স্টাফ রিপোর্টার ॥ উন্নয়ন সহযোগীদের নিয়ে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ‘পার্টনারিং ফর ডেভেলপমেন্ট’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের (বিডিএফ) এই সম্মেলন শুরু হবে আগামীকাল বুধবার। সম্মেলনে বিদেশী সহযোগীদের কাছে বাংলাদেশের উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরা হবে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে বাংলাদেশের অগ্রগতি কী, এসডিজি অর্জনে দাতাদের প্রত্যাশিত ভূমিকা তাও তুলে ধরা হবে। এছাড়া এ বছর বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে। মাথাপিছু আয়, অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও মানব উন্নয়নে দেশের অগ্রগতিগুলো প্রাধান্য পাবে।
দুই দিনব্যাপী সম্মেলনে জাপান, নেদারল্যান্ডসসহ ৩৬টি দাতা সংস্থা ও দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিতব্য এই সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক এই সম্মেলনে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোই প্রাধান্য পাবে বলে জানিয়েছেন র্অথমন্ত্রী।
সোমবার শেরেবাংলা নগরের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিডিএফের আয়োজনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। এ সময় ইআরডি সচিব কাজী শফিকুল আজমসহ অর্থমন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ইআরডির এই আয়োজনে অর্গানাইজিং পার্টনার হিসেবে থাকছে ইউএনডিপি, বিশ্বব্যাংক এবং ব্র্যাক। আয়োজকরা জানান, আগামী ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি এই ফোরাম অনুষ্ঠিত হবে। ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (অফিদ)’র মহাপরিচালক সুলেইমান জাসিরÑআলÑহারবিশ, বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট এনেট ডিক্সন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের বাবসি প্রেসিডেন্ট ওয়েন চাই ঝ্যাং, জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ মহাপরিচালক মিরু মাসুজিমা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেবেন। ফোরামে দুই দিনে মোট ৮টি কর্ম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এতে দেশের কৃষি উন্নয়নে জলবায়ু পরিবর্তন, বৈদেশিক নিয়োগ, বেসরকারী খাতের আরও বেশি অংশগ্রহণ, মানবসম্পদের উন্নয়ন, বৈষম্য রোধ, নারী নির্যাতন রোধ, নাগরিক সেবার মানোন্নয়ন, স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণ এবং টেকসই উন্নয়নের নানাদিক নিয়ে আলোচনা হবে। আলাদা আলাদা সেশনে উঠে আসবে বিশেষজ্ঞ মতামত। এসব অধিবেশনে দেশী-বিদেশী ৬০ জন আলোচক অংশ নেবেন।
সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন বিনিয়োগের ওপর জোর দিচ্ছি। বিশেষ করে বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বর্তমানে ভাল লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। আমরা এই সুযোগকে কাজে লাগাতে চাই। তিনি বলেন, আমরা শীঘ্রই স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে যাবো। আগামী মার্চ মাসে জাতিসংঘের একটি সভায় এ ঘোষণা দেয়া হবে। সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতি খুব ভাল’র দিকে যাচ্ছে।
চীনের সহযোগিতায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, দাতা হিসেবে চীন নতুন। তাই কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে এটা কেটে যাবে। চীনের অর্থায়নে ইতোমধ্যে ৪টি প্রকল্পের ঋণচুক্তি হয়েছে। তিনি বলেন, চীনের অর্থায়নে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ অনেক দূর এগোলেও এটি এখন নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন হবে। যে বিদেশী সংস্থাকে কাজের টেন্ডার দেয়া হয়েছিল, তারা শেষ মুহূর্তে এসে অতিরিক্ত অর্থ দাবি করায় কাজটি এগোয়নি। বিডিএফ সম্মেলনে ভারত-চীনের দৃশ্যমান অংশগ্রহণ না থাকার বিষয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ইআরডি সচিব বলেন, সম্মেলনে পার্টনার হিসেবে উন্নয়ন সহযোগীদের সবাই সম্পৃক্ত আছেন। ভারতের হাইকমিশন ও চীনের দূতাবাস এই আয়োজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে।
দাতাদের সভায় এসডিজির অগ্রগতি গুরুত্ব পাবে। আর এসডিজি অর্জনে অর্থায়নকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে মানছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে দাতাদের কাছ থেকে খুব বেশি অর্থ পাওয়া যাবে বলে আমি মনে করি না। কারণ এমডিজির সময়ও তারা যে পরিমাণে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার পুরোটা বাস্তবে পাওয়া যায়নি। এক্ষেত্রে আমাদের নিজস্ব সক্ষমতার ওপর জোর দিতে হবে এবং আমরা এটি পারব। আমরা ইতোমধ্যে এমডিজিতে সাফল্য অর্জন করে দেখিয়ে দিয়েছি। একই প্রসঙ্গে ইআরডি সচিব বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে অতিরিক্ত প্রয়োজন হবে ৯২৮ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশ আসবে বিদেশী বিনিয়োগ থেকে, যার ১০ শতাংশ আবার এফডিআই অর্থাৎ মাত্র ৫ শতাংশ অর্থায়ন আসবে ওডিএ থেকে।
উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
রাজধানীতে কাল উন্নয়ন সহযোগীদের বৈঠক শুরু
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: