ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিশেষজ্ঞ পরীক্ষায় বলা হয়েছে পাকিস্তান ও অস্ট্রিয়া এগুলো তৈরি করে। মামলার যুক্তিতর্কে কৌঁসুলির দেয়া তথ্য

২১ আগস্টের ব্যবহৃত গ্রেনেডগুলো ছিল ভয়াবহ সমরাস্ত্র

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৭ নভেম্বর ২০১৭

২১ আগস্টের ব্যবহৃত গ্রেনেডগুলো ছিল ভয়াবহ সমরাস্ত্র

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্পর্শকাতর ও বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের মামলার ষষ্ঠদিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। সোমবার মামলার চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান যুক্তি উপস্থাপন করে বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট পরিচালিত হামলায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেডগুলো ছিল ভয়াবহ সমরাস্ত্র। যুদ্ধক্ষেত্রে যেসব অস্ত্র ব্যবহৃত হয় তা ২১ আগস্ট হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে, যা ইতিহাসে নজিরবিহীন। যুদ্ধক্ষেত্রে এ জাতীয় গ্রেনেড সমরাস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ গ্রেনেডগুলো পাকিস্তান ও অস্ট্রিয়ায় তৈরি হয়। ওই হামালায় শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে নয়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে ছিল। আর্জেস গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার লক্ষ্যে ওই অপরাধ সংঘটিত করেছে। মামলার রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক আজ মঙ্গলবারও উপস্থাপন করা হবে। নাজিম উদ্দিন রোডে পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত বিশেষ এজলাসে ঢাকার-১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে এ মামলার বিচার চলছে। এ মামলায় চীফ প্রসিকিউটরকে সহায়তা করেন এ্যাডভোকেট খন্দকার আবদুল মান্নান, এ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান, এ্যাডভোকেট মোঃ আকরাম উদ্দিন শ্যামল ও এ্যাডভোকেট ফারহানা রেজা। আসামিপক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট আব্দুস সোবহান তরফদার, রাফকুল ইসলাম তারা মিয়া, রশিদ মোল্লা। যুক্তিতর্কে চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এলাকায় ২১ আগস্ট নয়টি স্থানে গ্রেনেডগুলো বিস্ফোরিত হয়। পরে অবিস্ফোরিত চারটি গ্রেনেড উদ্ধার হয়, যার তিনটি জব্দ করা হয়। যুদ্ধক্ষেত্রে এ জাতীয় গ্রেনেড সমরাস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ গ্রেনেডগুলো পাকিস্তান ও অস্ট্রিয়ায় তৈরি হয়। ২১ আগস্ট হামলার পর অবিস্ফোরিত অবস্থায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউর বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার হওয়া গ্রেনেড বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরীক্ষা করানোর পর ভয়াবহ এ তথ্য পাওয়া যায়, যা মামলায় সাক্ষ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে যুক্তিতর্কে তা তুলে ধরেন সৈয়দ রেজাউর রহমান। তিনি বলেন, যুদ্ধক্ষেত্রে যেসব অস্ত্র ব্যবহৃত হয় তা ২১ আগস্ট হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে, যা ইতিহাসে নজিরবিহীন। ঢাকায় যখন ইন্টারপোল কর্মকর্তাবৃন্দ এসেছিলেন, তারা বিশ্লেষণ করে মতামত দিয়েছিলেন, এ গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়ে থাকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে। সামরিক বাহিনীতেই ব্যবহারের জন্য এ আর্জেস গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ওই ঘটনার পর সেনাবাহিনীর লোকজন গ্রেনেড ধ্বংস করেত এসেছিল, তার মধ্যে এ মামলার সাক্ষী মেজর (অব) সামসুদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী এবং মেজর আবুল মারুফ আশরাফুল কবির সাক্ষীতে বলেছেন, এগুলো আর্জেস গ্রেনেড। সেফটি পিন লাগানো ছিল, যা কিনা সংরক্ষণযোগ্য। সৈয়দ রেজাউর রহমান যুক্তিতর্কে আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ভয়াবহ, নৃশংস ও বর্বরোচিত ওই হামলা চালানো হয়। বিএনপি নেতা তারেক রহমানের তৎকালীন রাজনৈতিক কার্যালয় হাওয়া ভবনসহ আটটি স্থানে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা ঘটনোর প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা করা হয়। আলোচিত এ মামলায় ৫১১ সাক্ষীর মধ্যে ২২৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আর মামলায় ২০ জনের সাফাই সাক্ষী নেয়া হয়েছে। মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলের তিন শতাধিক নেতাকর্মী। ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে থানা পুলিশ। পরে তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরবর্তীতে মামলাটি যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি)। ২০০৮ সালের ১১ জুন সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করে। মামলা তদন্তের ভার পান সিআইডির পুলিশ সুপার আব্দুল কাহ্হার আখন্দ। তিনি ২০১১ সালের ৩ জুলাই তারেক রহমানসহ ৩০ জনের নাম যুক্ত করে মোট ৫২ জনের নামে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন। মামলায় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গী নেতা মুফতি হান্নান ও জেএমবি সদস্য শহিদুল আলম বিপুলের মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়ায় তাদের নাম বাদ দেয়ায় এখন আসামির সংখ্যা ৪৯। এর মধ্যে তারেক রহমানসহ ১৮ জন পালাতক রয়েছেন। এছাড়া জামিনে আট এবং কারাগারে রয়েছেন ২৩ জন।
×