ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালে নৌকার জোয়ার

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বরিশালে নৌকার জোয়ার

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল থেকে ॥ ধান-নদী ও খালের জেলা বরিশাল। শেরে বাংলা, আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের জেলা বরিশালে জোয়ার উঠেছে। এ জোয়ার নৌকার নির্বাচনী গণজোয়ার। দক্ষিণাঞ্চলের এই জোয়ার সারাদেশকে ভাসিয়ে নেবে। উপস্থিত জনতার এমন ধারণায় পরিবেষ্টিত বৃহস্পতিবার বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানের জনসমুদ্রে প্রধান অতিথির ভাষণে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নৌকা মার্কার প্রার্থীদের ভোট দিয়ে পুনরায় আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করার জন্য উপস্থিত জনতাকে হাত তুলে সমর্থন জানানোর আহ্বান করেন। হ্যাট্রিক বিজয়ী সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন আহ্বানে জনসভার মাঠ ছাপিয়ে পুরো নগরীতে ছড়িয়ে পড়া সকলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে হাত তুলে সাড়া দিয়ে নৌকাকে বিজয়ী করার পক্ষে সমর্থন ব্যক্ত করেন। বঙ্গবন্ধু উদ্যান ছিল কানায় কানায় ভর্তি। মাঠ উপচে মানুষের ঢল ছিল প্রায় দুই কিলোমিটার দূরত্বে। নির্বাচনী আমেজে ফুরফুরে মেজাজে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে উপস্থিত মানুষের মধ্যে ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী প্রচারে আহ্বানের অপেক্ষা। প্রধান অতিথির ভাষণে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও তার জোটকে ভোট দিয়ে সরকার গঠনের সুযোগ দিন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলেই দেশের উন্নয়ন হয়। দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আগামী নির্বাচনেও নৌকা মার্কাকে নির্বাচিত করতে হবে। নৌকাকে নির্বাচিত করলে দেশ এগিয়ে যায়। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসলে দেশে লুটপাট হয়, দেশ দুর্নীতিতে বারবার চ্যাম্পিয়ন হয়। তাই দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে আগামীতেও আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করতে হবে। তাই আপনারা হাত তুলে ওয়াদা করেন আগামীতেও নৌকা মার্কার প্রার্থীদের ভোট দেবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে বিশ্ব দরবারে দেশ সম্মানের সাথে এগিয়ে যাবে। ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় নির্বাচন। সেই নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করুন। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসে লুটপাট, দুর্নীতি, সন্ত্রাসী ও এতিমদের টাকা আত্মসাত করতে। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটাতে। বিএনপির নেত্রী এতিমের টাকা পর্যন্ত চুরি করেছে। এতিমখানার টাকা এতিমখানায় যাবে, সেই টাকা তাদের কাছে কেন থাকবে? আজকে এতিমের টাকা চুরি করে ধরা পড়ে গেছে। কারণ এতিমের টাকা মেরে দেওয়া ইসলাম ধর্মও সমর্থন করে না। এতিমের সম্পদ লুটপাট করলে সেই শাস্তি আল্লাহতায়ালা নিজেও দেয়। আজ খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া সেই শাস্তি পেয়ে গেছে। কোর্ট রায় দিয়েছে এখানে আমাদের করার কিছুই নাই। কিন্তু অন্যায় করলে যে শাস্তি পেতে হয় সেটা আজ প্রমাণিত হয়েছে। তাদের লজ্জা থাকলে আর লুটপাট করবে না, দুর্নীতি করবে না। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আরও বলেন, বিএনপি দুর্নীতি করেছে। এতিমের টাকা চুরি করেছে। দেশের সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে। যারা মানুষ পুড়িয়ে মারে, দুর্নীতি করে তাদের বিচার আল্লাহতায়ালাই করেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাজার প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়া এতিমখানার নামে কোটি টাকার দুর্নীতি করেছে বিএনপি। আজ তাদের সাজা হয়েছে। লজ্জা থাকলে ভবিষ্যতে আর দুর্নীতি করবে না খালেদা জিয়া। আদালত রায় দিয়েছে এখানে সরকারের কিছুই করার নেই। দেশের চলমান উন্নয়নের প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, আজ দেশের সর্বক্ষেত্রে উন্নয়নের সুবাতাস বইছে। সেই উন্নয়নের ছোঁয়া বরিশাল ও দক্ষিণাঞ্চলের সর্বত্র লেগেছে। আমরা বরিশালে অনেক ব্রিজ-কালভার্ট ও সড়ক নির্মাণ করেছি। ভোলার গ্যাস পাইপ লাইনের মাধ্যমে বরিশালে নেয়া হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি ঘরে বিদ্যুত ও গ্যাসের শতভাগ চাহিদা পূরণ করতে কাজ করছে সরকার। ২০২১ সালের মধ্যে দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুত পাবে। প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়া হবে। ভোলায় পাওয়ার প্লান্ট করে বরিশালে বিদ্যুত আনা হবে এবং বরিশাল থেকে ভোলা পর্যন্ত সড়ক পথে যাতায়াতের জন্য সেতু নির্মাণ করা হবে। বরিশালে স্বতন্ত্র মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে দেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা ২০০১ সালে পদ্মা সেতুর ভিত্তি প্রস্তর করেছিলাম। কিন্তু খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে পদ্মা সেতুর কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। আল্লাহর রহমতে আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমার বাবা এ দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন। তাই আমিও এ দেশের মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করছি। দুর্নীতি করতে ক্ষমতায় আসিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ বাংলাদেশকে গড়ার কাজ শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, জাতির জনককে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট নির্মমভবে হত্যা করা হয়। ১৯৭৫ এর পর বাংলার মানুষের উন্নয়নের চাকা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সংবিধান লঙ্ঘন করা শুরু হয়েছিল। বিএনপি বরিশালসহ সারাদেশে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। আমি গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দেইনি বলে ২০০১ সালে চক্রান্ত করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে দেয়া হয়নি। সেখানে খালেদা জিয়া দেশের গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। তারা ক্ষমতায় এসে বরিশালের প্রত্যেকটি জেলা ও উপজেলার মানুষের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করে একটা বিভীষিকাময় অবস্থা তৈরি করেছিল। তারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধরে ধরে নির্যাতন করে তখন জেলে ঢুকিয়েছিল। তাদের নির্যাতনের শিকার হয়ে বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলা থেকেই ২৫ হাজার মানুষ সেদিন কোটালীপাড়ার রামশীলে আশ্রয়গ্রহণ করেছিল। পিতা-মাতা নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার অপরাধে সেসময় রাজশাহীর ফাহিমাকে বিএনপির সন্ত্রাসীরা গণধর্ষণ করেছিল। সিরাজগঞ্জের পূর্ণিমা, খুলনার রুপাকে গণধর্ষণ করেছিল বিএনপির ক্যাডাররা। তাদের অত্যাচারে সেদিন প্রাণ হারিয়েছেন বরিশালের আওয়ামী লীগ নেতা কাসেম সরদার, রতন মৃধা, আতাহার আলী, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান অবনী বাড়ৈ, ছাত্রলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম বুলেট, ভিপি ফারুকসহ অসংখ্য নেতাকর্মী। বিএনপির সন্ত্রাসীরা বোমা মেরে সেদিন হত্যা করেছিল গৌরনদীর ২২ দিনের শিশু অশ্রুকে। আওয়ামী লীগ সমর্থকদের জমি দখল, বাড়ি দখলসহ নানা অত্যাচারে লিপ্ত ছিল বিএনপির সন্ত্রাসীরা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান আমেরিকা ও সিঙ্গাপুরের কোর্টে ধরা পড়েছে মানি লন্ডারিংয়ের জন্য। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম আমরা তাদের পাচার করা টাকা ফেরত এনেছি। দীর্ঘ ৩১ মিনিটের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি-জামায়াত সে নির্বাচন ঠেকানোর নামে সারাদেশে সন্ত্রাস ও নাশকতার মাধ্যমে ধ্বংসাত্মক কর্মকা- চালায়। তারা পেট্রোলবোমা মেরে জীবন্ত মানুষদের পুড়িয়ে হত্যা করে। তারা ২৯টি রেলগাড়ি, নয়টি লঞ্চ, ২৫২টি গাড়ি, প্রায় ১৪’শ সরকারী অফিসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। জ্বালাও-পোড়াও আর অগ্নিসংযোগ হচ্ছে তাদের আন্দোলন। আমরা কঠোর হস্তে তাদের সে সন্ত্রাস মোকাবেলা করেছি। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ধ্বংস করতে জানে, সৃষ্টি করতে জানে না। মানুষের জীবন অতিষ্ট করতে জানে। বিএনপি পেট্রোলবোমায় মানুষ মেরেছে। তাদের আগুন, পেট্রোলবোমায় বহু মানুষ জীবন দিয়েছে। তারা প্রায় পাঁচ’শ মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে। প্রায় তিন হাজার মানুষ তাদের আগুন সন্ত্রাসের শিকার হয়ে এখনও ধুঁকছেন। তাদের অগ্নিসন্ত্রাসের কারণে তিন হাজার ৩৬ জন অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। আল্লাহ আজ তাদের বিচার করছেন। তিনি বলেন, আন্দোলন হবে মানুষের জন্য। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন ধ্বংস করার জন্য। তারা পারে দেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করতে। বিপরীতে আওয়ামী লীগ উন্নয়ন করে, উন্নয়নে বিশ্বাস করে, জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন করে। মানুষের ওপর অত্যাচার করলে ‘আল্লাহর আরশও’ কেঁপে যায়, মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “যারা মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, তার বিচার এমনিই হয়। সেই বিচারই হচ্ছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের ওয়াদা চাই। আপনারা হাত তুলে ওয়াদা করুন, নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন। যুদ্ধাপরাধের বিচারের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বলেছিলাম যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করব। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আল্লাহর রহমতে করেছি। শেরে বাংলা, আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, উন্নয়নের স্বপ্নদ্রষ্টা শওকত হোসেন হিরন ও ডাঃ মোখলেসুর রহমানের বরিশালের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ মানে উন্নয়ন, আওয়ামী লীগ মানে জনগণের কল্যাণ তাই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশের উন্নয়ন হয়। আজকে আমরা এই দেশেকে উন্নত করতে চাই। আমার মা ও বোনেরা বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন, বিধবা ভাতা পাচ্ছেন, এমনকি দুগ্ধ মাও ভাতা পাচ্ছেন। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বিগত সরকারের আমলে অবহেলিত ছিল। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি করেছি রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া হচ্ছে। এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরির ব্যবস্থা করেছি। আমরা দেশের উন্নয়নে বিশ্বাস করি। কারণ আমার বাবা এ দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। তিনি চেয়েছিলেন আমাদের ছেলে-মেয়েরা উন্নত শিক্ষা পাবে, উন্নত চিকিৎসা পাবে। একটা মানুষও গৃহহীন থাকবে না। এটাই ছিল জাতির পিতার স্বপ্ন। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে বিদ্যুতের জন্য হাহাকার ছিল। ২০০৯ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে পেয়েছিলাম মাত্র ১৬’শ মেগাওয়াট বিদ্যুত। আজ আমরা দেশে ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত দিচ্ছি। আমরা কম্পিউটারের ওপর থেকে ট্যাক্স প্রত্যাহার করে তা সহজলভ্য করেছি। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা শিক্ষার হার ৬৫.৫ ভাগে উন্নীত করেছিলাম। বিএনপি ক্ষমতায় এসে সাক্ষরতার হার কমিয়ে ৪৫ ভাগে নিয়ে আসেন। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা এ হারকে ৭২ ভাগের উপরে নিয়ে গেছি। আমরা প্রতিটি এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি। আমরা বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিয়েছি। আমরা চলতি জানুয়ারি মাসে ৩৫ কোটি ৪২ লক্ষ ৯০ হাজার ১৬২টি বই বিতরণ করেছি। যাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করতে পারে। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোতে কম্পিউটার ল্যাব তৈরি করে দিয়েছি। আমরা বেসরকারী অনেক কলেজকে সরকারী করে দিয়েছি। জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করে দিচ্ছি। যাতে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে। প্রাইমারী লেভেলে দুই কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেয়ার ব্যবস্থা চালু করেছি। যাতে তারা উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী হয়ে উঠে। প্রযুক্তি খাতে সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে ১৪ কোটি সিম ব্যবহার করা হয়। অনেকে দুইটা/তিনটা করে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। দেশের ৮ কোটি মানুষ আজ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। আমরা আজ সব জায়গায় ইন্টারনেট পৌঁছাতে পেরেছি। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিভিন্ন গবেষণা পদ্ধতি চালিয়ে যাচ্ছি। কৃষকদের ভর্তুকি প্রদান করছি। মাত্র ১০ টাকায় কৃষকদের জন্য ব্যাংক একাউন্ট খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। যাতে কৃষকদের নিজ একাউন্টে আমরা ভর্তুকির টাকা পৌঁছে দিতে পারি। দুই কোটির উপর কৃষক এ সেবা পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশের প্রত্যেক এলাকায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি। ঘরে বসে প্রবাসে থাকা স্বজনদের সাথে কথা বলার প্রযুক্তিগত সুযোগ আমরা দিয়েছি। আট হাজার ৫’শ পোস্ট অফিসকে আমরা ডিজিটাল সেন্টারে রূপান্তর করেছি। ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে বিনা পয়সায় স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছি, ওষুধ দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য, গ্রামের জনগণের উন্নতি। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন দেশের প্রতিটি মানুষ পেট ভরে খাবার খাবে। একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। আমরা জাতির জনকের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করছি। আজ আমরা বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করেছি। যারা হতদরিদ্র, শ্রমিক শ্রেণী, সেসব মায়েদের জন্য মাতৃত্বকালীন সময়ের জন্য ভাতা দিচ্ছি। ছেলেমেয়েরা যেন উচ্চশিক্ষা নিতে পারে, সেজন্য প্রাইমারী থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তি দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের সুনাম হয়। দেশ পুরস্কার পায়। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে জঙ্গীবাদ ও দুর্নীতে চ্যাম্পিয়ান হয়। বাংলার মাটিতে জঙ্গীবাদের স্থান হবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক মা-বোন, শিক্ষক, সচেতন নাগরিক, সকল অভিভাবক সবাইকে নিজেদের ছেলেমেয়েদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। তারা কোথায় যায়, কার সাথে মিশে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী বেশিদিন অনুপস্থিত কিনা, তা খেয়াল রাখতে হবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। ইসলাম জঙ্গীবাদ সমর্থন করে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বীরের জাতি, বিজয়ী জাতি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এ দেশকে আমরা উন্নত করে গড়ে তুলব। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ জাতিতে পরিণত করব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খাদ্যের জন্য বাংলাদেশকে কারও কাছে ভিক্ষা চাইতে হবে না। আমরা দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছি। বাংলাদেশের মানুষ বিশ্ব দরবারে সম্মানের সাথে এগিয়ে যাবে এটাই আমাদের লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, লুটপাটকারী, দুর্নীতিবাজ, জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী এবং এতিমের টাকা যারা লুটে খায়, তাদের স্থান এই বাংলার মাটিতে হবে না। তারা ক্ষমতা আসা মানেই দেশকে ধ্বংস করে দেয়া। একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশের উন্নয়ন হয়। বক্তব্যের শেষ ভাগে নৌকায় ভোট চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন, আমরা উন্নয়ন করেছি। আপনাদের কাছে আমার আকুল আবেদন থাকবে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরেও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জয়যুক্ত করবেন। আওয়ামী লীগ এবং আমাদের জোটকে ভোট দেয়ার জন্য আপনাদের কাছে আহ্বান জানাই।’ তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছে ওয়াদা চাই। কারণ, আমার তো চাওয়া-পাওয়ার কিছু নাই। বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছি। সবকিছু হারিয়ে সেই শোকগাথা বুকে নিয়েও আমি কাজ করে যাচ্ছি বাংলার মানুষের জন্য। এই মানুষের জন্যই আমার বাবা-মা-ভাইয়েরা জীবন দিয়ে গেছেন। আপনাদের মাঝে আমি ফিরে পেয়েছি আমার হারানো বাবা-মা ও ভাইয়ের স্নেহ। তাই আপনাদের কাছে ওয়াদা চাই। আপনারা ওয়াদা করেন, আগামীতে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবেন। আপনারা দুই হাত তুলে ওয়াদা করেন ভোট দেবেন।’ এসময় জনসভায় উপস্থিত জনতা হাত তুলে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার ওয়াদা করেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। ইনশাল্লাহ, আবার দেখা হবে। আবার আসিবো ফিরে, ধানসিঁড়ি ও কীর্তনখোলা তীরে এই বরিশালে। জয়বাংলা-জয়বঙ্গবন্ধু। জনসভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিল্পমন্ত্রী আলহাজ আমির হোসেন আমু, বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহম্মেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী প্রমুখ। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক, চীফ হুইপ আসম ফিরোজ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাবেক মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, মোঃ ফারুক খান, পঙ্কজ দেবনাথ এমপি, এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস এমপি, জেবুন্নেছা আফরোজ এমপি প্রমুখ। বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ১১টার সময় প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টার পটুয়াখালীর লেবুখালীর ‘ শেখ হাসিনা সেনানিবাস’ এর হেলিপ্যাডে অবতরণ করেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী ‘শেখ হাসিনা সেনানিবাস’সহ ১৪টি উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন ও একটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। লেবুখালী অংশের কর্মসূচী শেষে প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারে বরিশাল শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত স্টেডিয়ামে আসেন। পরে সেখান থেকে গাড়ি বহরে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে এসে প্রধানমন্ত্রী ৪১টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৩৩টি প্রকল্পের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন। পরে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে জনসভায় যোগ দেন।
×