স্টাফ রিপোর্টার ॥ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজ কল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, দেশের মূল অর্থনীতি ধ্বংস হয়েছে বিএনপির আমলে। অথচ সেটা নিয়ে আমরা কেউ কথা বলছি না। শুধু তাই নয় পাট ধ্বংসের শুরুও হয় বিএনপির আমলে। অথচ খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য দেশে আজ আন্দোলন হচ্ছে, পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হচ্ছে, কিন্তু সময়ের সোনালী আঁশ পাটের জন্য কেউ আন্দোলন করছে না।
শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক স্মরণসভায় রাশেদ খান মেনন এসব কথা বলেন। জাতীয় শ্রমিক ফেডারশনের সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান ভূঁইয়ার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ স্মরণসভার আয়োজন করে জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন।
এতে অংশ নিয়ে ১৪ দলের অন্যতম শরিক নেতা রাশেদ খান মেনন বলেন, খালেদা জিয়ার সময়ে পাট রক্ষার দাবিতে আমরা আন্দোলন করেছি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন বিরোধী দলীয় নেত্রী। তিনি সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, পাট কল বন্ধ করা যাবে না, পাট কল বন্ধ করলে দেশের মূল অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু তারা (বিএনপি) দেশের সব মিল বন্ধ করে দেয় এবং মিল বন্ধ ও পাট রক্ষার দাবিতে আন্দোলরত শ্রমিকদের ওপরে গুলি চালিয়ে ১৭জন শ্রমিক নেতাকে হত্যা করে।
মেনন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েকটা মিল চালু করলেও তা এখন ভালভাবে চলছে না। কারণ শ্রমিকদের বেতন ভালভাবে দিচ্ছে না। কারও কারও এক দেড় মাসের বেতন বাকি রাখছে মালিক পক্ষ। বেতন না দিলে শ্রমিকরা কাজ করবে কীভাবে।’
বাংলাদেশে হাজার হাজার টন পাট মওজুদ থাকলেও তা রফতানি করার কোন ব্যবস্থা করা হচ্ছে না উল্লেখ করে মেনন বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়কে বারবার অনুরোধ করেছি। কিন্তু পাটের জন্য কোন অর্থ তারা ছাড়বে না। অর্থ ছাড়ে তখন যখন দেখা যায় পাটের সময় শেষ। আমাদের পাট ভারত হয়ে ভিয়েতনামে যায় কিন্তু আমরা সরাসরি রফতানি করতে পারি না। এ রফতানি করার জন্য দেশে কারও কোন উদ্যোগ নেই।
মেনন বলেন, খালেদা জিয়ার প্রথম শাসন আমলেই বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে পাটখাত ধ্বংসের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন শুরু করে। আর বিএনপি-জামাত চারদলীয় জোট শাসনে সেটা পূর্ণতা পায়। আদমজী জুট মিলসহ বিভিন্ন পাটকল বন্ধ করে দেয়া হয়।
জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের প্রয়াত সভাপতি, পাট-বস্ত্র-সূতাকল সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক হাফিজুর রহমান ভূঁইয়ার ১ম মৃত্যুবার্ষিকীতে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেনন আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী থাকার পরও হাফিজ শ্রমিক আন্দোলনে নিজেকে নিয়োজিত করেন এবং পাট শ্রমিকদের অবিসংবাদিত নেতা হয়ে ওঠেন। শ্রমিকদের অর্থনৈতিক দাবি আদায়ের পাশাপাশি তিনি তাদের রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত করেন। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এ দেশের শ্রমিক আন্দোলন একজন প্রাজ্ঞ নেতৃত্বকে হারিয়েছে।
জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কামরুল আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় বিশেষ অতিথি পাট-বস্ত্র-সূতাকল সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক শহীদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশে উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু এই উন্নয়ন কার জন্য? অবশ্যই শ্রমজীবী মানুষের জন্য নয়, ধনী লোকের স্বার্থে। শ্রমিক আন্দোলন এখন শ্রম দাসত্ব আর মালিকের স্বার্থের আবর্তে বন্দী। এই জায়গা থেকে শ্রমিক আন্দোলনকে শ্রমিক স্বার্থ আদায়ে ভূমিকা রাখতে হবে।
সভায় বক্তব্য রাখেন ফেডারেশনের সহসভাপতি হিমাংশু সাহা, নারী বিষয়ক সম্পাদক শাহানা ফেরদৌসী লাকী, করিম জুট মিল লেবার ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন প্রমুখ।