ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দিনাজপুরে ৫.১ সেলসিয়াস

সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপের পার্থক্য কমে যাওয়ায় বাড়ছে শীত

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ৮ জানুয়ারি ২০১৮

সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপের পার্থক্য কমে যাওয়ায় বাড়ছে শীত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীসহ দেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আরও হ্রাস পেয়েছে। ঘন কুয়াশা ও ঠান্ড বাতাস বাড়িয়ে দিয়েছে শীতের তীব্রতা। বয়ে যাচ্ছে মৌসুমের প্রথম তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। রবিবার ঢাকার তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস হ্রাস পায়। শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা আবার বেড়েছে। ঘন কুয়াশায় ইরি-রোরো ধানের চারাসহ শীতকালীন ফসল হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। তীব্র শীতে ছিন্নমূল ও গরিব মানুষের কষ্টের সীমা নেই। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা হয় ব্যাহত। হাসি ফুটে ওঠে গরম কাপড় বিক্রেতাদের মুখে। গরম কাপড়ের দাম বেড়ে যায় কয়েকগুণ। সকালের দিকে ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক পথে যানবাহন চলাচল করছে হেড লাইট জ্বালিয়ে। শীতের কারণে শনিবার রাতে নওগাঁয় এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। আজ সোমবারও দেশে বয়ে যাবে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঘন কুয়াশা, দিনের তাপমাত্রা হ্রাস এবং ঠান্ডা বাতাসের কারণে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। ঘন কুয়াশায় উপরে উঠতে পারছে না জলীয় বাষ্প। শিশির ভেজা মাটি শুকিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকছে না। মাঝে মধ্যে সূর্যের মুখ দেখা গেলেও উত্তাপ থাকে না। দিনের অধিকাংশ সময় কুয়াশার চাদরে মোড়ানো থাকে আকাশ। এমন অবস্থা জানুয়ারির বাকি দিনগুলোতেও চলতে পারে। আর এক সপ্তাহ পরই আগমন ঘটবে মাঘ মাসের। ওই মাসে শীত অনুভূত হওয়াটাই স্বাভাবিক। এটি শীতের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট। গত পাঁচদিন ধরে রাজধানীতেও অনুভূত হচ্ছে তীব্র শীত। রবিবার কিছুক্ষণের জন্য সূর্যের আলোর দেখা পেলেও তেমন তেজ ছিল না। বেলা ১১টা পর্যন্ত মাঝারি ধরনের শীত অনুভূত হয়। নগরীর গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। চড়া দামে বিক্রি হয় গরম কাপড়। রাস্তার ধারে চা খাওয়া লোকের সংখ্যাও বেড়ে যায়। দিনের বেলাতেও প্রত্যেক মানুষের শরীর ছিল গরম কাপড়ে ঢাকা। মাঝে মধ্যেই বয়ে যায় ঠান্ড বাতাস। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে শীতের তীব্রতা যেন বাড়তে থাকে। কমতে থাকে পথচারীদের সংখ্যাও। রাজধানীসহ দেশের প্রায় সব ক’টি স্টেশনেই দেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমেছে। রবিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা টেকনাফে ২৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দিনাজপুরে ৫.১ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড হয়। আর শনিবার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় যথাক্রমে ২৬.২ ও ৫.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। শনিবার ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৩.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস ও ১৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আর রবিবার ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে আসে ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তাপমাত্রা কমে আসার পাশাপাশি রাজধানীসহ সারাদেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্যও কমে এসেছে। যা শীত বৃদ্ধির পেছনে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। বৃহস্পতিবার দেশের অধিকাংশ জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ থেকে ১১ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে বিরাজ করে। নিজস্ব সংবাদদাতা পাবনা থেকে জানান, তীব্র শীতে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। পর্যাপ্ত শীতের কাপড় না থাকায় কষ্ট পাচ্ছে দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ। শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে ক্রেতার ভিড় বেড়েছে। স্টাফ রিপোর্টার দিনাজপুর থেকে জানান, উত্তরের জনপদ দিনাজপুরে টানা ৪ দিনের শৈতপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রবিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৫ দশমিক ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস। দুপুরে তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে ১১ দশমিক ১ সেলসিয়াস হলেও বিকেলে তাপমাত্রা ৬ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে আসে। সারাদিনে সূর্যের আলো কোথাও দেখা যায়নি। কর্মহীন হয়ে পড়ে দিনমজুরেরা। প্রচ- শীতে শিশু ও বয়স্কদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সকাল ১০টা পর্যন্ত কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে পরিবেশ। শীতের দাপটে স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। ঘন কুয়াশার কারণে জেলার সবক’টি রুটে যানবাহন হেডলাইট জ্বালিয়ে চালাতে দেখা গেছে। স্টাফ রিপোর্টার রাজশাহী থেকে জানান, রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলে আরেক দফা কমেছে দিনের তাপমাত্রা। ফলে শীতের দাপটে রীতিমত কাঁপছে উত্তরের জনপদ। রাজশাহী অঞ্চলের ওপর দিয়ে বইছে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। গত তিনদিন ধরে রাজশাহীতে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সর্বশেষ রবিবার ভোরে রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৫ দশমিক ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এর আগের দিন শনিবার রাজশাহীতে তাপমাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তীব্র শীতে ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষের পাশাপাশি চরম দুর্ভোগে পড়েছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। স্কুলগুলোতে কমেছে শিক্ষার্থী। স্কুলে গিয়ে কাগজ জ্বালিয়ে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের শীত নিবারণ করতে দেখা গেছে। অনেকে ঘর থেকে সহজে বের হচ্ছেন না। প্রয়োজনের তাগিদে অনেকে বের হলেও ঘরে ফেরার তাড়া পেয়ে বসছে। অনেকে দ্রুত কাজ সেরে ঘরে ঘরমুখী হচ্ছে। নিজস্ব সংবাদদাতা গাইবান্ধা থেকে জানান, ঘন কুয়াশা, উত্তরের হিমেল হাওয়া এবং কনকনে ঠা-ায় গাইবান্ধার স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে প্রচ- শৈত্যপ্রবাহে কাহিল হয়ে পড়েছে জেলার অসহায় দরিদ্র মানুষ। স্থবির হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে সূর্য। শ্রমজীবী মানুষ প্রচ- শীতের কারণে কাজে যেতে পারছে না। স্কুল ও কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই কম। লোক সমাগম না থাকায় শহর ও হাট-বাজারে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। ঘন কুয়াশার কারণে গাইবান্ধার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনাসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সকালের দিকে ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক পথে যানবাহন চলাচল করছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। এছাড়া ঘন কুয়াশা ও শীতের কারণে বোরো বীজতলা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। নিজস্ব সংবাদদাতা কুষ্টিয়া থেকে জানান, কুষ্টিয়ায় জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। গত তিনদিনের হাড় কাঁপানো শীতে মানুষজন এখন জবুথবু। রবিবার সকাল থেকেই আকাশ ছিল মেঘলা। দিনভর হিমেল হাওয়া আর কনকনে ঠা-ায় সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হতে সাহস পাচ্ছে না। শীতকে উপেক্ষা করে কেউ কেউ বের হতে বাধ্য হচ্ছে। ঠা-ায় শিশু ও ছিন্নমূল-খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। বিভিন্ন বস্তি ও রাস্তার পাশে খোলা আকাশের নিচে হতদরিদ্র মানুষজনকে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীতের কামড় থেকে রক্ষা পাবার চেষ্টা করতে দেখা গেছে। মানুষের পাশাপাশি প্রচ- শীতে গবাদি পশুও কষ্ট পাচ্ছে। নিজস্ব সংবাদদাতা লালমনিরহাট থেকে জানান, টানা ৩দিন পর আজ রবিবার লালমনিরহাটের আকাশে সূর্যের দেখা মিলেছে। এতে করে জনজীবনে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে এসেছে। টানা ৩দিনের ঠ‍ান্ডা ও শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। নিজস্ব সংবাদদাতা নওগাঁ থেকে জানান, নওগাঁয় শীতের প্রকোপে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত ৪দিন থেকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬.৫ থেকে ৭.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস ওঠান্ড নামা করছে। শনিবার বিকেলে তীব্র শীতের প্রকোপে মহাদেবপুর উপজেলার কুঞ্জবন গ্রামের বৈষ্ণব পরিবারের নিলমনি মহন্ত (৬০) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। জেলার ১১ উপজেলায় ডায়েরিয়া, রক্ত আমাশয়, জ্বরসহ বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। বেশিরভাগ আক্রান্ত হচ্ছে বৃদ্ধ, শিশু এবং দুস্থ প্রতিবন্ধীরা। শীত থেকে রক্ষা পেতে দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ জেলা সদরের ফুটপাথে পুরনো কাপড়ের দোকানে ভিড় করছে। জেলার দিনমজুর ও শ্রমজীবী মানুষ শীতে মানবেতর জীবনযাপন করছে। স্টাফ রিপোর্টার ঈশ্বরদী থেকে জানান, রবিবার ভোর রাত থেকে ঈশ্বরদীসহ আশপাশের এলাকায় শৈত্যপ্রবাহের কারণে ঈশ্বরদীর মানুষসহ এলাকাবাসী জবুথবু হয়ে পড়েছে। সকালে সূর্যের দেখা মেলেনি। উত্তরের প্রচন্ড ঠান্ড বাতাস আর কুয়াশায় মানুষ গৃহবন্দী হয়ে পড়ে। অফিস আদালতে বাতি জ্বালিয়ে কাজ করতে হয়। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাড়ি থেকে বের হয় না। বেলা ১টায় সূর্য ওঠায় মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসার পর কিছু কিছু মানুষ বাড়ি থেকে বের হতে থাকে। সংবাদদাতা সৈয়দপুর নীলফামারী থেকে জানান, হিমেল বাতাসের সঙ্গে ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সৈয়দপুরের জনজীবন। নিম্নমুখী তাপমাত্রায় শিশু, বৃদ্ধরা আক্রান্ত হচ্ছে শীতবাহিত রোগে। ছিন্নমূল ও দরিদ্ররা পড়েছে বিপাকে। বিঘ্ন ঘটেছে আকাশ, সড়ক ও রেলপথের পরিবহন সিডিউলে। এতে সকল সেক্টরে স্থবিরতা নেমে এসেছে। শীতের তীব্রতায় ঠান্ডা জনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। গত ৭ দিনে এ উপজেলার হাসপাতাল ও বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্র এবং প্রাইভেট চেম্বারে প্রায় সাড়ে দেড় হাজার বিভিন্ন বয়সী রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর থেকে জানান, পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদবেষ্টিত জেলা মাদারীপুর। জেলার উত্তরে পদ্মা নদী ও পূর্বে আড়িয়াল খাঁ নদ। আর জেলার ভেতর দিয়ে বহমান পালরদি, নিম্নকুমার, ময়নাকাটাসহ অনেক নদ-নদী বিল বাঁওড়। এ কারণে এখানে শীতের তীব্রতা প্রতি বছরই বেশি হয়। অন্যান্য বছর নবেম্বরের শেষে শীতের দাপট শুরু হলেও এ বছর জানুয়ারির শুরুতে শীতের দাপট বৃদ্ধি পেয়েছে। চলমান মৃদু শৈত্যপ্রবাহে চলতি বছরের শীতের প্রথম আঘাত এটি। এতে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। শীতে মানুষের পাশাপাশি গৃহপালিত পশু-পাখিও কষ্ট পাচ্ছে। সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত চারদিক কুয়াশায় ঢাকা পড়ছে। রাতে বৃষ্টির মতো ঝিরঝির করে কুয়াশা ঝরছে। প্রচন্ড শীতে সাধারণ মানুষ কাজে যেতে পারছে না। শ্রমিক শ্রেণীর এসব মানুষ সন্তান পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে দিনাতিপাত করছে। দিনের বেলাতেও মাঝেমধ্যে হেডলাইট জ্বালিয়ে বিভিন্ন যানবাহনকে চলাফেরা করতে হচ্ছে।
×