ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৪৮ যুদ্ধবিমান কিনছে রিয়াদ

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ১১ মার্চ ২০১৮

৪৮ যুদ্ধবিমান কিনছে রিয়াদ

সৌদি আরব ৪৮ টি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান কেনার জন্য ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে এক অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের যুক্তরাজ্য সফরের শেষ দিনে চুক্তিটি চূড়ান্তভাবে স্বাক্ষরিত হলে তা ব্রিটিশ বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বিএইর জন্য একটি বিরাট অর্থনৈতিক সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হবে। টাইফুন জেট বিমান নির্মাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির বেশ সুনাম আছে। কিন্তু সম্প্রতি টাইফুন জেটের বিক্রি কমে যাওয়ায় এবং অন্যান্য পারিপার্শি¦ক কারণে সংস্থাটি আর্থিক জটিলতার সম্মুখীন হওয়ায় এতে কর্মরত ৩৫ হাজার কর্মী থেকে ১৪০০ কর্মীকে পর্যায়ক্রমে ছাঁটাই করার পরিকল্পনা গৃহীত হয়। কিন্তু ৪৮টি টাইফুন জেটের মূল্য বাবদ প্রায় দশ বিলিয়ন পাউন্ড অর্থ পাওয়া গেলে তা শুধু বিমান সংস্থাটিকেই টিকে থাকতে সহায়তা করবেনা এটি ব্রিটিশ অর্থনীতিকেও চাঙ্গা করে তুলতে সহায়ক হবে। এর আগে বিএই কোম্পানি গত ডিসেম্বরে কাতারের কাছে ২৪টি টাইফুন জেট বিক্রি বাবদ পাঁচ বিলিয়ন পাউন্ডের এক চুক্তি স্বাক্ষর করে। ইউরোপীয় দেশগুলো বিশেষ করে ব্রিটেন তাদের অস্ত্র বিক্রির বাজার হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃৃদ্ধ দেশগুলোকে লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছে। দেশগুলো পারস্পরিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা এ আঞ্চলিক আধিপত্য কায়েমের লক্ষ্যে অস্ত্র সংগ্রহের প্রাণান্তকর প্রচেষ্টায় নিয়োজিত। এ জন্য তারা পানির মতো পেট্রো ডলার খরচ করে চলেছে। সৌদি আরবের যুবরাজ যে অস্ত্র ক্রয়ের এক শাঁসালো খদ্দের তা বুঝতে পেরেই তাকে ব্রিটেনে রাজকীয় সংবর্ধনা দেয়া হয়। বিমানবন্দরসহ সর্বত্র লালগালিচা সংবর্ধনা, লন্ডনের মোড়ে মোড়ে মোহাম্মদ বিন সালমানের আলোকিত প্রতিকৃতি, রানীর সঙ্গে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সাক্ষাত, প্রধানমন্ত্রী টেরেসার সঙ্গে একান্ত ভোজ প্রভৃতির মাধ্যমে তাকে এক অনন্য রাষ্ট্রীয় অতিথির মর্যাদা দেয়া হয়। এরই এক পর্যায়ে এমবিএস (যুবরাজ মোহাম্মদ) এর সঙ্গে প্রিন্স চার্লস ও তৎপুত্র প্রিন্স উইলিয়ামের সঙ্গেও সাক্ষাত ঘটে। এদিকে লন্ডনের স্টক এক্সচেঞ্জ মার্কেট সৌদি আরবের আরাম কো তেল কোম্পানিকে ব্রিটিশ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার জন্য সরকারের ওপর চাপ দিচ্ছে। তাদের যুক্তি হচ্ছে যে, এতে করে সে দেশের পুঁজিবাজার ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছে যাবে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে উপসাগরীয় বিভিন্ন তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের মাধ্যমে ৬৫ বিলিয়ন পাউন্ড ব্রিটিশ অর্থনীতিতে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। কিন্তু সৌদি নেতৃত্বাধীন উপসাগরীয় জোটভুক্ত দেশগুলো ইয়েমেনে যে তা-বলীলা চালাচ্ছে তাতে জাতিসংঘসহ বিশ্বের সমস্ত বিবেকসম্পন্ন মানুষ সমালোচনামুখর হয়ে উঠেছে। ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা ও গোলন্দাজ বাহিনীর অভিযানে নারী শিশুসহ বেসামরিক লোকের নিহত হওয়ার ঘটনা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। জাতিসংঘ ও অন্যান্য সূত্র মারফত জানা গেছে যে, ২০১৫ সালের মার্চ মাস থেকে ২০১৭’এর ডিসেম্বর পর্যন্ত ইয়েমেনে প্রায় ১৪ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং এদের পাঁচ হাজারই বেসামরিক নাগরিক। সরাসরি বিমান ও অন্যান্য সেনা অভিযানে নিহতদের এই চিত্র ছাড়াও সৌদি জোট আরোপিত ইয়েমেনের সমুদ্র বন্দরগুলোতে অবরোধ আরোপের ফলে সে দেশে অনাহার, অর্ধাহার ও অপুষ্টিতে বহু লোক মৃত্যুর মুখে অবস্থান করছে। সেখানে কলেরা মহামারি আকারে দেখা দেয়ায় ওষুধ ও পথ্যের অভাবে বহু লোকের অকাল মৃত্যু হয়। এমতাবস্থায়, নতুন করে সৌদি সমরাস্ত্র ভা-ারে যদি ৪৮টি টাইফুন জেট যুক্ত হয় তবে দেশটি কাতারসহ অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের বিরুদ্ধে ভয়াবহ হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। তাই যুদ্ধবিরোধী মানবতাবাদী সংগঠনগুলো এই যুদ্ধ বিমান বিক্রির সমালোচনা করে তাদের বক্তব্য দিয়েছে। সমরাস্ত্র বাণিজ্যবিরোধী সংগঠনের পক্ষ থেকে এন্ড্রু স্মিথ বলেছেন, এই লজ্জাকর চুক্তি কার্যকর হলে এ থেকে লাভবান অস্ত্র তৈরি কোম্পানিগুলো। সৌদি রাজপ্রাসাদে উৎসব করবে, অন্যদিকে ইয়েমেনে অধিকতর ধ্বংসলীলার পথ উন্মুক্ত হবে। কিন্তু পরবর্তী কয়েক দশক ধরে ব্রিটেনকে সৌদি আরবের এসব ধ্বংসাত্মক কাজের সহযোগী হয়ে গ্লানিকর সম্পর্কে জড়িয়ে যেতে হবে। বর্তমানে সৌদি যুবরাজকে যে লাল কার্পেট সংবর্ধনা দেয় হচ্ছেÑ ভবিষ্যতে টেরেসা মে কে তা কত নিচে নামাবে এখন সেটি দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিনও এই অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করার আহ্বান জানিয়ে ইয়েমেনে বোমাবর্ষণ বন্ধ ও সেখানে অস্ত্রবিরতি কার্যকরের আহ্বান জানান। অন্যদিকে, ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্যাবিন উইলিয়ামসন বলেন, এর মাধ্যমে দুটি দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায় যুক্ত হলো। আমরা টাইফুন জেট বিক্রির আরেকটি চাহিদাপত্র চূড়ান্ত করার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করব। এতে ব্রিটিশ সমরাস্ত্র শিল্প লাভবান ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। ‘ফলশ্রুতিতে বিমান নির্মাণ খাতে আমাদের অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থানও অটুট থাকবে।’ তার কথার সূত্র ধরে বিএই বিমান নির্মাণ সংস্থার প্রধান নির্বাহী চার্লস উডবার্ন বলেন, সৌদি আরব তাদের সশস্ত্র বাহিনী আধুনিকায়নে যে উদ্যোগ নিয়েছে আমরা তাতে সহযোগিতা করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। সৌদি যুবরাজের রূপকল্প-২০৩০ বাস্তবায়নে সে দেশের প্রধান প্রধান শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে আমরা সাহায্য সমর্থন দিয়ে যাব। উল্লেখ্য, রূপকল্প ২০৩০ এর মধ্যে নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন সামাজিক ক্ষেত্রে নানা ধরনের সংস্কার কাজ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সে জন্য মোহাম্মদ বিন সালমান তার সমর্থকদের কাছে প্রশংসিত হয়েছেন । -ইন্ডিপেন্ডেট
×