ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভূঞাপুরে পাঁচ লাখ লোকের জন্য মাত্র তিন ডাক্তার

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ভূঞাপুরে পাঁচ লাখ লোকের জন্য মাত্র তিন ডাক্তার

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ৫ ফেব্রুয়ারি ॥ টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা হাসপাতালে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবায় ডাক্তার রয়েছেন মাত্র তিনজন। সরকারী নিয়মানুযায়ী বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার থাকার কথা যেখানে ২৮ জন। সেখানে সরকারীভাবে ১৮ জন ডাক্তারের অনুমোদন দেয়া হলেও কর্মরত রয়েছেন মাত্র তিনজন। দীর্ঘদন যাবৎ এই জনগোষ্ঠী চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এদিকে শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে রোগীয় ভিড় বাড়ছে। কিন্তু হাসপাতালে ডাক্তার না পেয়ে তাদের যেতে হচ্ছে বিভিন্ন ক্লিনিকে ও জেলা শহরে। বিশেষ করে চরাঞ্চলের হতদরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষেরা চিকিৎসাসেবা থেকে চরমভাবে বঞ্চিত হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায়, ৫০ শয্যা আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসক সঙ্কট চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এ সঙ্কট নিরসনে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোন পদক্ষেপ নেই। হাসপাতালটি উপজেলা সীমান্তবর্তী স্থানে হওয়ায় উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী ঘাটাইল, গোপালপুর ও কালিহাতী উপজেলা থেকে প্রচুর পরিমাণ রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসক, নার্স প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সঙ্কটের কারণে কোন সেবা না পেয়ে বাধ্য হয়ে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছে বিভিন্ন ক্লিনিকে। ধনাঢ্য পরিবারের রোগীরা টাকা দিয়ে ক্লিনিকে বা শহরে দিয়ে সেবা নিলেও চরম ভোগান্তির শিকার চরাঞ্চলবাসী ও দরিদ্র পরিবারের রোগীরা। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সরকারী বিধি মোতাবেক মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি, এনেথ্রেসিয়া, শিশুরোগ, অর্থোপেডিক্স, কার্ডিওলজি, চক্ষুরোগ, নাক-কান-গলা ও ডেন্টাল সার্জনসহ মোট ৯ জন কনসালটেন্ট নিয়ে ২৮ জন ডাক্তার থাকার কথা। সেখানে কাগজে-কলমে এ হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তার রয়েছেন মাত্র আটজন। এর মধ্যে ডেপুটেশনে আছেন পাঁচজন। তারা বড় বড় অফিসারের আত্মীয় হওয়ায় পোস্টিংয়ে হাসপাতালে থাকলেও কাজ করেন ঢাকার বিভিন্ন নামী দামী হাসপাতালে ও ক্লিনিকে। কতিপয় চিকিৎসকরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে দরিদ্র রোগী দেখতে তাদের কোন আগ্রহ নেই। যতদিন ছিলেন তাতেও ইচ্ছে করে রোগীদের সঙ্গে খারাপ আচারণ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নার্সদের পদটি নিয়মানুযায়ী থাকলেও ডিউটি নিয়ে রয়েছেন নানা অনিয়ম। অফিস সহকারী তিনজনের মধ্যে রয়েছেন একজন। তাও আবার অফিস করেন সুবিধামতো সময়ে। স্বাস্থ্য সহকারী পদ শূন্য রয়েছে পাঁচটি। বৃহৎ এরিয়াজুড়ে হাসপাতালে সিকিউরিটি গার্ড থাকার কথা তিনজন। সেখানে আছেন মাত্র একজন। ফলে রাতে ডিউটি করলে দিনে পরিণত হয় ক্রিকেট খেলার মাঠ, আর দিনে ডিউটি করলে রাতে বসে মাদকের হাট। হাসপাতালে দীর্ঘদিনে একটি পুরনো এক্স-রে মেশিন কোন রকম চলে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। কিন্তু রোগীদের অভিযোগ কোন এক্স-রে হয় না এখানে। আল্টাসোগ্রাম মেশিন আছে বটে, কিন্তু কোন সনোলিস্ট না থাকায় সেটিও বিকল। প্যাথলজিক্যাল ল্যাবে নামে মাত্র কিছু পরীক্ষা করা হলেও সেখানে টাকা বেশি নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘদিনের পুরান এ্যামবুলেন্সটিও মাস দু’য়েক আগে দুমড়ে মুচড়ে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানায় পড়েছিল। সম্প্রতি সেটি উদ্ধার করে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। মূলত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই এ হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা ভেঙ্গে পড়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। বেলটিয়াপাড়া গ্রামের নাসিমা বেগম বলেন, শরীরে চর্মরোগ ও জ্বর নিয়ে হাসপাতালে আসি। হাসপাতালে ডাক্তার না পেয়ে নিরুপায় হয়ে স্থানীয় এক প্রাইভেট ক্লিনিকে ৫শ’ টাকা ভিজিট এবং ৯শ’ টাকার পরীক্ষা করাই। গরিব মাইনষের চিকিৎসা নাই। টাকা দিলে ডাক্তার মিলে, না দিলে নাই। বেতুয়া গ্রামের আবুল হাশেম বলেন, ডাক্তার হাসপাতালে অফিস করে না। বাসায় নাহি টেহা নিয়া রোগী দ্যাহে। হাসপাতালের নার্স আয়ারা করে ডাক্তারি। হাসপাতালে যারা চাকরি করে তারা আরামে আছে। এদিকে নানা অভিযোগ রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আবু সামার বিরুদ্ধে। অনিয়মিত অফিস, এলাকার প্রতিটি ক্লিনিকে রোগী দেখা, আল্টাসনোগ্রাম ও তার নিজের মালিকানাধীন কালিহাতীর এলেঙ্গাতে আল রাজী ক্লিনিক পরিচালনা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটান তিনি। এমন অভিযোগের বিষয়ে তার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার জাহিদুজ্জামান বলেন, ভাই ডিউটি করতে করতে নিজেই রোগী হওয়ার উপক্রম। ডেপুটেশনে ডাক্তারদের হয় বদলি করে নেয়া হোক, না হয় তারা এ হাসপাতালে ডিউটি করুক। তারা যাবেও না, পদও খালি হবে না। কর্তৃপক্ষ ডাক্তারও দিবে না। শুধু তাই নয়, নিয়মানুযায়ী সকল ডাক্তার-কর্মচারী দেয়ার বিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
×