ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সামিহা বিনতে সুফিয়ান

শীতে শরীরের যত্নে..

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৭ নভেম্বর ২০১৭

শীতে শরীরের যত্নে..

আসি আসি করে শীত এসেই গেল। সঙ্গে নিয়ে এলো মলিনতা আর রুক্ষ্মতার সংবাদ। সকালে ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দুটি রোদে হীরার মতো চিকমিক করে ওঠে, তাই বলে পুরো প্রকৃতি কিন্তু একইভাবে ঝলমলিয়ে ওঠে না। গাছের ঝরা পাতা, কুয়াশার চাদর আর আবহাওয়ার মলিনতার বার্তা নিয়ে আসে শীত, সেই সঙ্গে আনে ত্বকের মলিনতা, রুক্ষতা আর শুষ্কতা। শুধু মুখের নয়, হাত, পা, এমনকি চুলেরও আর্দ্রতা হারাতে থাকে। ফাটা পা, প্রাণহীন চুল আর মলিন ত্বক যেন এই ঋতুর এক অতি সাধারণ দৃশ্য, তাই নিজের যতœ নিয়ে উদাসীন মানুষও যেন এই সময় বাধ্য হয় নিজের যত্ন নিতে। আর যাদের ত্বক শুষ্ক তাদের তো মোটামুটি লড়াই চলে শীতের আবহাওয়ার বার্ধক্যের মতো রুক্ষ্মতার সঙ্গে। এই যখন অবস্থা, তখন আমরা আমাদের পাঠকদের জন্য নিয়ে এসেছি শীতে খুব সহজে নিজেকে যতেœ রাখার কিছু কথা। প্রথমেই আসা যাক গোসলের কথায়। শুনেই কি ভয় লেগে গেল? শীতে বরফঠা-া পানিতে গোসলের কথা তো ভাবাই যায় না, গরম পানিতে গোসলের কথাই বলছি। তবে এখন থেকে আর ভাপ ওঠা পানিতে না, গোসলটা সেরে নিন হালকা কুসুম গরম পানিতে। বেশি গরম পানি শুধু আপনার ত্বকেরই ক্ষতি করে না, আপনার চুলেরও মারাত্মক ক্ষতি করে। এতে চুল প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা হারিয়ে আরও রুক্ষ্ম হয়ে পড়ে, দুর্বল চুলের ভঙ্গুরতা বৃদ্ধি পায় আর সেই সঙ্গে বেড়ে যায় চুল পড়া। সেই সঙ্গে এই সময় গোসলটা ১০ মিনিটেই সেরে নিন, কেননা এই আবহাওয়ায় বেশিক্ষণ গরম পানিতে গোসল ত্বক রক্ষাকারী প্রাকৃতিক তেল শুষে নেয় আর ত্বককে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কিন্তু তুলনামূলক ঠা-া পানিতে অল্পক্ষণের গোসল শীতে ত্বককে আরও সুস্থ করে তুলবে। শীতের সোয়েটার-চাদর তো আছেই, বেশি শীতে হাতে-পায়ে মোজা পরে নিতেও কিন্তু ভুলবেন না যেন। সন্ধ্যার পরে বা বেশি সকালে শিশির পড়ার সময় ঘর থেকে বের হলে সহজে ভেজে না এমন গরম পোশাক পরিধান করাই শ্রেয়। মাথায় টুপি, ক্যাপ বা স্কার্ফ দিতেও ভুলবেন না। এবার আসি ঘরের ভেতরের কথাতে। ঘরের ভিতরেও চলাচলের সময় ব্যবহার করুন স্যান্ডেল ও দরকার মতো মোজা। আর শীতের সময় পোশাক নির্ধারণেও মানতে হয় কিছু সতর্কতা। কোমল তন্তুর গরম কাপড় বেছে নেওয়াই ভাল। অনেক সময় শীতের পোশাকের সুতা বা তন্তু ত্বকের সঙ্গে ঘষা লেগে ত্বকে অস্বস্তি ও চুলকানির সৃষ্টি করে, অনেক সময় লাল ঘামাচির মতো র‌্যাশও হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে উলের কথা। যদিও শরীর গরম রাখতে উলের জুড়ি নেই, কিন্তু উল অনেক সময় ত্বকে অস্বস্তিরও সৃষ্টি করে। তাই উল পরার আগে নিচে পাতলা সুতির কিছু পরে নেওয়া ত্বককে এই অস্বস্তি থেকে মুক্তি দেয়। শুষ্কতার এই মৌসুমে সঠিক খাবার খাওয়া আর নিজেকে ভেতর থেকে সতেজ রাখা খুবই জরুরী। পুষ্টিগুণ আর ভিটামিনে ভরপুর সবজি আর ফল আপনার ত্বক, চুল আর স্বাস্থ্যকে সর্বোচ্চ সুরক্ষা দেবে। আপেল, কমলা, চেরি, টমেটো, শসা, গাজর আর শীতের সবজিগুলো যেন এই উদ্দেশ্যে প্রকৃতিরই দান। এই খাবারগুলো দেহে ইলাস্টিন আর কোলাজেনের উৎপাদন বৃদ্ধি করে। সেই সঙ্গে শরীরে ওমেগা-৩ যোগান দিতে খেতে হবে প্রচুর বড় মাছ, তিসি ইত্যাদি। আর দিনে ৮-১০ গ্লাস পানির কথা তো বলাই বাহুল্য। এবার আসছি বিভিন্ন প্রসাধনীর কথায়। শীতের সময় কিছু প্রসাধনী প্রায় সবাইকেই ব্যবহার করতে হয়, বিশেষ করে ক্রিম, লোশন, তেল ও সাবান শ্যাম্পুর মতো প্রসাধনীগুলো। পেট্রোলিয়াম বা পানিকে মূল উপাদান হিসেবে নিয়ে তৈরি প্রসাধনীর থেকে এই সময় প্রাকৃতিক বিভিন্ন তেলকে মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহার করে তৈরি হওয়া ক্রিম ও লোশন ব্যবহার করা ভাল। শীতে ক্লিনজারও বেছে নিন সতর্কভাবে। গ্লাইকোলিক বা সাইক্লিক এসিড সমৃদ্ধ ক্লিনজার বাদ দিয়ে বেছে নিন অধিক ময়েশ্চারাইজিং উপাদান সমৃদ্ধ ক্লিনজার। ত্বক পরিষ্কার করার পর ৩০ সেকেন্ডের বেশি সময় ত্বককে আর্দ্রতাহীন অবস্থায় রাখা উচিত না। দ্রুতই ব্যবহার করুন কোন লোশন বা ক্রিম, কারণ গভীরভাবে পরিষ্কারের পর ৩০ সেকেন্ডের বেশি সময় কোন ময়শ্চারাইজার না পেলে ত্বক হয়ে উঠতে পারে আগের চেয়ে বেশি শুষ্ক। যেহেতু শীতকালে ত্বক ও চুল নিজে থেকে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম তেল তৈরি করে, তাই সাবান ও শ্যাম্পু এমন বেছে নিতে হবে যা কোমলভাবে পরিষ্কার করে ত্বকে স্বাভাবিক তেল ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে, রুক্ষ্মতাজনিক ক্ষয় প্রতিরোধ করে। সঙ্গে সতর্কতার সঙ্গে সরিয়ে ফেলতে হবে মৃত কোষগুলোও। আর ময়েশ্চারাইজার তো আবশ্যক। শুধু মুখের নয়, সারা শরীরেই শীতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার আবশ্যক হয়ে পড়ে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে, সকালে ঘুম থেকে উঠে, বাইরে কাজে যাওয়ার আগে, কাজ থেকে ফিরে হাত-মুখ ধুয়ে- এমন প্রায় সব সময়ই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের বিকল্প নেই। বিশেষ করে হাত-পা, ঠোঁট, কনুই ও হাঁটুর চামড়া এই ঋতুর প্রতি সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। তাই এদের যতœ নিতে হয় সবচেয়ে বেশি। ঠোঁটকে দেয়া আপনার একটু বাড়তি যতœ আপনাকে বাঁচাবে ফাটা ও শুষ্ক ঠোঁট থেকে। শুষ্ক ঠোঁট আর পায়ের ফাটা গোড়ালি কুয়াশার মতোই আমাদের জীবনে এই ঋতুতে শীতের এক সংযোজন। এই ফাটা ঠোঁটকে পাশ কাটিয়ে গোলাপের পাপড়ির মতো তুলতুলে কোমল ঠোঁটের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন মৃত চামড়া থেকে একে মুক্তি দেওয়া। সহজেই করতে পারেন সেই কাজটি। ঠোঁটে একটু বেশি করে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে তার ওপর সামান্য চিনি নিয়ে তুলা দিয়ে হালকা করে ঘষলেই উঠে আসবে মরা চামড়া। অথবা একই কাজ করতে পারে আপনার নরম টুথব্রাশটি। ভেজা ঠোঁটের ওপর ভেজা নরম ব্রাশটি বৃত্তাকারে ঘুরিয়ে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই কাজটি করার সময় সতর্ক থাকুন, যদি প্রথমদিন ভাল ফলাফল না পান তবে দ্বিতীয় দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। কিন্তু অবশ্যই দ্রুত ফল পাওয়ার জন্য ঠোঁটের নমনীয়তার কোন ক্ষতি করবেন না। পরের কাজটি হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ- ঠোঁটের আর্দ্রতা রক্ষা বা ময়েশ্চারাইজিং। ব্যবহার করুন পেট্রে০ালিয়াম জেলি এবং সঙ্গে ভাল কোন লিপবাম, আর এই ঋতুতে এই দুটোরই ব্যবহারের অভ্যাস বানিয়ে ফেলুন। কেননা ভ্যাসলিন বা পেট্রোলিয়াম জেলি বাইরের খারাপ আবহাওয়া থেকে ঠোঁটকে সুরক্ষা দেয়, কিন্তু আর্দ্রতার কাজটা পুরো করতে পারে না। ভাল কোন লিপবাম এই সমস্যার একটি সহজ সমাধান। এ তো গেলো ঠোঁটের কথা। কিন্তু হাত-পায়ের অবস্থাও এই সময় যথেষ্ট করুণ হয়ে ওঠে। আসুন জেনে নিই এই সমস্যা সমাধানে কিছু সহজ ও সাধারণ কথা। হাতের চামড়া শরীরের বেশিরভাগ অংশের চামড়া থেকে বেশি পাতলা হওয়ায় আবহাওয়ার প্রভাব তাতে পড়ে খুব সহজেই। ভাল কোন ময়েশ্চারাইজার বা হাতের বিশেষ ক্রিম হাতের রুক্ষ্মতা দূর করবে খুব সহজেই। সকালে ও রাতে ব্যবহার ছাড়াও মনে করে হাতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত প্রত্যেকবার হাত ধোয়া ও বাইরে যাওয়ার সময়। হাতে ময়েশ্চারাইজার দিয়ে রাতে ঘুমানোর সময় পরতে পারেন সুতির হাত মোজা। তাতে আরও ভাল ফলাফল পাবেন সহজেই। আর পায়ের কথা? পা ফাটার মতো সমস্যাগুলো এই সময়ে সবচেয়ে বেশি হয় মৃত চামড়া জমা হয়ে। তাই দরকার মৃত চামড়া অপসারণ করা ও পায়ের ত্বক কোমল রাখা। তাছাড়া ময়েশ্চারাইজার ও মোজার ব্যবহার অনেকটা হাতের মতোই। মাসে দুই বা তিনবার পেডিকিউর করা এই সময় আপনাকে পায়ের সৌন্দর্য ধরে রাখতে সাহায্য করবে। নারিকেল তেল, অলিভ ওয়েল, গ্লিসারিন- এগুলো সবই পায়ের জন্য খুবই ভাল ময়েশ্চারাইজার।
×