী হচ্ছে না। এরই মধ্যে কাজের মান নিয়ে নাটোরবাসী ক্ষুব্ধ হয়েছে।
×