ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফিরে দেখা ২০১৭ ॥ ইয়েমেন সঙ্কট ॥ মানবিক বিপর্যয়ে লাখ লাখ মানুষ

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭

ফিরে দেখা ২০১৭ ॥ ইয়েমেন সঙ্কট ॥ মানবিক বিপর্যয়ে লাখ লাখ মানুষ

সৌদি জোটের অবরোধের মাঝে প্রায় তিন বছর ধরে চলা ইয়েমেন গৃহযুদ্ধে দেশটিতে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ, অপুষ্টি, ও মহামারীর কারণে মানবিক বিপর্যয় ২০১৭ সালে আরও তীব্র হয়েছে। সংঘাতের চড়া মূল্য দিচ্ছে দেশটির বেসামরিক জনগণ। ইউনিসেফসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার মতে, ২০১৫ সালের মার্চ মাস থেকে এ পর্যন্ত হাজার হাজার ইয়েমেনী শিশু সৌদি হামলায় নিহত ও আহত হয়েছে। ইউনিসেফের দেয়া তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের মে মাসের শেষ নাগাদ দুই কোটি ১১ লাখ ইয়েমেনী ত্রাণ সাহায্যের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে ৯৯ লাখই হচ্ছে শিশু। বিশেষ করে দেশটির ২২ প্রদেশের মধ্যে ১৯ প্রদেশের জনগণই চরম খাদ্য-সঙ্কটের শিকার। যুদ্ধের কারণে বেসামরিক নাগরিকদের একটি বড় অংশের কাছে মানবিক ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। ছড়িয়ে পড়েছে ডিপথেরিয়া আর কলেরার মতো রোগ। যুদ্ধে সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীরা যাতে ত্রাণসাহায্য প্রেরণের সুযোগ দেয়, সেজন্য জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস নিরাপত্তা পরিষদকে চাপ সৃষ্টি করতে বলেছেন। ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে ইয়েমেনে সম্ভাব্য কলেরায় আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে সাত লাখ ছাড়িয়ে যায়। এ বছর ইয়েমেনে অন্তত আড়াই হাজার মানুষ কলেরায় প্রাণ হারিয়েছেন। বছর শেষ হবার আগে ইয়েমেনে কলেরার আক্রান্তের সংখ্যা দশ লাখে পৌঁছাতে পারে বলে সাবধান করেছিল রেডক্রস। ইয়েমেনে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে কেয়ার নামের একটি সংস্থার অন্যতম কর্মকর্তা কার্ল-ওটো জেন্টেল এক সাক্ষাতকারে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ইয়েমেন সঙ্কট নিয়ে গোটা পৃথিবীর নির্লিপ্ততা অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন করে তুলছে। মানুষের এই দুর্দশার অন্যতম কারণ হলো দেশটির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের মদতপুষ্ট সৌদি জোটের অবরোধ। ফলশ্রুতিতে এমন এক পরিস্থিতি সৃস্টি হয়েছে যেখানে প্রতি দশ মিনিটে ইয়েমেনের একটি করে শিশু মারা যাচ্ছে নিরাময়যোগ্য যেমন ডায়রিয়া, অপুষ্টি বা শ্বাসতন্ত্রের রোগে। জাতিসংঘ সাম্প্রতিক সময়ে শিশু হত্যাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে সৌদি সরকারকে ঘাতক সরকারগুলোর তালিকাভূক্ত করেছিল। কিন্তু পরে জাতিসংঘে সৌদি অর্থ সহায়তা বন্ধের হুমকির মুখে জাতিসংঘের মহাসচিব সৌদি সরকারকে এই তালিকা থেকে বাদ দিতে বাধ্য হয়। ২০১৭ সালের শুরুর দিকে বেশ কিছু ই-মেইল ফাঁস হয়। তাতে দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার সময় ইয়েমেন যুদ্ধের ইতি ঘটানোর খায়েশ প্রকাশ করেন সৌদি আরবের যুবরাজ সালমান। বিষয়টি গণমাধ্যমের কল্যাণে গোটা বিশ্বে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর হুতিদের হাতে নিহত হন ইয়েমেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহ। এতে ইয়েমেন পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। নিহত হবার কিছুদিন আগে এক টেলিভিশন ভাষণে তিনি ইয়েমেনের ওপর থেকে সৌদি জোটের অবরোধ প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। এর পাশাপাশি হুতিদের সঙ্গে তার যে জোট হয়েছিল তা ও আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙ্গে দেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, সামরিক জোটের সঙ্গে আলোচনার জন্য উন্মুক্ত রয়েছে দরজা। তার এমন বক্তব্যে সৌদি আরব প্রশংসা করলেও ক্ষুব্ধ হয় হুতি বিদ্রোহীরা। পরিণামে তার মৃত্যু হয়। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক কর্মসূচীর পরিচালক জোস্ট হিলটারম্যান বলেছেন, হুতি ও সালেহ জোট ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে ইয়েমেনে সঙ্কট বাড়বে। বাড়বে প্রতিশোধের মাত্রা। সালেহকে হত্যার পর তার দল আরও ভেঙ্গে যেতে পারে। তাদের অনেকেই যোগ দিতে পারে হুতি-বিরোধী যোদ্ধাদের সঙ্গে। এ পরিস্থিতি সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের জন্য বড় ধরনের একটি আঘাত হতে পারে। এই জোটে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত। তারা সালেহর মাধ্যমে তাদের প্রত্যাশা পূরণের আশা করছিলেন। -বিবিসি, আলজাজিরা
×