ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্টর্মি ড্যানিয়েল যে কারণে ট্রাম্পের মাথাব্যথার কারণ হননি

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

স্টর্মি ড্যানিয়েল যে কারণে ট্রাম্পের মাথাব্যথার কারণ হননি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনের আগে এক পর্নো তারকার সঙ্গে তার যৌনাচারের কথা যাতে প্রকাশ না পায় সেজন্য এক লাখ ডলারের বেশি অর্থ দিয়েছিলেন। এই পর্নো অভিনেত্রীর নাম স্টেফানি ক্লিফোর্ড। পর্নো চরিত্রে তার নাম স্টর্মি ড্যানিয়েল। ২০০৬ সালে লেইক তাহোয় এক গলফ টুর্নামেন্ট চলাকালে তাদের মধ্যে যৌন সম্পর্ক স্থাপিত হয়। সে সময় স্টেফানির বয়স ছিল ২৭ বছর। অথচ এর আগের বছরই ট্রাম্প মেলানিয়াকে বিয়ে করেন। মেলানিয়া ট্রাম্পের তৃতীয় স্ত্রী। স্ত্রী বর্তমান থাকতেই অন্য নারীর ঘনিষ্ঠ সঙ্গ লাভ আইন ও নৈতিকতার দিক থেকে একটি গর্হিত অপরাধ বলে সর্বত্র স্বীকৃত। নির্বাচনের সময় ট্রাম্পের সঙ্গে স্টেফানির একটি যুগল ছবি প্রকাশও পেয়েছিল কিন্তু এক লাখ ৩০ হাজার ডলার দিয়ে ট্রাম্পের আইনজীবী মাইকেল কোহেন তার মুখ বন্ধ করে দেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টদের বিবাহবহির্ভূত প্রেম নিয়ে নানা ধরনের কথা ও রোমাঞ্চকর গল্প এখনও অনেকের কৌতূহলের খোরাক জোগায়। বিশেষ করে ষাটের দশকে জন এফ কেনেডি ও মেরেলিন মনরোর প্রেমকাহিনী একটি ছবিতেও চিত্রায়িত হয়েছে। আর মনিকা লিউনস্কির সঙ্গে বিল ক্লিনটনের যৌন সম্পর্কের জন্য ক্লিনটনকে অভিসংশনের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্পের বেলায় সব হিসেব নিকেশ উল্টে গেল কেন? ডজন ডজন নারীর সঙ্গে যৌন কেলেঙ্কারি ও বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও এগুলো স্রেফ গুজব বলে ট্রাম্পের আইনজীবী ও হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে অস্বীকার করা হচ্ছে। আর ট্রাম্পও নিশ্চিন্তে তার কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছেন। কেন এই বৈপরীত্য? এ নিয়ে জ্যাক নোভাক নামের এক সাংবাদিক এক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন দেখিয়েছেন যে, স্টর্মি ড্যানিয়েলের সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত যৌনাচার সত্ত্বেও কেন ট্রাম্পের রাজনৈতিক জীবনে এর কোন প্রভাব পড়েনি। জ্যাক নোভাকের মতে, এর দু’টি কারণ আছে। প্রথমত, স্টেফানি কোন ধরনের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেননি। কারণ অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি পর্বেই অর্থ দ্বারা তার মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়। দ্বিতীয়ত, আমেরিকান জনগণের মানসিকতা আর ক্লিনটন যুগে পড়ে নেই। এখন এদেশের বাম, ডান ও মধ্যপন্থী গ্রুপগুলো পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে যৌন সম্পর্ককে আর কেলেঙ্কারি হিসেবে দেখে না। কিন্তু যেসব আমেরিকান গলা ফাটিয়ে ধর্মীয় বিশুদ্ধতার কথা বলে সেই ইভানজেলিকান গোষ্ঠীর ভোট ব্যাংক কেন ট্রাম্পের দিকে ঝুঁকে পড়ল? কারণ, তাদের সুবিধাবাদী নীতি। এটিকে ভ-ামি বলেও অভিহিত করা যায়। বিগত বছরগুলোতে ধর্মীয় ও জাতীয় নীতি নৈতিকতা নিয়ে যারা সোচ্চার ছিল তারা ট্রাম্পের বেলায় সব কিছু জলাঞ্জলি দিল কেন? এই প্রশ্নের উত্তর অনেক গভীরে প্রোথিত। ইভানজেলিক্যানদের সমর্থন ও ভোট পেতে ট্রাম্প ইভানজেলিক্যানদের মধ্যে প্রভাবশালী ব্যক্তি মাইক পেন্সকে (বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট) তার রানিং মেট হিসেবে ঘোষণা করেন। একথা আজ সকলের কাছে স্পষ্ট যে, ইহুদী গ্রুপগুলোর চাপে এবং মাইক পেন্সের প্রভাবে ট্রাম্প অতি দ্রুত জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি সুপ্রীমকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিল গরসাচকে নিয়োগ দিয়েছেন। এসবের জন্য নির্বাচনের সময়ই ইভানজেলিক্যানদের সঙ্গে ট্রাম্পের সমঝোতামূলক চুক্তি জাতীয় কিছু একটি হয়েছিল। যার দরুন নির্বাচনের সময় জনমত জরিপে ইভানজেলিক্যান ভোট সবচেয়ে বেশি পড়েছিল ট্রাম্পের পক্ষে। তিনি পেয়েছিলেন প্রায় ৮১ শতাংশ ভোটÑ যা এর আগে জর্জ ডব্লিউ বুশ, ম্যাক কেইন বা মিট রমনিও পাননি। কারণ ইভানজেলিক্যানদের মধ্যে এই ধারণা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল যে, কোন ব্যক্তিকে দিয়ে যদি তাদের ধর্মীয় সামাজিক ও রাজনৈতিক মতাদর্শ বাস্তবায়ন করা যায়, তবে ব্যক্তিগত জীবনে সে যত খারাপই হোক না কেন তারা তাকে অকণ্ঠ সমর্থন দেবে। -খবর সিএনবিসি
×