ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলা একাডেমির বার্ষিক সভা

এবার সাত বিশিষ্ট ব্যক্তি ফেলোশিপ ও ৬ জন পুরস্কার পেলেন

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭

এবার সাত বিশিষ্ট ব্যক্তি ফেলোশিপ ও ৬ জন পুরস্কার পেলেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলা একাডেমির সাধারণ পরিষদের ৪০তম বার্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হয় শনিবার সকালে। একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী’র শিল্পীদের সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনা এবং পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের মধ্য দিয়ে সভা শুরু হয়। এরপর দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়াত গুণী ব্যক্তিদের স্মরণে শোকপ্রস্তাব পাঠ এবং তাঁদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান ২০১৬-২০১৭ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন এবং একাডেমির সচিব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ২০১৭-২০১৮ সালের বাজেট উপস্থাপন করেন। সভায় দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সাত জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে বাংলা একাডেমি সম্মানসূচক ফেলোশিপ ২০১৭ এবং বাংলা একাডেমি পরিচালিত পাঁচটি পুরস্কার প্রদান করা হয়। বাংলা একাডেমি সম্মানসূচক ফেলোশিপ ২০১৭’ প্রাপ্তরা হলেন-ইকবাল বাহার চৌধুরী (সাংবাদিকতা), প্রতিভা মুৎসুদ্দি (ভাষা-আন্দোলন, নারী নেতৃত্ব এবং শিক্ষা ও সমাজসেবা), অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ (চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণা), অধ্যাপক আইনুন নিশাত (পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষাবিদ), ড. নূরুন নবী (মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সাহিত্য), হাসান শাহরিয়ার (সাংবাদিকতা) এবং দুলাল তালুকদার (নৃত্যকলা)। ভাষাসংগ্রামী ও প্রাবন্ধিক আহমদ রফিক প্রথমবারের মতো প্রবর্তিত সাহিত্যিক মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ প্রবন্ধসাহিত্য পুরস্কার ২০১৭, কবি রুবী রহমান মযহারুল ইসলাম কবিতা পুরস্কার-২০১৭, অধ্যাপক সাইফুদ্দীন চৌধুরী ও অধ্যাপক শফিউল আলম সা’দত আলি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৭, অধ্যাপক আলী আসগর মেহের কবীর বিজ্ঞানসাহিত্য পুরস্কার ২০১৭ এবং জায়েদ ফরিদ উদ্ভিদস্বভাব বইয়ের জন্য হালীমা-শরফুদ্দীন বিজ্ঞান পুরস্কার ১৪২৪ বঙ্গাব্দ লাভ করেন। সাহিত্যিক মোহম্মদ বরকতুল্লাহ প্রবন্ধসাহিত্য পুরস্কারের অর্থমূল্য এক লাখ টাকা, মযহারুল ইসলাম কবিতা পুরস্কারের অর্থমূল্য এক লক্ষ টাকা, সা’দত আলি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কারের অর্থমূল্য পঞ্চাশ হাজার টাকা, মেহের কবীর বিজ্ঞানসাহিত্য পুরস্কারের অর্থমূল্য এক লক্ষ টাকা এবং হালীমা-শরফুদ্দীন বিজ্ঞান পুরস্কারের অর্থমূল্য ত্রিশ হাজার টাকা। পুরস্কার ও ফেলোশিপপ্রাপ্তদের হাতে পুরস্কারের অর্থমূল্য, সম্মাননাপত্র, সম্মাননা-স্মারক তুলে দেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এবং মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। সাধারণ সভায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমপি-সহ সারাদেশ থেকে বাংলা একাডেমির ফেলো, জীবনসদস্য এবং সদস্যসহ দুই সহ¯্রাধিক বিশিষ্টজন অংশগ্রহণ করেন। সভায় ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৩৯তম বার্ষিক সাধারণ সভার কার্যবিবরণী সারাদেশ থেকে আগত একাডেমির ফেলো, জীবনসদস্য ও সদস্যদের সম্মতিক্রমে অনুমোদন ঘোষণা করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান ২০১৬-২০১৭ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করে বলেন, বাংলা একাডেমি বাঙালী জাতিসত্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের প্রতীক-প্রতিষ্ঠান। ষাট বছরের ঐতিহ্য ও অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ একাডেমি এখন এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। একাডেমির অবকাঠামোগত বিপুল উন্নয়নের পাশাপাশি গবেষণামূলক কর্মকা-ে আমাদের সাফল্য দেশ ও বিদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক পরিম-লের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তিনি বলেন, একাডেমির সদস্যরা প্রতিবছর সাধারণ সভায় অংশগ্রহণ করে গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোয় বাংলা একাডেমির অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখে চলেছেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রগতিমুখীচর্চায় এবং বাঙালী সংস্কৃতির অব্যাহত বিকাশে ভবিষ্যতে বাংলা একাডেমি তার কার্যপরিধি আরও বিস্তৃত করবে। একাডেমির সচিব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ২০১৭-২০১৮ সালের বাজেট উপস্থাপন করেন। একাডেমির সদস্যবৃন্দ বার্ষিক প্রতিবেদন ও বাজেট সম্পর্কে সাধারণ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। একাডেমির মহাপরিচালক সদস্যদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং উত্থাপিত প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে বক্তব্য প্রদান করেন। সভাপতির ভাষণে ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, বাংলা একাডেমির সাধারণ পরিষদের এবারের সভাটি ছিল চল্লিশতম সভা। সকল সদস্য, জীবনসদস্য এবং ফেলোর অংশগ্রহণে দিনব্যাপী সভা আমাদের আবার মনে করিয়ে দিচ্ছে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি একাডেমির অঙ্গীকারের কথা। তিনি বলেন, গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে একাডেমির ঐতিহ্য বজায় রাখতে ও বিস্তৃত করতে আমাদের আরও সচেষ্ট হতে হবে। সাধারণ সভার কার্যক্রম সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির পরিচালক শাহিদা খাতুন।
×