ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পদত্যাগের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি॥ শিক্ষামন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

পদত্যাগের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি॥ শিক্ষামন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বারবার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মুখে সমালোচনায় থাকা শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, আমার পদত্যাগের সংবাদের কোন সত্যতা ও ভিত্তি নেই। আমার পদত্যাগ করার মতো কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। কোন অন্যায়কারীকে আমরা প্রশ্রয় দেই না। শক্ত হাতে তা প্রতিরোধ করা হচ্ছে। আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য কিছু গণমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। এসব বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ থেকে সর্বসাধারণকে বিরত থাকার আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ বিষয় নিয়ে গতকাল সিলেটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে তিনি ব্যাখ্যাও দিয়েছেন বলে জানান। তিনি বলেন, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেশের উচ্চশিক্ষায় সেশনজট নিরসনে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। তবে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় এখনও ন্যূনতম শর্তপূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এদের বেশি দিন চলতে দেয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। শনিবার রাজধানীর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন। দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি, ভর্তিসহ সব ব্যয় সহনীয় পর্যায়ে রাখার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গী কার্যক্রম সংক্রান্ত সংশ্লিষ্টতা ছিল, আমরা শক্ত হাতে তা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছি। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে তোমরা আজ এ পর্যায়ে এসেছ। তাই সমাজ থেকে নতুন শিক্ষা নিয়ে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশ ও রাষ্ট্রের জন্য অবদান রাখতে হবে। কনভোকেশন স্পীকার নোবেলবিজয়ী ড. মার্টিন শেলপি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা বেশি উপদেশ না শুনে নিজেদের মৌলিক সত্তাকে বেশি গুরুত্ব দেবে। প্রত্যেককে স্ব-স্ব স্থান থেকে সমাজে অবদান রাখতে হবে। নিজ জীবনের ঘটনা মূল্যায়ন করে তিনি বলেন, আমার বাবা স্কুলের গ-ি পেরুতে পারেনি। টিউশন ফির অভাবে মা কলেজের গ-ি পার হতে পারেননি। কিন্তু আমার প্রবল ইচ্ছা ছিল বিজ্ঞানী হওয়ার। সে অনুযায়ী আমি গবেষণারত ছিলাম। কিন্তু সেই গবেষণা ব্যর্থ হয়। তিনি বলেন, আমাকে বলা হয় নিজের বুদ্ধিমত্তা না থাকলে গবেষণা করা যায় না। এরপর আমি গবেষণা ছেড়ে দিয়ে হাইস্কুলে শিক্ষকতা করি। তখন আমার এক সহকর্মী আমাকে আবার গবেষণার সুযোগ করে দেন। এরপর আমি বুঝতে পারি গবেষণা বিভিন্নভাবে হতে পারে। পরে সেই কাজে আমি সফল হয়। তাই হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। উল্লেখ্য, ড. মার্টিন শেল ২০০৮ সালে রসায়ন বিভাগে গ্রিন ফ্লোরসেন্ট প্রোটিন বিষয়ে নোবেল পুরস্কার পান। বর্তমানে তিনি নিউইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। সমাবর্তনে আরও বক্তব্য রাখেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাজান, উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম প্রমুখ। এবার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১তম সমাবর্তনে মোট ২ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থীকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেয়া হয়। এর মধ্যে স্নাতক পর্যায়ে ১ হাজার ৯১৮ জন এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ৮৬৭ জন রয়েছে। এছাড়াও সেরা ফলাফলের জন্য দুই জনকে চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক ও ৮ জনকে উপাচার্য স্বর্ণপদক দেয়া হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ নর্থ সাউথসহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জ্ঞান চর্চার পাশাপাশি গবেষণা ও নতুন জ্ঞান সৃষ্টির দিকে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে নাহিদ বলেন, যে জ্ঞান অর্জন করেছ তা সততা, নিষ্ঠা, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানবকল্যাণে ছড়িয়ে দিতে হবে। নিজেকে দেশ ও দশের জন্য ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। বিশ্বের সঙ্গে তালমিলিয়ে বিশ্বমানের, বিশ্বজনীন জ্ঞান অর্জন করতে শিক্ষার্থীদের আদেশ দেন শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যাদের দুই তিনটা ক্যাম্পাস, নিজস্ব ক্যাম্পাস নেই, গুণগত মান অর্জনে ব্যর্থ তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকবে না।
×