ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যবিপ্রবিতে সমাবর্তন

দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে ॥ রাষ্ট্রপতির

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে ॥ রাষ্ট্রপতির

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জনকারী একজন গ্র্যাজুয়েট সবসময় সত্য ও ন্যায়কে সমুন্নত রাখবে এবং দুর্নীতি ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে। রাষ্ট্রের বিবেকবান নাগরিক হিসেবে তোমাদের কাছে প্রত্যাশা করি, তোমরা কখনো ডিগ্রীর মর্যাদা, ব্যক্তিগত সম্মানবোধ আর নৈতিকতাকে ভূলুণ্ঠিত করবে না। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর বলেন, কর্ম উপলক্ষে তোমরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকো না কেন, এ দেশ ও এ দেশের জনগণের কথা ভুলবে না। ভুলবে না খেটে খাওয়া সাধারণ জনগণের কথা। মনে রাখতে হবে, বাঙালীর শেকড় এই সাধারণ জনগণের মধ্যেই প্রোথিত। কর্মজীবনে তোমরা সফল হও, সার্থক হও-এই কামনা করি।’ গতকাল বিকেলে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু এ্যাকাডেমিক ভবনের সামনের মাঠে এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর আগে বেলা আড়াইটায় ক্যাম্পাসের কাছে আব্দুলপুরে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত হেলিপ্যাডে নামেন রাষ্ট্রপতি। সেখানে তাকে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। পরে মোটর শোভাযাত্রা করে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন রাষ্ট্রপতি এবং তার সফরসঙ্গীরা। এবারের সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৭০ গ্রাজুয়েট অংশ নেন। তাদের মধ্যে আটজন চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক, পাঁচজন ভাইস চ্যান্সেলর পদক এবং ৫৬ জন ডিন্স এ্যাওয়ার্ড পান। সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি ও মোঃ আবদুল হামিদ নবীন গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তোমাদের উপর। তোমাদের তারুণ্য, জ্ঞান, মেধা ও প্রজ্ঞা হবে দেশের উন্নয়নে প্রধান চালিকাশক্তি। দেশ ও জনগণের কাছে তোমাদের আছে ঋণ। একজন বিবেকবান নাগরিক হিসেবে সেই ঋণ তোমাদের পরিশোধ করা উচিত।’ বক্তব্যের শুরুতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ অবিভক্ত বাংলার প্রথম ঘোষিত জেলা যশোরের ঐতিহ্য ও বরেণ্য ব্যক্তিদের কথা তুলে ধরেন। তিনি বাংলা সাহিত্যে সনেটের প্রবক্তা মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বিশ্বখ্যাত চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান, বিজ্ঞানী রাধাগোবিন্দ, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সহচর শহীদ মসিয়ূর রহমান, মুসলিম জাগরণের পথিকৃৎ মুন্সী মেহেরুল্লাহ, বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান ও ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মাদ শেখসহ বিখ্যাত ব্যক্তিদের স্মরণ করেন। এছাড়া যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদান রাখায় স্মরণ করেন প্রয়াত শিক্ষামন্ত্রী এ এস এইচ কে সাদেককে। সমাবর্তন বক্তা নোবেল জয়ী বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. রবার্ট হিউবার তার নিজের ক্ষেত্র প্রাণ-রসায়ন নিয়ে বিস্তারিত বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশের বিরাট প্রাকৃতিক সম্পদ ও জনশক্তি বিষয়েও কথা বলেন তিনি। রবার্ট হিউবার বলেন, ‘খাদ্য, শক্তি এবং পরিবেশ বিপর্যয় এখন মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের। কিন্তু এরও সমাধান রয়েছে তোমাদের মতো যুবসমাজের মাথায়। তোমরাই যেকোন দেশের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ।’ বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, ‘উন্নত জাতি গঠনের অপরিহার্য শর্ত হলো দূরদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণে দক্ষ নাগরিক তৈরি এবং সচেতনতা বৃদ্ধিসহ জ্ঞান ও অন্তদৃষ্টির প্রসার ঘটানো।’ যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন সমাবর্তনে আগত রাষ্ট্রপতি, সমাবর্তন বক্তা অধ্যাপক ড. রবার্ট হিউবার, বিশেষ অতিথি অধ্যাপক আবদুল মান্নানসহ সব অতিথিদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের সভাপতিত্বে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য, আবদুল হাই, এস এম জগলুল হায়দার, শেখ আফিল উদ্দিন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. হারুন-অর রশীদ আসকারী, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোহাম্মদ আলমগীর, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ, যশোর-খুলনা অঞ্চলের উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা, বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষসহ বিপুল সংখ্যক বিশিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
×