ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খেলাপী ঋণ ৮০ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২২ নভেম্বর ২০১৭

খেলাপী ঋণ ৮০ হাজার কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংকিং খাতের খেলাপী ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপী ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। যা বিতরণ হওয়া ঋণের ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ। গত জুন শেষে এ খাতে খেলাপী ঋণ ছিল প্রায় ৭৪ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত তিন মাসে খেলাপী ঋণ বেড়েছে ৬ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের বিশেষ সুবিধা দিতে ব্যাংকিং খাতে খেলাপী ঋণ পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠনে (নিয়মিত) বিশেষ ছাড় দেয়া হয়। ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে এ সুযোগ নেন দেশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বড় বড় শিল্প গ্রুপ। এর আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি সাপেক্ষে প্রায় ৪৯ হাজার কোটি টাকার খেলাপী ঋণ নিয়মিত করা হয়েছে। এর বাইরে বিদ্যমান নীতিমালার আওতায় ব্যাংকগুলো নিজেরা আরও ৬৪ হাজার ৮৬২ কোটি টাকার ঋণ নিয়মিত করেছে। গেল বছরজুড়েও ঋণ পুনঃতফসীল সুবিধা অব্যাহত ছিল। তারপরও এ খাতে খেলাপী না কমে উল্টো বেড়েছে। সূত্র বলছে, বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত নিয়মিত ঋণগুলো আবারও খেলাপী হতে শুরু করেছে। ফলে খেলাপী ঋণ বাড়ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবসা-বাণিজ্যকে গতিশীল করতে ব্যাংকগুলোকে ব্যাংক গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দিয়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় অধিকাংশ ব্যবসায়ীর ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ করেছে। এ সময় বেশকিছু ঋণ অবলোপনও হয়ে থাকতে পারে। এসব কারণেই খেলাপী ঋণ কমে এসেছে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, খেলাপী ঋণের সার্বিক পরিস্থিতি মোটেও সন্তোষজনক নয়। দেখা যাচ্ছে, শুধু পুনঃতফসীল ও পুনর্গঠিত ঋণই নয়, অন্য ঋণও খেলাপী হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপী ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। যা বিতরণ হওয়া ঋণের ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ। গত জুন শেষে এ খাতে খেলাপী ঋণ ছিল প্রায় ৭৪ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত তিন মাসে খেলাপী ঋণ বেড়েছে ৬ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা। গত মার্চ প্রান্তিক শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপী ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৩ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে এ খাতে খেলাপী ঋণ ছিল প্রায় ৬২ হাজার কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট ৭ লাখ ৫২ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ হয়েছিল। আর জুন শেষে এ পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৩১ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। প্রতিবেদনে দেখা যায়, মোট খেলাপী বা শ্রেণিকৃত ঋণের মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানার বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে খেলাপী ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। খেলাপী ঋণের ৩৮ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের। এ ছাড়া ৪০টি বেসরকারী ব্যাংকের খেলাপী ঋণ ৩৩ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা। বিদেশী ৯ ব্যাংকের খেলাপী ঋণ ২ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা এবং বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ৫ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টার বলছেন, ব্যাংকগুলোতে অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং সঠিক উদ্যোক্তাকে না দিয়ে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে ঋণ দেয়ার কারণে খেলাপী ঋণের পরিমাণ বেড়ে যায়। ব্যাংক ঋণে সুদের হার বেশি হওয়ায় প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন করে দেশে বিনিয়োগ হচ্ছে না। অন্যদিকে গ্যাস ও বিদ্যুত সংযোগের অভাবে শিল্পোদ্যোক্তারা ঋণ নিয়ে শিল্প স্থাপন করেও উৎপাদনে যেতে পারছেন না। আবার চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস বিদ্যুত না পাওয়ার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এসব কারণে খেলাপী ঋণ বাড়ছে। বেসরকারী ব্যাংকের দুজন জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের ফলে কয়েকজন পরিচালক মিলে বেসরকারী ব্যাংকগুলোতে যে সিন্ডিকেট তৈরি করেছে, তা আরও জোরদার হবে। ঋণ কারা পাবেন, কারা এমডি হবেন সবই ঠিক করছে এ সিন্ডিকেট। ফলে ব্যাংকগুলোতে এমডিরা কোন ভূমিকা রাখতে পারছেন না। তাদের চাপে দেয়া ঋণ খেলাপী হয়ে পড়ছে।
×