ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চাকরি তো নেই-ই, ইন্টার্নশিপের টাকাও দেয়া হয় না

মেরিন একাডেমির ৬৪ নারী ক্যাডেটের বেকার ৫৯

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ১৩ নভেম্বর ২০১৭

মেরিন একাডেমির ৬৪ নারী ক্যাডেটের বেকার ৫৯

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ নারীর ক্ষমতায়নে বর্তমান সরকার যেখানে দৃঢ় সঙ্কল্পবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে মেরিন একাডেমি থেকে সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হওয়া নারী ক্যাডেটদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হয়ে আছে। সরকার নিয়ন্ত্রিত চট্টগ্রামের মেরিন একাডেমি থেকে এ পর্যন্ত চার ব্যাচে ৬৪ নারী ক্যাডেট পাস করে বেরিয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে পাসিংআউট শেষে বের হবে আরও ছয়জন। কিন্তু দেশী-বিদেশী, সরকারী-বেসরকারী মালিকানার কোন জাহাজে এদের চাকরির সংস্থান হচ্ছে না। নারী ক্যাডেটদের মধ্যে এ পর্যন্ত মাত্র পাঁচজন একটি বেসরকারী শিপইয়ার্ডে চাকরি করছেন। কিন্তু তাদের উপযুক্ত কোন বেতন-ভাতা নেই। তাদের দাবি, এ চাকরি অনেকটা পেটেভাতে। বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, নৌ মন্ত্রণালয় নারী ক্যাডেটদের ইন্টার্নশিপ সমাপ্ত করার পর চাকরিলাভের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারছে না। দেশে সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে জাহাজ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মালিক কর্তৃপক্ষ নারী ক্যাডেটদের চাকরি প্রদানে ক্রমাগতভাবে অপারগতা প্রকাশ করে আসছে। এর ফলে বর্তমানে ৫৯ নারী ক্যাডেট বেকার জীবনে রয়েছে। উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিতে ২০১২ সাল থেকে নারীদের ক্যাডেট হিসেবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম ব্যাচে ১৬ নারী ভর্তি হয়। এ পর্যন্ত চার ব্যাচে নারী ক্যাডেটরা সাফল্যের সঙ্গে পাস করে বেরিয়েছে। পঞ্চম ব্যাচে কোন নারী ভর্তি হয়নি। ষষ্ঠ ব্যাচে সাত নারী ক্যাডেটের প্রশিক্ষণ চলছে। ইতোমধ্যে যারা পাসিংআউট করে বেরিয়েছে তারা সবাই বিএসসির বিভিন্ন জাহাজে ইন্টার্নশিপ কার্যক্রমও সমাপ্ত করেছে। কিন্তু অফিসার হিসেবে কোন জাহাজে নিয়োগপ্রাপ্তির বিষয়টি সোনার হরিণ হয়ে আছে। অভিযোগ রয়েছে, ইন্টার্নশিপেও যে এ্যালাউন্স দেয়ার বিধান রয়েছে তা মানা হয় না। চাকরি না পেয়ে বেকার জীবনে থাকা এসব নারী ক্যাডেটের পক্ষ থেকে জনকণ্ঠকে জানানো হয়েছে, নৌ মন্ত্রণালয় ও মেরিন একাডেমি কর্তৃপক্ষের অদূরদর্শিতার শিকার তারা। বর্তমানে মেরিন একাডেমি থেকে উত্তীর্ণ পুরুষ ক্যাডেটদেরও চাকরির বাজার সঙ্কুচিত হয়ে আছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী মেরিন একাডেমি থেকে পাস করে ৬৫০ পুরুষ ক্যাডেট এখনও কোন জাহাজের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারেননি। নারী ক্যাডেটদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, প্রথমে তাদের সিডিসি (কন্টিনিউয়ার্স ডিসচার্জ সার্টিফিকেট) দেয়া হয়নি। পরে সরকারী নির্দেশে ২০১৪ সালে সিডিসি প্রদান করা হয়। কিন্তু সিডিসি পাওয়ার পর সরকারী-বেসরকারী কোন জাহাজ কর্তৃপক্ষ তাদের নিয়োগ দিচ্ছে না। ইতিপূর্বে ২০১৪ সালে নৌমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে কিছু নারী ক্যাডেটকে জাহাজে নিয়োগ দান করা হয় সম্পূর্ণ বিনা বেতনে, যা এমএলসি (মেরিটাইম লেবার কনভেনশন) আইনবিরোধী। এছাড়া ২০১৫ সালে নারী ক্যাডেটদের কম্পিটেন্সি পরীক্ষার জন্যও অংশগ্রহণ করানো হয়। এ পরীক্ষায় সফলভাবে কৃতকার্য হতে মোটা অঙ্কের অর্থ প্রদান করতে হয়। কম্পিটেন্সি সার্টিফিকেট (এমইও-ক্লাস-৩) থাকা সত্ত্বেও নারী ক্যাডেটদের চাকরির বিষয়টি সুদূরপরাহত হয়ে আছে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বিএসসির (বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন) ২৫ তলা ভবন উদ্বোধনকালীন সামগ্রিক বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনা হয় এবং এ বিষয়ে তার পক্ষে আশ্বাসও প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে এখনও চরম উদাসীন। অথচ বর্তমানে আরও একটি ব্যাচে নারী ক্যাডেটরা মেরিন একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। তারা আগামী ডিসেম্বরে পাসিংআউট শেষে বেরিয়ে আসবে। পরিস্থিতি প্রতিকূলে থাকলে এতে নারী ক্যাডেটদের বেকার সংখ্যা আরও বাড়বে বৈকি। সঙ্গত কারণে দাবি উঠেছে নারী ক্যাডেটদের ইন্টার্নশিপ শেষে সরকারী-বেসরকারী জাহাজ কর্তৃপক্ষকে নারী ক্যাডেটদের চাকরি প্রদানের বিষয়টি মেধাভিত্তিতে নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে। এদিকে জাহাজ মালিকানার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নারী ক্যাডেটদের চাকরি প্রদানের বিষয়টি তারা একটি ঝামেলার কাজ মনে করছে। যেখানে পুরুষ ক্যাডেটদের আধিক্য রয়েছে সেক্ষেত্রে নারী ক্যাডেট নিয়োগ দিয়ে বাড়তি ঝামেলা হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করে থাকে। ফলে নারী ক্যাডেট নিয়োগের বিষয়ে তাদের কোন আগ্রহ নেই।
×